ইরাকের নিরাপত্তা সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং " ইরাকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের" সদস্য সম্মেলন ৩ ও ৪ মে মিসরের শার্ম আল-শেইখে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা ইরাকের স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক। যাতে ইরাক ও নিকটবর্তী দেশগুলোর সহযোগিতাকে বাস্তবায়ন করা যায়। একই সঙ্গে " ইরাকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের" পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।
এবারের সম্মেলনে জাতিসংঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ , আট রাষ্ট্র গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্য দেশ-- জার্মানী, জাপান, ইতালি, ক্যানাডা , ইরাকের নিকটবর্তী দেশ, মিসর, আরব লীগ এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।
প্রথমত, এবারের সম্মেলন ইরাক সরকারের পক্ষে দেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়ক হবে। যাতে ইরাক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দীর্ঘকালীণ অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এবারের সম্মেলন হচ্ছে গত মার্চ মাসে বাগদাদে অনুষ্ঠিত ইরাক সমস্যা সংক্রান্ত রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পর, মাত্র দু'মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ইরাক সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন । তবে এবারের সম্মেলনে বেড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সংখ্যাও। এ থেকে বোঝা যায় যে, ইরাক সরকার দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সাহায্য পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে দেখা যায় যে, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরাক সমস্যার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সম্মেলনে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যথাযথভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শান্তি রক্ষী বাহিনী পাঠানোর বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পাবে। এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইরাক সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে এমন সব বড় দেশ ও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে । অংশগ্রহণকারীরা মনে করে, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাহায্য দেয়া । এর ফলে কার্যকরভাবে একটি নতুন পর্যায়ের রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
তৃতীয়ত, সম্মেলনে ইরাক সরকার ও নিকটবর্তী আর দেশগুলোর সহযোগিতা জোরদার করা হবে। অংশগ্রহণকারী আরব দেশগুলোও ইরাক সমস্যার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছে এবং ইরাকের নিকটবর্তী দেশগুলোকে ইরাক সমস্যার সমাধানে যথাযথ ভূমিকা পালন করার আশা প্রকাশ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশ এবং উন্নত দেশগুলোকে ইরাকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, মিসর, সিরিয়া এবং ইরানসহ মধ্য-প্রাচ্যঅঞ্চলের সংশ্লিষ্ট বড় দেশগুলো ইরাক সমস্যায় বেশি ভূমিকা পালন করতে চায়। আরেকটি বিষয়ে দেখা যায় যে, এসব উপসাগরীয় দেশগুলো এ অঞ্চলের অবনতিশীল অবস্থার কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করছে।
চতুর্থত, সম্মেলনে ইরাক পুনর্গঠনের লক্ষে " ইরাকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের" পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত জুন মাসে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় জাতিসংঘ এবং ইরাক সরকার মিলিতভাবে " ইরাকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের" খসড়া প্রস্তাব দাখিল করেছিল। এ প্রস্তাবে ইরাকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক , সামাজিক এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কাঠামোমূলক বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এর প্রধান প্রতিপাদ্য হলো ইরাকের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। যাতে দেশের সামাজিক গণ-সম্পদকে ভালভাবে কাজে লাগানো যায়। একই সঙ্গে এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইরাকের পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, আর্থিক সাহায্য এবং ঋণ কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাছাড়া, " ইরাকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের" সদস্য দেশগুলোও সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি মেনে চলার কথাও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, আগামী পাঁচ বছরে, ইরাকের উন্নয়ন সংক্রান্ত সংস্কারের পরিকল্পনায় তাদের আর্থিক সাহায্য দিতে হবে।
চলতি বছর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাক সরকার বাগদাদে " আইন ও শৃঙ্খলা" নামক নিরাপত্তা পরিকল্পনা চালু করেছে। তবে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে অবনতিশীল বলে স্থানীয় ক্ষেত্রে সশস্ত্র হামলা ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশলেষকগণ বলেছেন, চরমপন্থী সংস্থার তত্পরতা বেড়ে যাওয়া , ইরাকের বিভিন্ন ধর্মীয় ক্ষেত্রের সংঘর্ষ এবং ইরাকে বিদেশী বাহিনীর মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয়টি হচ্ছে বর্তমানে ইরাকের একটি জটিল পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
|