১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ এশীয়ার ৭টি দেশ ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা সে সময় থেকে জোটভূক্ত হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশী লোকসংখ্যা ও তুলনামূলকভাবে দারিদ্র্য অঞ্চলগুলো এক সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নেয়।
২০০৭-এর ১৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে 'ঢাকা ঘোষণা' গৃহীত হয়। সম্মেলনে আফগানিস্তানকে নতুন সদস্য করা হয়েছে এবং চীন ও জাপানকে সার্কের পর্যবেক্ষক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সার্কের সদস্য দেশ ৭টি থেকে ৮টি হয়েছে।
এর পর, সার্কের সদস্যদেশের ১২তম বিশেষজ্ঞ কমিটি সংক্রন্ত সম্মেলন ১ ডিসেম্বর কাঠমুন্ডুতে শেষ হয়। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা দক্ষিণ এশিয়ায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সংক্রান্ত আলোচনার প্রধান সমস্যার ওপর একমত হয়েছে যে, দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল চুক্তি ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারী মাস থেকে কার্যকর হবে।
২০০৪ সালের ২ জানুয়ারী, সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল চুক্তির বিষয় নিয়েও একমত হয়েছেন। ৮ ফেব্রুয়ারী, সার্কের সদস্যদেশের বিশেষজ্ঞ কমিটি চুড়ান্তভাবে দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের কাঠামো চুক্তি চুড়ান্ত করেছে।
এ দিকে সার্কের সদস্যদেশগুলো স্বীকার করেছে যে, গত ২০ বছর, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্ষেত্রে সার্কের অগ্রগতি এশিয়ার অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থার চেয়ে অনেকটা পশ্চাত্পদ রয়েছে। সার্কের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বের উন্নয়নের ধারায় ফিরে আনা।
বর্তমানে দারিদ্র্য ও স্বল্পউন্নত অবস্থা সার্কের সম্মুখীন সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ। দক্ষিণ এশিয়ায় যদিও ভারত ও পাকিস্তান এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ, এর পাশা পাশি ভারত হচ্ছে বিশ্বের বিপুল অর্থনৈতিক সুপ্ত শক্তির দেশ। তবুও দুটো দেশের অর্থনৈতিক শক্তি সারা অঞ্চলের উন্নয়নকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। ৭টি সদস্যদেশের মধ্যে, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা ছাড়া, অন্য ৫টি দেশের মাথাপিছু জি ডি পি ৫শ' মার্কিন ডলারের চেয়ে কম এবং সব দরিদ্র দেশের অন্তর্ভূক্ত।
তবে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় বহু সুপ্ত শক্তি রয়েছে। প্রথমত, দক্ষিণ এশিয়ার মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সবার অভিন্ন ইচ্ছা। বিভিন্ন সদস্যদেশ চেষ্টা করে এটা ত্বরান্বিত করবে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সমৃদ্ধ শ্রমিক সম্পদ রয়েছে। কম পরিশ্রমিকের শ্রমিক দিয়ে বিদেশী অর্থ আকর্ষণ করা যায়। তৃতীয়ত, যদিও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে পশ্চাত্পদ। তবুও সুবিধা পরস্পরের পরিপুরক সুপ্ত শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
সার্ক প্রতিষ্ঠার সময় গৃহীত 'দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা' ঘোষণায় বলা হয়, এই আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার মৌলিক লক্ষ্য হচ্ছে 'কার্যকর দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর সম্পদ ও জনশক্তির মাধ্যমে নিজেদের দেশের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করবে। যাতে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধ ত্বরান্বিত এবং তাদের জীবনের মান উন্নত করা যায়।
|