খুনমিং শহর আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের কাছেই খুব পরিচিত । কারণ ঢাকা শহর এবং খুনমিং শহর হচ্ছে মৈত্রী শহর ।পশ্চিম বঙ্গের বন্ধুরাও এখন খুনমিং আসছেন বেড়াতে । খুনমিং শহরের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের । ৩০ হাজার বছর আগে এখানে মানবজাতি বসবাস করতো । ইতিহাস পরিক্রমায় প্রাচীন প্রস্তর যুগের উন্নয়নের পাশাপাশি খুনমিং শহরে অনেক পুরাকীর্তি গড়ে উঠেছে । যা কিনা শাশ্বত । এর মধ্যে স্বর্ণ ঘোড়া ও সবুজ মুরগী শ্লোকতোরণ হচ্ছে অন্যতম ।
স্বর্ণ ঘোড়া ও সবুজ মুরগী শ্লোকতোরণ খুনমিং শহরের সানশি রাজপথ এবং চিনবি রাজপথের সংযুক্ত এলাকায় অবস্থিত ।এর উচ্চতা ১২ মিটার এবং দৈর্ঘ ১৮ মিটার । ঐতিহাসিক বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, বহু বছর আগে সুন্দর তিয়ানছি হ্রদের পাশে একটি চকচকে স্বর্ণ ঘোড়া ছিল । সাধারণ ঘোড়ার সঙ্গে তার মিলনের ফলে সুন্দর ছোট্ট তিয়ানছি ঘোড়া জন্মগ্রহণ করে । এ ধরনের ঘোড়া প্রতিদিন ২৫০ কিলোমিটার পথ চলতে পারত ।প্রবাদ আছে যে, এ ধরনের ঘোড়া খুনমিং শহরের পূর্বে বনের মধ্যে থাকত । যখন সে বাইরে যায় , তখন তার পাশে স্বর্ণের আলো দেখতে পাওয়া যেত । একই সময় খুনমিং শহরের পশ্চিম পাহাড়ে একটি সবুজ রঙয়ের সুন্দর ফিলিক্স ছিল । তার কন্ঠের গান মিষ্টি এবং পালক খুবই সুন্দর ছিল । লোকেরা তাকে সবুজ মুরগী বলে ডাকত । লোকেরা মনে করত তারা হচ্ছে দেবতা পশুপাখি । তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্বর্ণ ঘোড়া মন্দির এবং সবুজ মুরগী মন্দির নির্মাণ করা হয় । তারপর লোকেরা খুনমিং শহরেই স্বর্ণ ঘোড়া ও সবুজ মুরগী শ্লোকতোরণ নির্মাণ করেছে ।
মিং রাজবংশের একজন রাজার রাজত্বকালীন সময যাকে বলা হয় সুয়ানতে । এ সময় দুটি শ্লোকতোরণ নির্মিত হয় । এ পর্যন্ত এর প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে । এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশেষ সময়পর্বে স্বর্ণ ও সবুজ রঙ মিশিয়ে তৈরী এক অপরূপ দৃশ্য । এ সম্পর্কে খুনমিং জাদুঘরের একজন বিশেষজ্ঞ তিং সিউয়ে রেন বলেছেন, স্বর্ণ এবং সবুজ রঙ মেশানোর অর্থ হল সুর্যের আলো আকাশ থেকে পড়ার সময় , সবুজ মুরগী শ্লোকতোরণের ছায়া পূর্ব দিকের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে । চাঁদ পূর্ব দিক থেকে উঠার পর, চাঁদের আলো স্বর্ণ ঘোড়ার শ্লোকতোরণের ওপর তার আলোর চাদর বিছিয়ে দেয় ।তখন স্বর্ণ ঘোড়ার ছায়া পশ্চিম দিকের মাটিতে দেখতে পাওয়া যায় । সুর্যের আলো এবং চাঁদের আলো একই উচ্চতায় থাকার সময় , দুটি শ্লোকতোরণের ছায়ার উপরাংশ একসাথে মিশে থাকে । তখন স্বর্ণ ও সবুজ রঙয়ের আলো একসাথে থাকে ।
জানা গেছে, পৃথিবী, চাঁদ এবং সুর্যের আবর্তিত হওয়ায় প্রতি ৬০ বছর অন্তর এ ধরনের আশ্চর্য্য দৃশ্য একবারই দেখতে পারা যায় । এ ধরনের আশ্চর্য্য ডিজাইনে গণিত, জ্যোতিষ এবং স্থাপত্যবিদ্যার ক্ষেত্রে মাধ্যমে প্রাচীনকালের ইউয়ুন্নান প্রদেশের বিভিন্ন জাতির লোকদের বিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়েছে । ১৯৪০ সালের মূনকেক উত্সবের সময় তিং সিউয়ে রেন নিজের চোখে এ দৃশ্য দেখেছিলেন । তিনি বলেছেন, তখন আমি প্রাথমিক স্কুলের একজন ছাত্র ছিলাম । শুনেছি সন্ধ্যায় এ আশ্চর্য্য দৃশ দেখতে পাবো। আমি ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম । তখন অনেক লোক শ্লোকতোরণের কাছাকাছি ভীড় করে আছে । বয়স কম হওয়ায় আমি জানি না কোথায় গিয়ে কিভাবে দেখা উচিত । শুনেছি অনেক লোক বলেছে,"আসছে, আসছে !" আমি দেখেছি মাটিতে স্বর্ণ ঘোড়া এবং সবুজ মুরগীর ছায়া মিশে গেছে, কিন্তু তা শুধু মাত্র কয়েক সেকেন্ড ।
স্বর্ণ ঘোড়াও সবুজ মুরগী শ্লোকতোরণ প্রতিষ্ঠার পর ৫৬০ বছরের মধ্যে তিনবার এটা ধ্বংস হয়েছে । খুনমিং শহরের অধিবাসীদের অনুরোধে ১৯৯৭ সালে খুনমিং পৌর সরকার পুনরায় তা পুননির্মাণ করেছে। এর পাশাপাশি স্বর্ণ ঘোড়া ও সবুজ মুরগী চত্বরও নির্মাণ করা হয় । ১৯৯৯ সালে তা আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটন স্থান হিসেবে পর্যকদের জন্য খোলা হয় । এরপর প্রতি বছরের মূনকেক উত্সবে শ্লোকতোরণের আশ্চর্য্য দৃশ্য দেখার জন্যে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা পর্যকদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে । শানতুং প্রদেশের পর্যটক লি ই ছিউ বলেছেন, মূনকেক উত্সবে চাঁদ ও সুর্যের আলো সঠিকভাবে একই সমস্থলে মিশে যায় । আমরা শানতুং প্রদেশ থেকে এসেছি, এ দৃশ্য দেখার পর খুবই আনন্দিত, এ দৃশ্য খুবই সুন্দর ।
বর্তমানে স্বর্ণ ঘোড়া ও সবুজ মুরগী শ্লোকতোরণ চত্বরের কাছাকাছি অনেক দোকান রয়েছে । বিভিন্ন ধরনের চা দোকান, রেস্টুরেন্ট ,অলংকার দোকান রয়েছে । উল্লেখ্য যে, পর্যটন স্থান দেখার পাশাপাশি আপনারা অবশ্যই খুনমিং শহরের স্ন্যাকস খাবেন , খুব সুস্বাদু । এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হল কুওছিয়াও নুডলস এবং ছোট পোট মুরগী । খুনমিং শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সুস্বাদু খাবার কুওছিয়াও নুডলসের দাম শুধ ৫ ইউয়ান ।
|