ইউয়ুন্নান প্রদেশের তালি জেলার ১০০০ বছরের বেশি পুরানো ইতিহাসের ছোংশেং মন্দিরে নিয়ে যাবো । সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ছোংশেং মন্দিরকে পুনরায় মেরামত করেছে এবং মন্দিরের বৌদ্ধ ধর্মের মূর্তির বিশেষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । আমাদের সংবাদদাতা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ।
ভোর ৬ টায় সুর্যের আলো মাত্র মাটি ফুড়ে যেন বেড়িয়েছে । ঠিক এ সময় শুরু হয় অনুষ্ঠানটি । চীনের মূলভুভাগ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১০৮ জন বিশিষ্ট বৌদ্ধপণ্ডিত সম্মিলিতভাবে এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন । সংবাদদাতা ছোংশেং মন্দিরে পৌঁছার পর সিঁড়ি দিয়ে উঠে মন্দিরের বিভিন্ন দেবতার প্রাসাদগুলো দেখে । মন্দিরের পুরো পথ লাল গালিচা দিয়ে সাজানো , পথের দু'পাশে অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দাঁড়িয়েছিল । তারা বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্যিক কাপড় অথবা সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাপড় পরে , হাতে কাঠের তৈরী ছাঁচ এবং ঘন্টা ধবেন । তালির একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাং ফু রু অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করার সময় আনন্দচিত্তে বলেছেন, আমি জানি আজকে এখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে । ভোর ৬টার আগেই আমি জেগে উঠেছি এবং তালির সিয়াকুয়ান থেকে এখানে এসে সরাসরিভাবে ছোংশেং মন্দিরে পৌঁছেছি । এ অনুষ্ঠানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে ।
ছোংশেং মন্দিরের আরেকটি নাম হল তিন প্যাগোডা মন্দির । এর পিছনে হচ্ছে সাদা বরফে ঢাকা ছাংশান পাহাড়, এর সামনে সবুজ ও পরিস্কার আরহাই হ্রদ রয়েছে । ইতিহাসে অনেকবার ভুমিকম্প এবং যুদ্ধের কারণে মন্দিরে এখন শুধু তিনটি প্যাগোডা রয়েছে । পুননির্মাণের পর মন্দিরের স্থাপত্য বৈশিষ্টের পাশাপাশি এর সংগ্রহ করা চীনের বৌদ্ধ ধর্মীয় মন্দিরের বৃহত্তম ঢাল এবং ২ মিটার উঁচু ১১৭ মিটার দীর্ঘ কাঠ খোদাই বইসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক জিনিসও সংরক্ষণ করা হয়েছে । খুনমিং শহর থেকে আসা ওয়াং হাই এবং তাঁর স্ত্রী এবারের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য ছোংশেং মন্দিরে এসেছেন । পুননির্মাণের পর ছোংশেং মন্দির দেখে তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেছেন, এ মন্দির দেখতে রাজপ্রাসাদের মন্দিরের মতো। আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি । মন্দিরটি আমি খুব পছন্দ করি । তা দেখতে চীনের শীর্ষ পর্যায়ের মন্দিরের মত । কারণ, আমরা আনেক প্রদেশের মন্দির দেখেছি, অন্যান্য মন্দিরের চেয়ে এ মন্দিরের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক ভালো । আমি মনে করি এবারের পর্যটন এখানে আসা আমার সার্থক হয়েছে ।
ইতিহাসে ছোংশেং মন্দির হল চীনের দক্ষিণাঞ্চল তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মের একটি কেন্দ্রী । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তাকে "বৌদ্ধ ধর্মের রাজধানী" বলে ডাকেন । ক. অনুষ্ঠানে অনেক দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন । খ. অনুষ্ঠানে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিংগাপুর, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড ,মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস এবং ক্যাম্বোডিয়া থেকে আসা ১০৮ জন বিশিষ্ট বৌদ্ধপণ্ডিত বৌদ্ধ ধর্মীয় বই পাঠ করেন এবং মন্দিরের বৌদ্ধ দেবতার মূর্তির উদ্বোধন করেন ।
৬৫ বছর বয়স্ক লি ইং হলেন একজন বিশ্বস্তবৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ছোংশেং মন্দিরের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য তিনি দুদিন আগে বিমান যোগে তালিতে পৌঁছেছেন । তিনি আন্তরিকভাবে বলেছেন, এবারের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে তাঁর মনে খুব খুশি লাগছে । বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এতবেশি বৌদ্ধ পণ্ডিতের এবং চীনের বৌদ্ধ ধর্ম সমিতির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমার মন খুব উত্ফুন্ন । তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলতে পেরে আমি ধন্য হয়েছি । এ মর্যাদাসম্পন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়াকে আমি পছন্দ করি । বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটক ও ভিক্ষুরা একের পর একভাবে মন্দিরে প্রবেশ করেন । তাঁরা নানা দেশের ভাষায় কথাকর্তা বলেন । আমাদের সংবাদদাতা সাইপ্রাসের একজন পর্যটক মাইক জ্যাকসনের সঙ্গে কথা বলেছেন । এ মন্দির দেখার পর তার মন্তব্যে তিনি বলেছেন, আমি মনে করি এ মন্দির খুবই সুন্দর, আমার আশ্চর্য্য লাগছে যে এটা খুবই বড় । এটি হচ্ছে আমার প্রথমবার তালি সফর । এর আগে আমি ৫ বার চীনে ভ্রমণ করেছি । আমার স্ত্রী আমাকে এ মন্দিরটি পরিচয় করিয়ে দিয়েছে । আমার স্ত্রী একজন চীনা । এ মন্দিরে থাকা খুবই আরামদায়ক ।
জ্যাকসন এবং তাঁর স্ত্রী, ৬ বছরের ছেলে একসাথে তালিতে বেড়াতে এসেছেন । ছোংশেং মন্দির পৌঁছার পর তাঁরা এখানকার অনুষ্ঠানে দেখেছেন । তিনি মনে করেন, ছোংশেং মন্দিরের পুননির্মাণ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য চীন সরকারের গ্রহণ করা একটি মংগলজনক কার্যক্রম । তিনি বিশ্বাস করেন, অনুষ্ঠানের পর ছোংশেং মন্দিরের ভবিষ্যত আরো সুউজ্জ্বল হবে ।
|