v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-02 21:07:24    
ফটোগ্রাফার হোয়াং ছেং তের কাহিনী

cri

    হোয়াং ছেং তে হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশের কুই ইয়াং ডেইলীর একজন ফটোগ্রাফার। গত দশ বারো বছর ধরে তিনি বহুবার পশ্চিম চীনে গিয়ে কলম ও ক্যামেরা দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনাশ করার তত্পরতার কিছু রেকর্ড করেছেন এবং জনসাধারণের প্রতি পরিবেশ সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানিয়েছেন । কয়েক দিন আগে তিনি আবারো পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে তাঁর অভিযাত্রা শুরু করেছেন ।

    হোয়াং ছেং তের বয়স ৫৩ বছর । তবে দেখতে তাকে খুব তরুণ লাগে । তার মধ্যম গড়ন । একটু চিকন । তার মাথার চুল অত্যন্ত কালো । তার চেহারায় দক্ষতার ছাপ রয়েছে ।

    হোয়াং ছেং তে ২৫ বছর ধরে কুই ইয়াং ডেইলীতে কাজ করছেন । তিনি একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফার । গত শতাব্দির আশি ও নব্বইয়ের দশকে পশ্চিম চীনের কোনো কোনো স্থানে অর্থনীতি উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার সমস্যা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । বিস্তারিতভাবে এ সম্পর্কে জানার জন্যে তিনি পশ্চিম চীনে অকুস্থলে পর্যবেক্ষণ করার শপথ নেন , যাতে সমাজের বিভিন্ন মহল এ সমস্যার উপর আরো বেশি নজর দেয় । তিনি বলেছেন ,

    পশ্চিম চীনের অর্থনীতির বিরাট উন্নতি হবে কি না , তা প্রাকৃতিক পরিবেশের সমস্যা সমাধানের উপর নির্ভর করে । একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার সামাজিক দায়িত্ব থাকতে হবে । আমার শ্লোগান খুবই সংক্ষিপ্ত । তা হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর জন্যে প্রচেষ্টা চালানো । আমি আশা করি , সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমার শক্তি নিয়োগ করতে চাই ।

    ১৯৯৭ সালে হোয়াং ছেং তে তার ক্যামেরা ও অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগে নিয়ে মোটর-সাইকেলে করে পশ্চিম চীনে তার প্রথম অভিযাত্রা শুরু করেন ।

    পশ্চিম চীনের লোকসংখ্যা সারা চীনের লোকসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ এবং আয়তন চীনের মোট আয়তনের ৭০ শতাংশ । প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক কারণে পূর্ব চীনের তুলনায় পশ্চিম চীনের অর্থনীতি পিছিয়ে রয়েছে ।

    হোয়াং ছেং তের জন্যে অভিযাত্রার পথে ক্লান্তি ও নিসংগতা কিছুই ছিল না । তার সামনে দেখা দেয়া কিছু দৃশ্য তাকে সবচেয়ে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে । পথে তিনি দেখতে পেয়েছেন , ঘন ঘন জংগল এখন খালি জায়গায় পরিণত হয়েছে । অনেক নদী শুকিয়ে গেছে । পশু পালকদের যুগ যুগ ধরে থাকার বাসভূমি এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে ।

    হোয়াং ছেং তে তার হাতের ক্যামেরা ও কলম দিয়ে এসব দৃশ্য লিপিবদ্ধ করেছেন । স্থানীয় অধিবাসীদের অস্তিত্ব থাকার অবস্থা খারাপ হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে কোনো কোনো স্থানের লোকদের কোনো সচেতনতা নেই । এজন্যে তিনি খুব দু:খ পান। তিনি বলেছেন ,

    কোনো কোনো লোক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না । আপনি যদি বলেন , এ জায়গার পরিবেশ গুরুতরভাবে দুষিত হয়েছে , তাহলে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তারা তা বুঝবেন না । তারা বলবেন , এখানকার অর্থনীত উন্নয়নের জন্যে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছি । এর জন্যে কেন আমাদের উপর দোষ দেয়া হচ্ছে ? জনসাধারণও তা বুঝেন না । তারা বলেন , খাওয়া-দাওয়ার জন্যেই আমরা গাছ কেটেছি । গাছ না কাটলে আমরা বাঁচবো কি করে ? সুতরাং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে প্রচার করার পথে নানা ধরণের বাধা-বিপত্তি আসে । আমার ধৈর্যের সংগে ব্যাখ্যা করতে হবে ।

    পরে হোয়াং ছেং তে আবার ৫বার একাই পশ্চিম চীনে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণের কাজ করেছেন । তিনি পশ্চিম চীনের শেন সি ও কান সু প্রদেশ ও সিনচিয়াং ওইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলসহ ১২টি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পদার্পণ করেন এবং মোট ২ লাখেরও বেশি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন ।

    প্রতিবার পশ্চিম চীনে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করার সময় তিনি যেমন তার প্রতিবেদন ও ফটো কুই ইয়াং ডেইলীর কাছে পাঠান ,তেমনি দেশের বিভিন্ন স্থানের সংবাদপত্রের কাছে প্রবন্ধ পাঠিয়ে পশ্চিম চীনের পরিবেশ সংরক্ষণের আহবান জানান । পরবর্তীকালে চীনের কোনো কোনো বেতার ও টিভি সংস্থাও পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্যে তাকে আমন্ত্রণ জানায় । পরে তিনি একটি জীপ কিনে বাইরে যাওয়ার সময় ক্যামেরা , ভিডিও ক্যামেরা ও কম্পিউটার সংগে নিয়ে যান ।

    হোয়াং ছেং তের প্রতিবেদনের মাধ্যমে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক লোকেরা পশ্চিম চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । সমাজেও ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে । চীন সরকারও তার মতামতের উপরও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ।

    হোয়াং ছেং তের প্রচেষ্টা বিফল হয় নি । পশ্চিম চীনে পর্যবেক্ষণের সময় তিনি দেখতে পেয়েছেন , পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে বিভিন্ন স্থানের সচেতনতা উন্নত হচ্ছে । পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সরকারী বরাদ্দও বেড়েই চলেছে । দশ বছরের তুলনায় পশ্চিম চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    এখন বিভিন্ন স্থানের পরিবেশের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে । ব্যাপক আকারে গাছ কাটার দৃশ্য আর দেখা যায় না । পাহাড়ে গাছ লাগানোর কাজ জোরদারের জন্যে চীন সরকার অনেক ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়েছে । সুতরাং পশ্চিম চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধাপে ধাপে উন্নত হচ্ছে ।

    হোয়াং ছেং তের তত্পরতা তার দেশের বাড়ির জনসাধারণের স্বীকৃতিও পেয়েছে । কুই ইয়াং ডেইলীর প্রধান সম্পাদক সুন ফোং ছি তার উচ্চ মূল্যায়ণ করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    তিনি একজন সত্ ও সাহসী ব্যক্তি । তার অনেক সৃজনশীল ধারণা রয়েছে । তার আচরণে একজন সাংবাদিকের সামাজিক দায়িত্ববোধ প্রতিফলিত হয়েছে ।

    হোয়াং ছেং তের রয়েছে একটি সুখী পরিবার । সিনচিয়াং অঞ্চলে পর্যবেক্ষণের সময় তার স্ত্রী ওয়াং চিংয়ের সংগে তার পরিচয় হয় । তাদের আড়াই বছরের একটি ছেলে আছে ।

    তার স্ত্রী ওয়াং চিং স্বামীর তত্পরতা সমর্থন করেন । নিজের প্রেমিককে বিয়ে করার জন্যে তিনি সিনচিয়াংয়ের একটি ভালো চাকরী ছেড়ে স্বামীর সংগে কুই চৌ প্রদেশে আসেন । তিনি বলেছেন ,

    এখন আমার প্রধান কাজ হচ্ছে আমার ছেলেকে ও নিজেকে ভালো করে দেখাশোনা করা । আমার স্বামীর যাতে কোনো অসুবিধা না হয় , সেজন্যে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করছি । এভাবে তিনি নিশ্চিন্তে তার প্রিয় কাজ চালাতে পারেন ।