ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ মে ঘোষণা করেছে যে, ইরাকের মোজাহেদিন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আবু আইয়ুব আল-মাস্রি এদিন উত্তর বাগদাদের টাজি জেলায় গুলিতে নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, গত বছর থেকে ইরাকের মোজাহেদিন সংস্থার নেতা আবু মুসাব আল-জার্কাওয়ি গুলিতে নিহত হবার পর এই সংস্থার ওপর এটি আরেকটি আধাত। যার ফলে এই সংস্থার শক্তি কিছুটা হ্রাস পাবে। তবে বেশি ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, এ কারণে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তিত হবে না।
আল-মাস্রি একজন মিসরীয়, তিনি ইরাকের যুদ্ধ শুরু হবার পর জার্কাওয়ির সঙ্গে ইরাকে এসেছেন এবং জার্কাওয়ির গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যকারীতে পরিণত হন। গত ৭ জুন ইরাকের মোজাহেদিন সংস্থার নেতা আবু মুসাব আল-জার্কাওয়ি মার্কিন বাহিনীর হামলায় নিহত হয়। তারপর এই সংস্থা আবু হামজা আল-মুহাজির নামক একজনকে নতুন নেতা হিসেব ঘোষণা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান মনে করে, আল-মাস্রি হচ্ছেন এই নতুন নেতা মুহাজির। ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী মাস্রিকে আটকের জন্য ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন।
প্রথমতঃ মাস্রির মৃত্যুর খবর ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থল বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার আল-কারিম খালাফ ১ মে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এদিন সশস্ত্র ব্যক্তিদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে মাস্রি নিহত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে তিনি নিহত হয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী এবং ইরাকের নিরপত্তা বাহিনী এই সংঘর্ষে যোগ দেয় নি।
তবু ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী মাস্রির মৃত্যুর কথা এখনো স্বীকার করে নি। মার্কিন বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন বাহিনী মাস্রির মারা গেছেন বলে আশা প্রকাশ করেছে, তবে এই খবর সঠিন কি না তা এখনো জানা জায় নি।
গত বছরের অক্টোবর এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে মাস্রির নিহত হওয়ার খবর জানার পর ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী ও ইরাক সরকার উভয়েই ঘোষণা করেছিল, যে মাস্রি এখনো জীবিত রয়েছে। তাই এবার খবর সঠিক কি না তা এখনো জায় নি।
বিশ্লেষকগণ বলেছেন, মাস্রির অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদিও তিনি মারা গেছেন, তবুও ইরাকের আরো অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
প্রথমতঃ আল-জার্কাওয়ির মতো মাস্রি মারা যাওয়ার পরও ইরাকের মোজাহেদিন সংস্থার অবলুপ্তির সম্ভাবনা নেই। এই সংস্থা নতুন কোন নেতা নিয়োগ করবে। গত জুন মাসে আল-জার্কাওয়ি মারা যাবার পর ইরাকের মোজাহেদিন সংস্থা মাস্রিকে নতুন নেতা হিসেবে নিয়োগ করে। তিনি ইরাকের বিভিন্ন হামলার দায়িত্ব পালন করেছেন। ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে পরিবর্তিত হয় নি, বরং তা আরো অবনতির দিকে রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ বর্তমানে ইরাকের মোজাহেদিন সংস্থাসহ বিভিন্ন চরমপন্থী সংস্থার কার্যক্রম ধাপে ধাপে বাড়ছে। ইরাকের বিভিন্ন ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষও অব্যাহত রয়েছে। এটি হচ্ছে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সুতরাং চরমপন্থী সংস্থার কার্যক্রম কম বা বন্ধ হয়েছে এবং ইরাকের বিভিন্ন ধর্মীয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ শেষ হয়েছে এ কথা বলা যাবে না।
উল্লেখ্য, ইরাকে মোতায়েন বিদেশী বাহিনী হচ্ছে ইরাকের বিশৃংখল পরিস্থিতির প্রধান কারণ। বিদেশী বাহিনী ইরাকে আরো বেশী মোতায়েন করলেও ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সুস্পষ্ট কোন পরিবর্তন হবে না।
তাই মাস্রির অবস্থা ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলবে না। ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো হতাশায় নিমজ্জিত।
|