v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-01 20:34:19    
তিব্বতী জাতির তরুণ ও পাই জাতির তরুণীর বিয়ের  অনুষ্ঠান

cri
    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের দিছিং তিব্বতী জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে তিব্বতী , পাই ও লিসুসহ বিশটিরও বেশি সংখ্যালঘু জাতি বাস করে । মনোরম চিনশাচিয়াং নদী এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে দূরদূরান্তে বয়ে গেছে । আজ এই অনুষ্ঠানে চিনশাচিয়াং নদীর তীরে বসবাসকারী তিব্বতী তরুণ ও পাই জাতির তরুণীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যবাহী সংগীতের তালে তালে ভোরবেলায় তিব্বতী তরুণ ছালাম এঞ্জুরের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কাজ পুরোদমে চলছিল । বাড়ির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে , রঙবেরঙের পতাকা বাতাসে পত পত করে উড়ছে । সারা বাড়ি জুড়ে আনন্দপূর্ণ পরিবেশে ভরপুর । ছালাম এঞ্জুরের বাড়ির বৈঠকখানায় ধানের শীষ , ভুট্টা , আপেল ও আখরোট ইত্যাদি রাশিকৃত অবস্থায় রয়েছে । এতে এ বছর ছেলের বাসায় আরেকবার প্রাচুর্যময় ফলন লাভের প্রকাশ পেয়েছে । বিয়ের অভিনন্দন জানাবার জন্য গ্রামবাসীরা ছেলের বাসায় আসলেন । সবাই তিব্বতী ভাষায় ছেলের প্রতি সুখী জীবনের শুভেচ্ছা জানালেন । ছেলের বাবা মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন । তারা ধন্যবাদ জানাবার জন্য দূর থেকে আসা অতিথিদের শুভেচ্ছামূলক এক ধরনের রেশমী ওড়না উপহার দিলেন । বিয়ের অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি কাজ সাহায্য করার জন্য গ্রামের নারীরাও ছেলের বাড়িতে আসলেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতিথিদের চা খাওয়াচ্ছেন , কেউ কেউ বাচ্চাদের মিষ্টদ্রব্য ও জলখাবার বিলি করছেন এবং কেউ বা তিব্বতী জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জলখাবার তৈরী করছেন । ছেলের বাড়ি আনন্দে ভরা ।

    ছালাম এঞ্জুর ও তার পরিবারের সদস্যরা দিছিং তিব্বতী জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তেছিং জেলার বেন চি লেন থানায় বাস করেন । প্রাচীনকাল থেকে এই থানা ইয়ুননান থেকে তিব্বতে যাওয়ার একটি সংযোগস্থল । এই থানায় তিব্বতী জাতি ছাড়া পাই জাতি ও নাসি জাতিসহ আরো কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীরাও থাকেন । ভোর বেলায় নিজেকে আরো সৌন্দর্যময় করে তোলার জন্য বধূ থানার বিউটি স্যালুনে গেলেন । তিনি পাই জাতির ঐতিহ্যিক বিয়ের পোষাক পরলেন ।

    সকাল ন'টায় বধূকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আত্মীয় স্বজন সমভিব্যাহারে বর বধূর বাসায় আসলেন । বধূকে বিদায় সংবর্ধনা জানাবার জন্য বধূপক্ষের আত্মীয় স্বজনরা গান গাইছেন । সবাই উত্ফুল্লচিত্তে বরপক্ষের বাসায় যাচ্ছেন ।

    বরের বাড়িতে নতুন দম্পতি উভয় পক্ষের বাবা মাকে হাদা নামে শুভেচ্ছামূলক এক ধরনের শাদা রেশমী ওড়না উপহার দিলেন । তার পর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয় । বর ছালাম এঞ্জুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের প্রতি ধন্যবাদ জানালেন ।

    বর ছালাম এঞ্জুরের মা আলিয়ানের বয়স ৬৩ । থানার একজন বিশ্রুত গায়িকা হিসেবে তিনি জাপান সফরে গিয়েছিলেন । ছেলের বিয়ের দিন উপলক্ষে মা আনন্দের সঙ্গে একটি গান গাইলেন ।

    গানে বলা হয়েছে , আত্মীয় স্বজন বহু দূর থেকে এসেছেন । সুখী পথ তাদের জন্য সুচনা হয়েছে ।

    বৃদ্ধা আলিয়ানের তিব্বতী গান শেষে বধুপক্ষের আত্মীয় স্বজনরা পাই জাতির ভাষায় গান গাইতে লাগলেন । সংগীতের তালে তালে তিব্বতী জাতির তরুণ ছালাম এঞ্জুর ও পাই জাতির তরুণী চাং হোং ইয়ানের বিয়ের অনুষ্ঠানে উত্সাহব্যঞ্জক পরিবেশ বিরাজ করছিল । আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবী মিলে নতুন দম্পতিকে হাদা উপহার দিলেন , মদ খাওয়ালেন । তারা তাদের সন্তান-সন্ততিসহ সুখী জীবনের শুভ কামনা করলেন ।

    বধূ চাং হোং ইয়ান একজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা । তিনি ও তার স্বামী ছোট বেলা থেকে বেন চি লান থানায় বাস করেন । তারা পরস্পরকে ভালবাসেন । চাং হোং ইয়ান বলেন , তিনি স্বামীকে খুব ভালবাসেন । তরুণটি লম্বা , স্বাস্থ্যবান ও পরিশ্রমী । আজকের বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনি খুব খুশি হয়েছেন ।

    আজ তাদের যে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে , তাতে সর্বপ্রথমে দু'পক্ষের বাবা মাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে । তা ছাড়া তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য আত্মীয় স্বজনকেও ধন্যবাদ জানাতে হবে । তাদের আগমনের জন্য নতুন দম্পতি খুব আনন্দিত হয়েছেন ।

    বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ভোজের আয়োজন করা হয় । অতিথিরা একদিকে তিব্বতী জাতির মাখন চা ও বিবিধ জলখাবার খাচ্ছেন , অন্য দিকে উত্ফুল্লচিত্তে গল্প করছেন এবং পরস্পরের জন্য সুখ কামনা করছেন । বেন চি লান থানার গেরম নামে একজন বৃদ্ধ বলেন , দিছিং তিব্বতী জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে আবহাওয়া উষ্ণ , নদ-নদী বহুল , নদীর স্রোতে বয়ে আসা পলি জমে জমে যে সমতল ভূমি সৃষ্টি হয়েছে , সে সব কৃষি জমিতে ফসল চাষাবাদের জন্য খুব উপযুক্ত । স্থানীয় তরুণ -তরুণীদের বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণতঃ শীতকালে আয়োজন করা হয় । তখন কৃষি কাজ কম । গ্রামবাসীদের আমোদ প্রমোদ ও সমাবেশের আরো বেশি সম্ভাবনা আছে ।

    তুষারে আবৃত পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী তিব্বতীরা পশু পালন করে থাকেন । কিন্তু চিনশাচিয়াং নদীর উপত্যকায় বাস করা তিব্বতীরা প্রধাণতঃ ধান , ভুট্টা, মরিচ , চিনা , আখরোট , খুবানি , আপেল ও নাশপাতিসহ নানা রকম ফল , খাদ্য ও অর্থকরী ফসল চাষ করেন । তরুণ-তরুণীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে তিব্বতী জাতির চাষাবাদভিত্তিক সংস্কৃতি ও রীতি-নীতি প্রকাশ পেয়েছে ।

    সুস্বাদু সব খাবার খাওয়া শেষে সবাই বরপক্ষের বাসার নিকটবর্তী একটি বিরাট মাঠে এলেন । তারা স্যুয়ান চি নৃত্য নামে তিব্বতী জাতির এক ধরনের প্রাচীন নৃত্য পরিবেশন করলেন । প্রতি বছর যখন গুরুত্বপূর্ণ উত্সব ও উদযাপনী অনুষ্ঠান পালিত হয় , তখন এই ধরনের নাচ পরিবেশিত হয় । তারা একদিকে গান করেন , অন্য দিকে নাচেন । মাঝে মাঝে এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য কয়েক শো জনের সমাবেশ হয় । তখন সারা মাঠ আনন্দের সাগরে ডুবে যায় ।

    তিব্বতী জাতির তরুণ ও পাই জাতির তরুণীর বিয়ের অনুষ্ঠানে চীনের সংখ্যালঘু জাতির চালচলন ও প্রাণঢালা পরিবেশ তুলে ধরা হয়েছে । আসলে ইয়ুননান প্রদেশের দিছিং তিব্বতী জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তুষার পাহাড় , তৃণভূমি ও হ্রদসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ ।