২০০৩ সালের পয়লা মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরাকের ব্যাপক যুদ্ধ শেষ হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন । তবে বুশের এ কথা ঘোষণার চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি ইরাকী জনগণ এখনো দেখে নি । সম্প্রতি সি আর আইয়ের সংবাদদাতা ইরাকের পরিস্থিতি নিয়ে একজন ইরাকীর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে থাকা জামাল ইরাকের ও তার পরবর্তী সময়কে দেখেছেন এবং যুদ্ধ অনুভব করেছেন । তিনি প্রথমে বাগদাদের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদদাতাকে বলেন :
বাগদাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ । তা ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ের চেয়েও খারাপ । বুশের যুদ্ধ শেষ হওয়ার কথা ঘোষণাকালীণ অবস্থার আসল পরিস্থিতি এখন উল্টা । আসল পরিস্থিতি হল সাদ্দাম বাহিনীর বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে । তবে ইরাকী জনগণের জন্য তা মাত্রই শুরু । বলতে গেলে সব জায়গায়ই রয়েছে সড়ক প্রতিবন্ধকতা । পশ্চিম ও মধ্য বাগদাদের সব এলাকাই মার্কিন বাহিনী ও ইরাকের সরকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে । হাজার হাজার সশস্ত্র ব্যক্তি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ।
ঘন ঘন হিংসাত্মক তত্পরতার কারণে হাজার হাজার নিরীহ ইরাকী জনগণ হতাহত এবং গৃহহীন হয়েছে । তাদের দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক চাহিদাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । জামাল বলেছেন :
অন্যান্য পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে । যেমন চিকিত্সার মান খুব খারাপ । হাসপাতালগুলো স্বাভাবিকভাবে চিকিত্সা সেবা দিতে পারছে না । ঔষধ পাওয়াটাও খুব কঠিন । আরো সমস্যা হল নিত্য প্রয়োজনিয় জিনিস পত্র পাওযা দুঃসাধ্য । যদি আপনি গাড়ির জন্য তেল কিনতে চান , তাহলে আপনাকে তেল সরবরাহকারী স্টেশনে প্রায় ৪ থেকে ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে । মাঝে মাঝে স্টেশনে তেলও পাবেন না । দামও অনেক বেশি ।
বাগদাদের জনগণের দৈনন্দিন এ সমস্যাগুলো শুধু অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির লক্ষণ নয় , পাশাপাশি মার্কিন বাহিনীর সামরিক অভিযানও তাদের জীবনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে । ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী বার বার বাগদাদে আরো বেশি সৈন্য পাঠিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছে । তারপরও এসব ব্যবস্থা কার্যকরভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে তেমন একটা সফল হয় নি । সম্প্রতি মার্কিন বাহিনী বাগদাদের কিছু আবাসিক এলাকায় দেয়াল নির্মাণ করার চেষ্টা করছে । জামাল বলেছেন , যদিও মার্কিন বাহিনী বলেছে যে , দেয়াল নির্মাণের উদ্দেশ্য হল আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা , তারপরও এমন ব্যবস্থা সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলাকে রোধ করতে পারবে না , বরং জনগণের জীবন ক্ষেত্রে বহুবিধ অসুবিধার সৃষ্টি করছে । তিনি বলেছেন :
এসব দেয়ালের কারণে অধিবাসীরা অবাধে যোগাযোগ করতে পারবে না । সশস্ত্র ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেয়াল নির্মাণ করতে হয় , নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে তা নির্মাণ করা ঠিক নয় । দেয়াল আমাদের জীবনে অনেক অসুবিধা এনে দিয়েছে । লোকজণ মনে করে দেয়াল ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে না । ইরাকের মৌলিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হল রাজনৈতিক পদ্ধিতিতে সমাধান করা ।
তা ছাড়া , ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীও দিন দিন বিপদজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে । ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত নিহত মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা প্রায় ৩৩০০ ছাড়িয়েছে । গত এপ্রিল মাসে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রকাশিত সুত্রে জানা গেছে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ১ শো ছাড়িয়েছে । জামাল মনে করে , বিদেশি বাহিনীগুলোকে ইরাক থেকে প্রত্যাহার করলেই কেবল ইরাকের শান্তি বাস্তবায়িত হতে পারে । তিনি বলেছেন
যুক্তরাষট্র জানে না যে ইরাকে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয় । আমি মনে করি তাদের ইরাক সমস্যা সমাধানের কোনো ইচ্ছা নেই । মার্কিন বাহিনী হল সমস্যার কেন্দ্র বিষয় । সৈন্য প্রত্যাহার করা হল সমস্যা সমাধানের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
|