v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-04-27 20:17:18    
ছোটো দেবী হুয়াং থিয়েনই

cri
  ১০ বছর আগে মেয়েটির জন্ম হয় বিমানে । ১০ বছর পর সবাই তাকে খুঁজছে । সংবাদদাতা মেয়েটির মাকে খুঁজে বের করে তাঁকে জানালেন , তার মেয়ে আজীবন বিনাখরচে বিমানযোগে ভ্রমন করতে পারবে । কথাটা শুনে মেয়েটির মা অত্যন্ত খুশি হলেন । ১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারী চেচিয়াং প্রদেশের ই উ শহর থেকে সেনচেনগামী বিমানে ৬০জন যাত্রীর মধ্যে একজন বিশেষ যাত্রী এযার হোস্টেস প্রধান হো সিয়াওলুর দৃষ্টি আকৃষ্ট করলেন। কারণ তিনি তখন একজন গর্ভবতী ছিলেন ।

  এয়ার হোস্টেস প্রধান হো সিয়াওলু দেখলেন ,এই গর্ভবতী স্বামীর কাঁধে হেলান দিয়ে বসছিলেন এবং জোর করে স্বামীর পিঠে মারছিলেন । এখনো হো সিয়াওলুর মনে আছে যে, গর্ভবতীটি ডি-এফ আসনে বসছিলেন । তিনি তাঁকে শুয়ে বসালেন এবং তার স্বামীকে পাশে বসে তাকে দেখাশোনা করতে বললেন । যখন তিনি বিমান অবতরণ করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলেন হঠাত গর্ভবতীটির স্বামী তাকে জানালেন, তার বাচ্চার জন্ম হতে আরও দু মাস বাকি । কিন্তু এখন তার স্ত্রীর প্রসব-বেদনা উঠেছে , হয়ত বাচ্চার জন্ম শীঘ্রই হবে ।  

  ভাগ্য , ৬০জন যাত্রীর মধ্যে একজন ধাত্রী বিভাগের ডাক্তার ছিলেন । হো সিয়াওলু ডাক্তারকে সহযোগিতা করে বাচ্চাকে বের করলেন । যাত্রীদের সাহায্যে মা ও বাচ্চা দুজনই নিরাপদ থাকে।

  বিমানে জন্মগ্রহণকারী মেয়েটিকে বাবা মা হাংই নাম দিয়েছেন । আশেপাশে সবাই তাকে ছোটো দেবী ডাকেন । এই ঘটনা পালিত করা এবং হাংইর জন্মগ্রহণকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য সেনচেন বিমান কোম্পানি বিশেষভাবে হাংইকে আজীবনে বিনাখরচে বিমানযোগে ভ্রমণ করার একটি কার্ড প্রদান করেছে । এ ধরণের পদ্ধতির মাধ্যমে হাংইর সঙ্গে চিরকাল ধরে যোগাযোগ বজায় রাখবে বলে তারা আশা করে । কারণ গর্ভবতীদের বিমানযোগে ভ্রমণ করা সম্পর্কিত নতুন নিয়ম তৈরী করা হয়েছে । নতুন নিয়ম অনুযায়ী বিমানে শিশুর জন্ম দেয়ার ঘটনা আর সম্ভব হবে না ।

  ১০ বছর পার হয়ে গেছে । কিন্তু এ পর্যন্ত "ছোট দেবী" হাংইর বিনাখরচে বিমানযোগে ভ্রমণ করা সম্পর্কিত তালিকায় কোনো রেকর্ড নেই । হাংই এখন কোথায় ? এটি সেনচেন বিমান কোম্পানি বিশেষ করে সরাসরি সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মানুষদের মনে একটি প্রশ্ন রয়ে গেছে ।

  ২০০৭ সালের জানুয়ারী সেনচেন থেকে চেয়াংচিয়াংয়ের ই উগামী ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার ১০ বছর পর এই ফ্লাইট পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হল । এই সময় দশ হাজার মিটার উচু আকাশে জন্ম হওয়া "ছোট দেবী" হাংইর কথা সবাইর মনে পড়ে । কিন্তু ওই গর্ভবতী হয়ত ই উর মানুষ তবে তিনি কোথায় থাকেন কেউই জানেন না । সেনচেন বিমান কোম্পানি সংবাদমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে হাংই ও সেই ডাক্তারকে খুঁজতে শুরু করেছে ।

  ২০০৭ সালের প্রথম দিন চেনচিয়াং প্রদেশের চিনহুয়া টেলিভিশন কেন্দ্রে অনুসন্ধানের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে । বিজ্ঞপ্তিটি স্থানীয় অঞ্চলে এক প্রবল প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তুলেছে । বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ার দ্বিতীয় দিন একজন দর্শক ফোনে বলেছেন, তিনিই সেই ডাক্তার । এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত । টেলিফোনে তিনি দশ বছর আগের ঘটনা স্মরণ করেছেন ।

  ডাক্তার ইউয়ুকে পাওয়া গেলো । কিন্তু হাংই কোথায়? ডাক্তার ইউয়ু জানিয়েছেন, হাংইর বাবার নাম হুয়াং কোআন আর তার মার নাম লি লিনইং । স্বামী-স্ত্রী দুজন কুয়াংতু প্রদেশের লোক । সে সময় তারা দুজন ই উ শহরের একটি কারখানায় কাজ করতেন । এখন তারা কোথায় আছেন কেউই জানেন না । অনেক চেষ্টার পরও কোনো ফল হয়নি ।

  কয়েকদিন পর ই উ টেলিভিশন কেন্দ্রের কর্মীরা সেনচেনগামী বিমানে উঠেন । তারা সেখানে হাংইকে খোঁজার চেষ্টা করতে চান । সেনচেন শহরে তারা জানতে পেয়েছেন, হাংইর জন্ম হওয়ার পর মা ও মেয়ে দুজন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন । খবর পেয়ে তারা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যান এবং হাসপাতালে হাংইর গল্প জানেন এমন একটি ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ।

  ডাক্তারটি স্মরণ করে বলেছেন , আমি আশ্চর্য হয়েছি ,যে শিশু আকাশে জন্মগ্রহণ করে সে শিশু দেবী না ? যদিও শিশুটি বিমানে জন্মগ্রহণ করেছে তবু শিশু ও প্রসূতির অবস্থা খুব ভাল বলে মা ও শিশু হাসপাতালে মাত্র তিন-চার দিন অবস্থান করার পর হাসপাতাল ত্যাগ করেছে । আনন্দের ব্যাপার হল এই যে , লি লিনইংয়ের ঠিকানা সহ নানা তথ্য হাসপাতালের লিপিবদ্ধ রয়েছে ।

  হাসপাতালের লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী চেচিয়াং প্রদেশের চিনহুয়া টিভি কেন্দ্রের সংবাদদাতা ফোন করলেন । ফোনের ওপারে যিনি ফোন ধরলেন তিনি বলেন, তিনিই লি লিনইং । এখন তিনি ও তার পরিবার কুয়াংতুং প্রদেশের তুং কুয়াং শহরের ছাংআন থানায় থাকেন । কথাটা শুনে সংবাদদাতারা এত খুশি হলেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ।

  চিনহুয়া টেলিভিশন কেন্দ্রের সংবাদদাতারা অনেক প্রচেষ্টা চালানোর পর অবশেষে তুং কুয়াং শহরে দশ হাজার মিটার উচ্চু আকাশে জন্মগ্রহণকারী সেই ছোটো মেয়ে হুয়াং হাংইর বাড়ি খুঁজে বের করলেন । সংবাদদাতাদের কথা শুনে লি লিনইং তাড়াতাড়ি সেই বিমান টিকিট দেখালেন । দুপুর বেলায় নিকটের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়াশুনারত হাংই দুপুরের খাবার খেতে ফিরে এল । অবশেষে সংবাদদাতারা এই বিমানে জন্মগ্রহণকারী ছোটো দেবীকে দেখতে পেলেন ।এখন হাংই ছাংআন থানার সিয়াওবিয়েন প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী । সে এক স্ফূর্তিপূর্ণ ও সুন্দরী মেয়ে । তাকে দেখে বোঝা যায় না যে, সে নির্দিষ্ট সময়ের দু মাস আগেই জন্ম গ্রহণ করা একটি অকালীয় মেয়ে ।

  অনেক বছর ধরে লি লিনইং ও তার স্বামী দুজন দুলাভাইর তুংকুয়ান কারখানায় কাজ করতেন । বাচ্চার জন্ম দেয়ার পর তারা আর ই উতে ফিরে যাননি । এখন স্বামী-স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে তুংকুয়ান শহরে সুখ-শান্তিতে জীবনযাপন করছে । মাঝেমাঝে তারা সে বছরের ঘটনা এবং আন্তরিকতাপূর্ণ ডাক্তার ইউয়ুর কথা স্মরণ করতেন । ১০ বছর পার হয়ে গেছে । আসলে এই ১০ বছরে লি লিনইং ও তার পরিবারও সেই সব ভাল মানুষকে অনুসন্ধান করে আসছেন । এ জন্য সেই আজীবন বিনাখরচে বিমান টিকিট তারা খুব মনোযোগের সঙ্গে সংরক্ষণ করেছেন ।

  ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারী শীতের ছুটিরত হাংই বাবামার সঙ্গে বিমান করে চিনহুয়া শহরে নিজের বেনিফ্যাক্টর ডাক্তার ইউয়ুকে দেখতে যায় ।৩০ জানুয়ারী ইউ থেকে সেনচেনগামী বিমানের ক্রু ও সকল যাত্রী মিলে হাংইর জন্য একটি বিশেষ জন্মদিন পালন করেছেন । এই দিন হাংইর বয়স দশ বছর পূর্ণ হল ।