রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ২৬ এপ্রিল ক্রেমলিন ভবনে রাশিয়ার ফেডারেল সংসদের ফেডারেশন কমিটি এবং রাষ্ট্রীয় দুমার যৌথ সম্মেলনে বার্ষিক রাষ্ট্রীয় অবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। পুটিনের প্রেসিডেন্টের কার্যমেয়াদ ২০০৮ সালের বসন্তকালে শেষ হবে। ফলে এবারের রাষ্ট্রীয় অবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট হচ্ছে পুটিনের প্রকাশিত সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় অবস্থার রিপোর্ট।
জনমত লক্ষ করেছে যে, "গণতন্ত্রের উন্নয়ন" হচ্ছে পুটিনের এবারের রাষ্ট্রীয় অবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্টের একটি লক্ষণীয় বিষয়। তিনি বলেছেন, রাশিয়া অব্যাহতভাবে স্থিতিশীল ও রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করবে এবং অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাপনের গুণগত মান উন্নয়নে সচেষ্ট থাকবে বলেও জোরালো ভাষায় উল্লেখ করেছেন। যাতে অধিবাসীরা দেশের আর্থিক উন্নয়নের সাফল্য উপভোগ করতে পারেন। তিনি বলেছেন, এখন রাশিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের জটিল অবস্থা অতিক্রম করেছে এবং বিশ্বের দশটি বৃহত্ অর্থনৈতিক দেশের অন্যতম দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সাশ্রয় হয় এমন উপযুক্ত বসতবাড়ি নির্মাণ করবে, পুরোনো ও বিপদজনক বাড়িঘরগুলোর সংস্কার ও পুনর্নিমাণের ওপর বরাদ্দ বাড়বে, যাতে অধিকাংশ অধিবাসীরা সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। পুটিন মনে করেন, অর্থনীতির উন্নয়ন কেবল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে হবে না, উন্নত চিন্তাধারা ও উদ্ভাবনের উপরও নির্ভর করা উচিত। তিনি নানোমিটার প্রযুক্তিকে রাশিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকৌশলের গতিশক্তি হিসেবে গণ্য করেছেন। তিনি সংসদকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইন প্রণয়ন করে নানোমিটার প্রযুক্তির ওপর গবেষণার জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কূটনীতি সম্পর্কে পুটিন জোর করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ে রাশিয়া পুরোপুরি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাশিয়া অব্যাহতভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র সমুহের কমনওয়েলথ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করবে, ইউরোপ ও এশিয়ার একত্রীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে এবং শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কাঠামোতে সহযোগিতা জোরদার করবে।
রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্ক প্রসঙ্গে পুটিন বলেছেন, রাশিয়া ও ইউরোপের সম্পর্ক আরো গঠনমূলক হয়ে যাচ্ছে। দু'পক্ষের উচিত নতুন কৌশলগত অংশীদারী সম্পর্ককে চুক্তির ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে আরো সুসংবদ্ধ ও উন্নয়ন করা। তিনি বলেছেন, রাশিয়া তার বিশেষ ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়া ও ইউরোপের সম্পর্কের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
কিন্তু তিনি ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা মোতায়েনের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এটা হচ্ছে রাশিয়ার প্রতি একটি বাস্তব হুমকি। এটা কেবল রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সমস্যা তাই নয় , বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে ইউরোপের সকল দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্যাও বটে। ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার কাঠামোয় এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
তা ছাড়া পুটিন কিছু পাশ্চাত্য দেশ "গণতন্ত্রের ওজুহাতে" রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারানোর অপচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সবাই রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নকে পছন্দ করেন তা নয়। অধিক থেকে অধিকতর অর্থ রাশিয়ায় চলে আসে। কেউ কেউ সরাসরি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অপচেষ্টা করছে।" পুটিন সাংসদদের উদ্দেশ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরো কড়া আইন প্রণয়ন করে বলিষ্ঠভাবে চরমপন্থী কার্যকলাপের ওপর আঘাত হানার আহ্বান জানিয়েছেন।
এখন ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা সমস্যায় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোর মধ্যে বিরাট মতভেদ রয়েছে। এবারের রাষ্ট্রীয় অবস্থা রিপোর্টে এই সমস্যার ব্যাপারে পুটিনের মনোভাব ন্যাটোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একই দিন অনুষ্ঠিত ন্যাটো ও রাশিয়ার পরিষদের অধিবেশনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জাপ দা হুপ শেফার বলেছেন, রাশিয়া অস্থায়ীভাবে "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি চুক্তি"-তে তার দায়িত্ব পালন না করার সিদ্ধান্তের প্রতি ন্যাটোর মিত্র দেশগুলো হতাশ বোধ করছে। কারণ , ন্যাটোর দেশগুলো মনে করে, এই চুক্তি হচ্ছে ইউরোপের নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি।
|