চীনের জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সম্প্রতি কৃষি শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে । যেমন যেসব মহকুমা ও গ্রাম থেকে কৃষকরা বিভিন্ন শহরে কাজ করতে গেছেন , সেসব মহকুমা ও গ্রামে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে । কৃষি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং তাদের বেতন দেয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে । সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যক্তিরা মনে করেন যে , এসব ব্যবস্থা থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে , কৃষি শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চীনের ট্রেড ইউনিয়নের কাজকর্ম ধাপে ধাপে বিধিসম্মত হচ্ছে ।
বর্তমানে চীনে মোট ১০ কোটি কৃষি শ্রমিক রয়েছে । তারা প্রধানত বিভিন্ন শহরে নির্মাণ , বস্ত্র ও তৈরি পোষাক ও রেস্তোঁরার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন । চীনের অর্থনৈতিক বিকাশে তারা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন । চীনের কর্মচারী ও শ্রমিকদের স্বার্থের মুখপাত্র হিসেবে চীনের বিভিন্ন স্তরের ট্রেড ইউনিয়ন এখন কৃষি শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের কাজকে নিজেদের দায়িত্বের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করছে ।
গত বছরের গোড়ার দিকে চীনের ট্রেড ইউনিয়ন একটি শ্লোগান উত্থাপন করেছিল । তা হলো কৃষি শ্রমিকদের কোনো অসুবিধা হলে ট্রেড ইউনিয়নের কাছে যান । চীনের বিভিন্ন স্তরের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ ও বেতন দেয়ার নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে কৃষি শ্রমিকদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছে । এ কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে চীনের জাতীয় ট্রেড ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান সুই তে মিং বলেছেন ,
গত বছরের শেষ নাগাদ ৪ কোটি ১০ লাখেরও বেশি কৃষি শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দিয়েছেন । এটি কৃষি শ্রমিকদের মোট সংখ্যার ৩৭ শতাংশ । কৃষি শ্রমিকদের যে ১.৭৯ বিলিয়ন ইউয়ান বেতন সময়মত দেয়া হয় নি , আমাদের সহায়তায় সেগুলো তাদের দেয়া হয়েছে । আমরা কৃষি শ্রমিকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংস্কার চালিয়েছি এবং ১ কোটি কৃষি শ্রমিককে নিরাপত্তা , স্বাস্থ্য রক্ষা ও উত্পাদন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছি , যাতে তাদের আইনসংগত অধিকার ও স্বার্থ কার্যকরীভাবে সংরক্ষণ করা যায় ।
সুই তে মিং বলেছেন , এ বছরও চীনের বিভন্ন স্তরের ট্রেড ইউনিয়ন এ কাজকর্ম আরো জোরদার করবে , যাতে কৃষি শ্রমিকরা স্বতস্ফুর্তভাবে ও আইন মোতাবেক নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে পারেন । তিনি বলেছেন ,
কৃষি শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দেয়ার জন্যে তাদের উত্সাহিত করা এবং যেসব স্থান থেকে কৃষি শ্রমিক শহরে কাজ করতে গিয়েছেন , সেসব বিভাগ , মহকুমা ও গ্রামে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা । এ বছর প্রায় ১ কোটি কৃষি শ্রমিক বিভিন্ন স্তরের ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে । আগামী ৩ বছরের মধ্যে সমস্ত কৃষি শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হয়ে যাবেন ।
জানা গেছে , চীনের টেড ইউনিয়ন কৃষি শ্রমিকদের রফতানিকারক ও আমদানিকারক স্থানগুলোর বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অধিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করবে , সান্ধ্য স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি শ্রমিকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের কর্মস্থলে আহত হওয়ার বীমা , অবসরকালীন বীমা ও চিকিত্সা বীমা ব্যবস্থায় কৃষি শ্রমিকদের অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তত্ত্বাবধান করবে ।
বর্তমানে চীনের কয়েকটি স্থানের ট্রেড ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে অনেক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । যেমন মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের সিন ইয়াং শহরের বহু সংখ্যক কৃষক বড় বড় শহরে কাজ করতে গেছেন । তাদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে সেই ৫ বছর আগে স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন কৃষি শ্রমিক আমদানিকারক শহরগুলোর ট্রেড ইউনিয়নের সংগে দ্বিপক্ষীয় অধিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছে । এখন সিন ইয়াংয়ের ১০ লাখেরও বেশি কৃষি শ্রমিক স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দিয়েছেন । সিন ইয়াংয়ের ট্রেড ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছেন মিন সিয়ান বলেছেন ,
যেখানে আমাদের সিন ইয়াংয়ের কৃষি শ্রমিক রয়েছেন , সেখানে আমরা তাদেরকে স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দিতে উত্সাহিত করি , যাতে তাদের আইনসংগত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা যায় ।
সিন ইয়াংয়ের দ্বিপক্ষীয় অধিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকরীভাবে কৃষি শ্রমিকদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করছে । চীনের জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন এখন সারা দেশে এ ব্যবস্থা জনপ্রিয় করে তুলছে ।
কৃষি শ্রমিকদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াও নিং প্রদেশের রাজধানী শেন ইয়াং শহরের ট্রেড ইউনিয়ন গত বছরের শেষ দিকে কৃষি শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে । এ কেন্দ্রে শ্রমজনিত মামলা , শ্রম তত্ত্বাবধান ও আইনগত সহায়তাসহ মোট ৯টি পরিসেবামূলক বিভাগ রয়েছে । তাছাড়া এ কেন্দ্রে কৃষি শ্রমিকদের অভিযোগপত্র গ্রহণ সংক্রান্ত হটলাইনও চালু করা হয়েছে । তাদের কাজ কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সমাদর পেয়েছে ।
ওই চিং তুং ছিলেন লিয়াও নিং প্রদেশের ছিয়াও ইয়াং জেলার একজন কৃষক ছিলেন । তার বয়স ২০ বছর । কয়েক বছর আগে তিনি দেশের বাড়ি থেকে প্রাদেশিক রাজধানী শেন ইয়াং শহরে কাজ করতে আসেন । কৃষি শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার খবর পেয়ে তিনিও সংশ্লিষ্ট পরামর্শ নেয়ার জন্যে এখানে এসেছেন । তিনি বলেছেন ,
আমি যে ইউনিট কাজ করছি , সে ইউনিট আমার জন্যে নানা ধরণের বীমা ব্যবস্থা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । এ সম্পর্কিত নীতি জানার জন্যে আমি এ কেন্দ্রে পরামর্শ নিয়েছি । এভাবে আমি জানতে পেরেছি যে , আমার কি কি অধিকার ও স্বার্থ আছে । এখানকার কর্মীরা বিস্তারিতভাবে এবং ধৈর্যের সংগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন । এতে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ।
সাধারণভাবে বলতে গেলে চীনের কৃষি শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতা নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে চীনের বিভিন্ন স্তরের ট্রেড ইউনিয়ন ক্রমেই বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে এবং সান্ধ্য স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দেবে । ২০০৭ সালে ১ কোটি কৃষি শ্রমিককে পেশাগত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে । তাছাড়া চীনের ট্রেড ইউনিয়ন কৃষি শ্রমিকদের জন্যে বেতনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যবস্থা , সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থাও গড়ে তুলবে ।
|