v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-04-26 21:42:44    
হেইলুংচিয়াংয়ের বিশ্ব ভুতত্ত্ব পার্ক --- পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ(ছবি)

cri

 চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের পাচঁটি সংযুক্ত হ্রদ ভুতত্ত্ব পার্কে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পূর্ণ ও কেন্দ্রীভূত আগ্নেয়গিরি সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে এটি "প্রাকৃতিক আগ্নেয়গিরি জাদুঘর" বলে সুপরিচিত। পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ হচ্ছে চীনের প্রথম পর্যায়ের বিশ্ব ভূতত্ত্ব পার্কগুলোর অন্যতম।

 পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ এলাকা হচ্ছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি অঞ্চল। ১৭১৯ সালে এই আগ্নেয়গিরি সর্বশেষ বার ফেটে পড়ে। ২০০ বছর আগের ফেটে পড়া আগ্নেয়গিরির দরুণ পাঁচটি হ্রদ এই ভুতত্ত্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের পর তার লাভা আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে কালো রঙের আগ্নেয়গিরি পাথরে পরিণত হয়েছে। সেই সময় এখানে সাদা নদী নামে একটি নদী ছিল। আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের পর চার দিকে ছড়িয়ে যাওয়া লাভা সাদা নদীকে ভাগ করে বর্তমানের পাঁচটি হ্রদ সৃষ্টি করেছে। এই পাঁচটি হ্রদ যেন ভাই বোনের মতোই খুব কাছাকাছি রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের নাম দিয়েছে প্রথম হ্রদ, দ্বিতীয় হ্রদ, তৃতীয় হ্রদ, চতুর্থ হ্রদ ও পঞ্চম হ্রদ। এর নামগুলো খুব সোজা।

 পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ বিশ্ব ভুতত্ত্ব পার্কের জাদুঘরের উপ-পরিচালক ম্যাডাম চাং লি লি জানিয়েছেন, "এই পাঁচটি হ্রদ পরস্পরের সঙ্গে সংলগ্ন। এর প্রধান পানির উত্স হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি । এর উত্স পঞ্চম হ্রদে আছে। পাঁচটি হ্রদের মধ্যে তৃতীয় হ্রদ সবচেয়ে বড়। পানি পর্যাপ্ত থাকার সময় এর আয়তন ২১.৫ বর্গকিলোমিটার। জাহাজের দ্বারা প্রথম হ্রদ থেকে দ্বিতীয় হ্রদে যাওয়ার পথে কোনো বাধা নেই। "

 আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট পাথর সাগর

 এই পাঁচটি হ্রদ পরস্পরের সঙ্গে সংলগ্ন হলেও এদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন প্রথম হ্রদে পদ্ম ফুল ফুটে । দ্বিতীয় হ্রদ হচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ চাষের উপযুক্ত স্থান। তৃতীয় হ্রদের দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর। চতুর্থ ও পঞ্চম হ্রদে বিপুল পরিমাণ নলখাগড়ার বন রয়েছে বলে তা পাখিদের শ্রেষ্ঠ আশ্রয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এই হ্রদগুলো থেকে উত্পাদিত মাছ হচ্ছে স্থানীয় অধিবাসীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার।

 স্থানীয় ব্যক্তি মিঃ চাও মিং জানিয়েছেন, "আমাদের এখানে এক ধরনের বিশেষ মাছ আছে। নাম দিয়েছি খনিজ মাছ। কারণ এ মাছ ঠাণ্ডা পানি ও খনিজ পদার্থ মিশ্রিত পানিতে বসবাস করে। এ মাছ ধীরে ধীরে বড় হয়। তার মাংস খুব টাটকা ও সুস্বাদু। আমরা হ্রদ থেকে মাছ ধরার পর এই হ্রদের পানি দিয়ে রান্না করি। খেতে সত্যিই মজা লাগে।"

 কিন্তু পরিতাপের ব্যাপার হলো খনিজ মাছ সুস্বাদু হলেও যে কোন সময় ইচ্ছা মতো তা খাওয়া যায় না। কারণ, পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ এই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং কড়াকড়ি নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে। পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ অঞ্চলের পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক ম্যাডাম চাং লি জুন বলেছেন, "আমরা প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকার পরিকল্পনা ও বিশ্ব ভুতত্ত্ব পার্কের সংরক্ষণ পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ পরিচালনা করি। যেমন পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদের খনিজ মাছ ধরা নিষেধ কালে এখানে মাছ ধরা যায় না।"

 এই পাঁচটি হ্রদের আশেপাশে ১৪টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। সমুদ্রসমতল থেকে এ আগ্নেয়গিরিগুলোর উচ্চতা ৪০০ থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত। এর মধ্যে ১২টি মৃত আগ্নেয়গিরি রয়েছে আরো রয়েছে দুটি ঘুমোনো জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। স্থানীয় লোকেরা এই দুটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরিকে বুড়ো কালো পাহাড় ও অগ্নি পাহাড় বলে ডাকেন। তাদের আকার বিরাট। এই দুটো আগ্নেয়গিরিতে রয়েছে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ আগ্নেয়গিরির মুখের অন্যতম আয়তন। এটা হচ্ছে বহু পর্যটকের পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ ভ্রমণের প্রধান কারণ।

 পাহাড়ে উঠে আগ্নেয়গিরির মুখ দেখা যায়। আগ্নেয়গিরির মুখ দেখতে কুপি অথবা বড় জন্তুর রক্তাক্ত মুখের মত মনে হয়। কালো রঙের আগ্নেয়গিরির তলা দেখে তত্কালীন আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিজ্ঞানীদের অনুমান অনুযায়ী, আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের সময় মাটির নিচে থেকে বের হয়ে আসা লাভার তাপমাত্রা ১২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত পৌঁছেছিল। অতি গরম লাভা প্রবাহিত হওয়ার পর ঠাণ্ডা হয়ে পাথরের সাগরে রুপান্তর হয়েছে। আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহিত হওয়ার সময় তত্কালীন আকার বজায় রয়েছে। এই পাথরের সাগরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের সাড়ম্বর দৃশ্য অনুভব করা যায়। মনে হয়, বিভিন্ন আকারের পাথরের মধ্যে জীবন যেন লুকিয়ে আছে আগামীর প্রত্যাশায়।

 খ: আগ্নিয়গিরি বিস্ফোরণের দরুণ পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ শ্রেষ্ঠ খনিজ পদার্থ মিশ্রিত পানি রয়েছে। এখানকার পানি সোডা পানির মতোই। তা খাওয়া যায়, স্নান করলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ এই পানির মধ্যে দশ বারো রকম শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পানি দিয়ে স্নান করলে পাকস্থলির সমস্যা, অস্থিরতা, ত্বকের সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগ রোধ করা যায়। সত্যিই এ পানি মানুষের জন্য কল্যাণকর। চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের হেইহো শহর থেকে আসা ৭৭ বছর বয়স্ক ম্যাডাম ইউ বিশেষ করে এখানে খনিজ পদার্থ মিশ্রিত পানিতে স্নান করার জন্য এসেছেন। তিনি আমাদের সংবাদদাতার সঙ্গে আলাপ করেছেন।

 সংবাদদাতা প্রশ্ন করেন, "আপনি কী রোগ চিকিত্সার জন্য এখানে এসেছেন?"

 ম্যাডাম ইউ বলেন, "উচ্চ রক্তচাপ।"

 সংবাদদাতা: "শুধু উচ্চ রক্তচাপ চিকিত্সার জন্য এসেছেন?"

 ম্যাডাম ইউ: "জ্বি।"

 সংবাদদাতা: "আপনি কার কাছ থেকে জেনেছেন, এই পানি চিকিত্সার উপকার অনেক।"

 ম্যাডাম ইউ: "আমি অনেক আগে থেকেই জেনেছি। যারা এখানে এসেছিলেন, সবাই বলেন, খুব ভালো।"

 খন বহু লোক পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদের সুনাম শুনে এখানে চলে আসেন। এখানে কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ ও ভ্রমণ করা যায় তাই নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে এখানকার বিশ্রাম হোটেলে থাকতে পারেন এবং খনিজ পদার্থ মিশ্রিত পানি ও আগ্নেয়গিরির মাটি দিয়ে রোগের চিকিত্সা করতে পারেন। পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদের আশেপাশে পঞ্চাশটিরও বেশি বিশ্রাম হোটেল আছে। এখানে তারা একই সময় কয়েক হাজার রোগীকে অভ্যর্থনা জানাতে সক্ষম । তা ছাড়াও পর্যটকদের সুবিধার জন্য পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঝর্ণার পাশে শীতল ছায়ায়-ঘেরা ছোটো বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ছোট বাড়ির চার পাশেই পানির কল রয়েছে। পর্যটকরা পানির কল খুললে সঙ্গে সঙ্গেই টাটকা খনিজ পানি খেতে পারেন।

 পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ হেইলুংচিয়াং প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এখানে আসার সবচেয়ে ভালো সময় হলো গ্রীষ্মকাল। সেই সময় পর্যটন ও বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত। পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদ অঞ্চলে যেতে চাইলে হেইলুংচিং প্রদেশের রাজধানী হারবিন থেকে রেলগাড়িতে করে প্রায় ছয় ঘন্টা যাত্রার পর আপনারা পেইআন জেলায় পৌঁছবেন। তারপর বাসে করে পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদে যাওয়া যাবে।

 অথবা সরাসরি হারবিন থেকে দূরপাল্লার বাসে করে পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদের শহরে যেতে পারেন। সেখানে পৌঁছানোর পর পর্যটন বাসে করে পর্যটন এলাকায় যাওয়া যায়। যদি রাশিয়া থেকে এ পর্যটন অঞ্চলে যেতে চান, তাহলে চীন ও রাশিয়ার সীমান্ত শহর হেইহো থেকে বাসে করে পাঁচটি সংযুক্ত হ্রদে যেতে পারেন, যেতে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে।