জাপানের মন্ত্রী সভার সচিব শিওজাকি ইয়াসুহিসা ২৫ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাপান সরকার তাদের সংবিধানে নিষিদ্ধ যে যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার সংক্রান্ত সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা। যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার সংক্রান্ত সমস্যায় জাপানের আত্মরাক্ষী দলের সশস্ত্র শক্তি ব্যবহার করতে পারে কিনা এই স্পর্শকাতর সমস্যাটি বর্তমান সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এ কারণেই এ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
এ বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান প্রতিপাদ্য হলো " নিরাপদ সুনিশ্চিত আইন বিধিগুলো অবস্থান নিয়ে পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া " । যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইয়ানাই শিউনজি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্টাফ প্রধান বিষয়ক যৌথ সম্মেলনের সাবেক চেয়ারম্যান নিশিমোডো তেতুয়াসহ মোট ১৩ জন এবারের সম্মেলনে অংশ নেন। চলতি বছর শরতকালে এ কমিটি জাপান সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট গবেষণার ওপর একটি রিপোর্ট দাখিল করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
জাপানের সংবাদ-মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এ বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রথম সম্মেলন ১৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মোট চারটি আইন বিধির ওপর জাপান যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার প্রয়োগের বিষয়টি আলোচনা করা হবে। প্রথমত, ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিরক্ষা সিস্টেমের মাধ্যমে মিত্রদেশগুলোর ব্যালিষ্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ প্রতিহত করা। দ্বিতীয়ত, সামুদ্রিক আত্মরক্ষী দলের জাহাজ ও অন্যান্য দেশের জাহাজে আক্রমণ হলে সামুদ্রিক আত্মরক্ষী দলের প্রতি-আক্রমণ করা। তৃতীয়ত, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত আত্মরক্ষী দলের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী বিদেশী সেনাবাহিনী আক্রান্ত হলে , আত্মরক্ষী দলের প্রতি-আক্রমণ করা। চতুর্থতর, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীর আত্মরক্ষী দলের সদস্যদের প্রয়োজনের সময় সশস্ত্র শক্তি ব্যবহার করা।
যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার সংক্রান্ত সমস্যা হলো জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোতে সশস্ত্র হামলা হলে , জাপানের ওপর সরাসরিভাবে আক্রমণ না হলেও জাপান তার সশস্ত্র শক্তি নিয়ে প্রতি-আক্রমণের অধিকার পালন করতে পারে। জাপানের চলমান সংবিধানে নিষিদ্ধ যে যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে জাপান নিজে আক্রমণ হলে শুধু নিজের প্রতি-আক্রমণের অধিকার পালন করতে পারে। আবে শিনজো জুনিছিরো কোইজুমির ক্ষমতাসীন মন্ত্রী সভার সচিব থাকার সময় থেকে যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক মনে করেন, যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার পালন করার মাধ্যমে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার আইগত বৈধতা দেয়া হবে। এটিও হচ্ছে ২৬ এপ্রিল আবে শিনজোর যুক্তরাষ্ট্র সফর করার আগে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমানে জাপানের সংবিধানে সংশ্লিষ্ট যৌথ প্রতি-আক্রমণের অধিকার সংক্রান্ত সমস্যা সংশোধন করার ব্যাপারে জাপানের বিরোধী পার্টি তার বিরোধীতা করছে । এমন ক্ষমতাসীন পার্টির মধ্যেও কেউ কেউ মনে করেন, এর ওপর তাদের উচিত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া।
আবে শিনজোর এ ব্যবস্থায় দেশের অনেকই তা সন্দেহের চোখে দেখে। জনমত এই যে, আবে শিনজো চলমান সংবিধানের নবম অংশের বিষয়টি সংশোধন করতে চান। এটি হলো পুরোপুরিভাবে " শান্তিপূর্ণ সংবিধানকে" অস্বীকার করা। ২৫ এপ্রিল সংবাদ-মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে আবে শিনজো শুধু তার সঙ্গে মতৈক্য রয়েছে এমন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই স্পর্শকাতর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর ওপর নিশ্চয় বৈধতার বিষয়টিও রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে আবে শিনজো প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হওয়ার পর, জাপানের সংবিধান সংশোধনের গতি অনেকটা দ্রুততর হয়। তবে এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সশস্ত্র শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করা।
|