v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-04-25 19:50:54    
তাও ধর্ম ও তাও ধর্মে বিশ্বাসী সন্যাসীদের জীবন

cri
    চীন হচ্ছে বহু ধরণের সংস্কৃতির সম্প্রীতিময় সহঅবস্থানের দেশ । এ সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে ধর্মীয় সংস্কৃতি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক । বৌদ্ধ ধর্ম , তাও ধর্ম , ইসলামী ধর্ম , ক্যাথলিক ধর্ম ও খৃষ্টান ধর্ম হচ্ছে চীনের ৫টি প্রধান ধর্ম । এ ৫টি ধর্মের মধ্যে একমাত্র তাও ধর্মের উত্পত্তি চীনেই । এ মাসের শেষ দিকে তাও ধর্মের মহাসম্মিলন- আন্তর্জাতিক নৈতিকতা শাস্ত্র সংক্রান্ত ফোরাম চীনের সি আন ও হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হয় । যাতে আমাদের শ্রোতাবন্ধুরা তাও ধর্ম সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পেতে পারেন , সেজন্যে আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের তাও ধর্মের পাই ইয়ুন মন্দির সফর করেছেন ।

    সুপ্রাচীনকালে লোকেরা প্রকৃতিকে পুঁজা করতেন এবং দেবতা ও ভূতে অন্ধ বিশ্বাস করতেন । বদমাশদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্যে লোকেরা জাদুবিদ্যা আবিষ্কার করেন । পরবর্তীকালে আড়াই হাজার বছর আগে চীনের পূর্ব চৌ আমলে বসবাসকারী দার্শনিক লাওচি " নৈতিকতা শাস্ত্র" রচনা করেন । এ শাস্ত্রে তিনি ধীরস্থির চিন্তাধারা ও জীবনযাত্রার পদ্ধতির পক্ষপাতী ছিলেন । তিনি মনে করতেন যে, নাম ও স্বার্থের উপর মানুষের বেশি নজর দেয়া উচিত নয় । মানুষের অন্যদের উপকার করা উচিত । প্রায় দু হাজার বছর আগে চীনের পূর্ব হান আমলে লোকেরা "নৈতিকতা শাস্ত্রের" চিন্তাধারার সংগে প্রকৃতি ও স্বর্গকে পুঁজা করার অনুষ্ঠানের সমন্বয় করে তাও ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন । তাও ধর্মাবলম্বীরা যথেচ্ছ দেবতাকে বিশ্বাস করেন । তারা মনে করেন যে, আত্মশোধনের পর মানুষের আত্মা পরিষ্কার থাকে । চীনের লাওচিকে তাও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বলে বিবেচিত হয় । নৈতিকতা শাস্ত্র তাও ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রে পরিণত হয় ।

    পেইচিংয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত তাও ধর্মের পাই ইয়ুন মন্দিরে চীনা তাও ধর্ম সমিতির অফিস রয়েছে । খ্রীষ্টীয় ৭৪১ সালে চীনের থাং রাজবংশের সময় এ মন্দির নির্মিত হয় । তারপর বেশ কয়েকবার তার পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয় । পাই ইয়ুন মন্দিরের পরিচালক ইন ছেং আন চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল থেকে এসেছেন । গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে চীনের শানতুং প্রদেশের তাও ধর্মের তীর্থস্থান লাও শানে তিনি তাও ধর্মে যোগ দেন । এর আগে চীনের বিখ্যাত প্রাচীন সাহিত্য থেকে তিনি তাও ধর্মের প্রাথমিক তথ্য জেনে নেন । তিনি বলেছেন ,

    আমি সর্বপ্রথম চীনের প্রাচীন উপন্যাস - " লিয়াওচাইচিই" থেকে শানতুং প্রদেশের লাও শানের তাও ধর্মে বিশ্বাসী সন্যাসীদের কথা পড়েছি । আমি তাদের খুব ভক্ত করি । পরে আমি তাও ধর্মে যোগ দিয়েছি ।

    তাও ধর্ম ছুয়ান চেন ও চেং ই - দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত । ছুয়ান চেন সম্প্রদায়ের লোকেরা সবাই সন্যাসী । তারা বিয়ে করেন না এবং মাংস জাতীয় খাবার খান না । তারা সাধারণত তাও ধর্মের মন্দিরে বাস করেন । চেং ই সম্প্রদায়ের লোকেরা সাধারণত নিজেদের বাড়িতে থাকেন । তারা বিয়ে করতে পারেন এবং মাংস জাতীয় খাবার খেতে পারেন । পাই ইয়ুন মন্দিরের পরিচালক ইন ছেং আন হচ্ছেন ছুয়ান চেন সম্প্রদায়ভূক্ত ।

    শানতুং প্রদেশের লাও শানে তিন বছর ধরে আত্মশোধনের পর ইন ছেং আন থাই পাহাড় , উ তাং পাহাড় ও চিয়াং চিয়া চিয়ের মত চীনের তাও ধর্মের বিখ্যাত তীর্থস্থান ভ্রমণ করেন । ২০০০ সালের শরতকালে ইন ছেং আন পেইচিংয়ের পাই ইয়ুন মন্দিরে আসেন । তাও ধর্মের মর্মকথা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন ,

    চীনের জনসাধারণের বিশ্বাস থেকে তাও ধর্ম এসেছে । জনসাধারণের বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাও ধর্ম তাদের বাস্তব রূপ পেয়েছে । তাও ধর্ম সর্বত্রই বিদ্যমান রয়েছে ।

    ইন ছেং আন ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকতে পছন্দ করে আসছেন । তাও ধর্মে যোগ দেয়ার পর তিনি প্রধানত দেবতা ও নিসর্গের ছবি আঁকেন । পাই ইয়ুন মন্দিরে আত্মশোধনের পাশাপাশি তিনি ছবিও আঁকেন । তিনি চীনা লিপিকর ও চিত্রকর সমিতিতেও যোগ দিয়েছেন ।

    পাই ইয়ুন মন্দিরে মোট ১৮টি ভবন রয়েছে । এ ভবনগুলোতে তাও ধর্মের ইতিহাসের ডজন খানেক ঋষীকে পুঁজা করা হয় । প্রতিদিন ইন ছেং আন ও সন্যাসীরা সময়মত একটি ভবনে সমবেত হয়ে শাস্ত্র আবৃত্তি করেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , শাস্ত্র আবৃত্তির মাধ্যমে সন্যাসীরা নিজেদের মনকে শুদ্ধ করতে পারেন এবং আরো গভীরভাবে শাস্ত্রের মর্মকথা উপলব্ধি করতে পারেন ।

    ইন ছেং আনের মত পাই ইয়ুন মন্দিরের সন্যাসী লৌ ইয়ুন খেরও নিজের শখ আছে । তিনি বলেছেন ,

    অবসর সময় আমি চীনের ঐতিহ্যিক কলম দিয়ে হস্তলিপি লিখতে পছন্দ করি । তাছাড়া আমি এখন চীনের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রও শিখছি । এ রকম বাদ্যযন্ত্র দিয়ে বাজানো সুর সরল ও ভাবগম্ভীর । আমাদের সন্যাসীদের জন্যে খুবই উপযোগী । নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে মাঝেমধ্যে আমি কিছু প্রবন্ধও লিখি ।

    ১৯৯০ সালে চীনের তাও ধর্ম ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় । এ ইন্সটিটিউটও পাই ইয়ুন মন্দিরে অবস্থিত । লৌ ইয়ুন খে বলেছেন ,

    আমি চীনের তাও ধর্ম ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছি । চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীন সরকারের অনুসৃত ধর্মীয় স্বাধীনতা নীতির কল্যাণে এ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এখানে লেখাপড়া করে আমি সত্যি সত্যিই এ নীতি ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে পেরেছি ।

    অবশ্য তাও ধর্মে বিশ্বাসী সন্যাসীরা শুধু মন্দিরগুলোতে সীমাবদ্ধ নন । তারা প্রায়সই বিশ্বের অন্যন্যা দেশের সংগে সফর বিনিময় করেন । কেন না , এশিয়া , পশ্চিম ইউরোপ , আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়ও তাও ধর্মের প্রচলন রয়েছে । সন্যাসী হু ছেং হাই তাও ধর্মের বিনিময়ের জন্যে অন্যান্য দেশ সফর করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    তাও ধর্মের বিনিময়ের জন্যে আমি সিংগাপুরে দুবার গিয়েছি । আমি মালয়েশিয়া সফর করেছি এবং চীনের তাইওয়ানেও গিয়েছি । চীন সরকার অন্য দেশগুলোর সংগে এ মর্মের বিনিময়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় । প্রতিবার বিদেশ সফরের সময় সরকার আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে । অনেক সময় সরকার আমাদের জন্যে বিদেশীদের সংগে যোগাযোগ করার কাজও করে থাকে ।

    এসব সন্যাসীর সংগে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার মাধ্যমে আমাদের সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন যে, বস্তুত তাদের জীবন তত একঘিয়ে নয় । তারা প্রায় বাইরের দুনিয়া ও তাজা জিনিসের সংগে মেলামেশা করার সুযোগ পান ।