২৫০০ সাল আগে চীনের একজন বিখ্যাত দার্শনীক লাউ জি বিশ্ব বিখ্যাত "তাউ দ্যা চিং" বই লিখেন । এ লেখা চীনসহ মানবজাতির সংস্কৃতির ওপর খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে । এ মাসের শেষে আন্তর্জাতিক "তাউ দ্যা চিং" ফোরাম চীনের সি আন ও হংকং এ দু'জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে । অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও এতে অংশ নেবেন ।
তাউ দ্যা চিংয়ে দার্শনীক লাউ জি এমন চিন্তাধারা বর্ণনা করেছেন , তা হল : বিশ্বের সব কিছুর জন্ম বা পৃথিবীতে অস্তিত্বে বেঁচে থাকা , এবং মরা অথবা পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া হচ্ছে "তাউয়ের" মর্মের অনুসরণ । তাউ হল বিশ্বের উত্স , তাই "তাউ" অনুসরণ করতে হয় , যাতে শরীর ও হৃদয়ের সম্পর্ককে গভীর করা যায় । যেমন বিভিন্ন ধর্মের নিজেদের চিন্তাধারার বর্ণনাময় একটি বই আছে , তেমনি চীনের দেশজ ধর্ম তাউ ধর্ম "তাউ দ্যা চিংকে" সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যা হিসেবে মনে করা হয় । আধুনিক সমাজের লোকেরা তা থেকে দর্শন , রাজনীতি , প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও আর্থিক পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা শিখে ।
"তাউ দ্যা চিং" -এ মোট ৫ হাজারেরও বেশি অক্ষর রয়েছে । দু'শোরও বেশি রয়েছে অনুবাদ সংস্করণ । দেশি-বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতগণ সতর্কভাবে এর ওপর গবেষণা করছেন । বার্বারা হের্মা এসব গবেষকদের অন্যতম । তিনি বলেছেন :
তাউ দ্যা চিংয়ের ভাষা খুব মজা । যেন কবিতার মত , যাদুর মতও বলা যায় । তাউ দ্যা চিংয়ের ভাষা অত্যন্ত চমত্কার , কিছু অংশ ঠিক যেন প্রবাদ বাক্যের মত লোকজনকে অনেক জ্ঞানের উত্স দেখায় ।
বার্বারা হের্মা অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর । তার ৩০ বছরের তাউ দ্যা চিং গবেষণার উদ্দেশ্য হল কিভাবে "তাউ দ্যা চিংয়ের চিন্তাধারাকে জীবন ধারায় ব্যবহার করা যায় । তিনি বলেন :
তাউ দ্যা চিং আমাদেরকে জানিয়েছে যে , ভালোভাবে চিন্তা না করে উদ্দেশ্যহীনভাবে কাজ করবে না । শক্তি প্রয়োগ করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজের পরিবর্তন করা ঠিক নয় । পরিচালনায় "তাউ দ্যা চিংয়ের" চিন্তাধারা ব্যবহার করা এক রকমের কৌশল ।
এ দিকে হংকং চীনা ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর লিউ
সিয়াও গান যদিও হের্মার মত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে "তাউ দ্যা চিং" গবেষণা করে আসছেন , তবে তার গবেষণার মূল বিষয় হল তাউ দ্যা চিং এ বইয়ে উল্লেখকৃত সামাজিক দায়িত্ব । তিনি বলেছেন
লাউ জির লেখা "তাউ দ্যা চিং" থেকে এক রকমের সামজিক দায়িত্বকে উপলব্ধি করা যায় । লাউ জি সামজিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা উদ্বেলিত, তিনি সামাজিক অবস্থার ওপর মতামত দিতে গিয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন । তাঁর মূল চিন্তাধারা ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে । লাউ জির চিন্তা হল একটি সুষম সামাজিক অবস্থান গড়ে তোলা ।
প্রফেসর লিউ বলেছেন , আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লাউ জির চিন্তারাধা অনে
ক ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে । যেমন শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের শিখান , বাবা মা ছেলেমেয়েদের শিখান , এমন ক্ষেত্রে তাউ দ্যা চিংয়ের চিন্তাধারা ব্যবহার করা যায় । তার অর্থ হল , ছোটদের শেখার সময় প্রধানত তাদেরকে সাহায্য করতে হবে , বরং তাদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন না । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাদের নিজেদের উন্নয়ন সম্মান করা ।
২২ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক তাউ দ্যা চিং ফোরাম চীনের সি আন ও হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হয় । পূর্ব ও পশ্চিম দেশগুলোর পন্ডিতগণ লাউ জির "তাউ দ্যা চিং" নিয়ে আলোচনা করেছেন । ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে পূর্ব ও পশ্চিম দেশগুলোর পন্ডিতদের মতামতও আলাদা । দক্ষিণ কোরিয়ার কাংসুং বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের প্রফেসর কিম বাই হুয়েন বলেছেন :
পূর্বাঞ্চলীয়দেশগুলো ও পশ্চিমা দেশগুলোর দর্শনের ক্ষেত্রে উভয়ের সুবিধা আছে । কিভাবে তা মিলে মিশে সম্পন্ন করা যায় তা হল আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় ।
|