আবে শিনজো
জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজো ২৬ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দু'দিন সফর করবেন। এটা হচ্ছে আবে শিনজো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের নেতৃবৃন্দ কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন এবং সমাধানের উপায় অন্বেষণ করবেন।
বাস্তব প্রমাণ থেকে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, জাপান আশা করে, আবে শিনজোর এবারের সফর "জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার একটি উপাদান" প্রমাণ করা। যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রাক্কালে আবে বলেছেন, "জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রীর অপরিমেয় মূল্য রয়েছে।" তিনি অব্যাহতভাবে দু'দেশের মৈত্রী গভীর করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন। মার্কিন তথ্য মাধ্যমে সাক্ষাত্কারে আবে বলেছেন, "আমি আশা করি, এবারের সফরের সুযোগে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরো গভীরতর এবং সম্প্রসারণ করতে পারবে, যাতে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী আরও সুদৃঢ় হয়।" আবে আরো বলেছেন, গণ বিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার ও আঞ্চলিক সংঘর্ষ ঘন ঘন ঘটায় নিরাপত্তা পরিবেশের পরিবর্তনশীল অবস্থায় "জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার করা জাপান ও এই অঞ্চল তথা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কল্যাণকর।"
আবে বলেছেন, যুক্রাষ্ট্র সফরকালে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশকে বলবেন, ইরাকের পুনর্বাসনে জাপান অব্যাহতভাবে দায়িত্ব পালন করবে। জাপান গত বছরের জুলাই মাসে ইরাকে মোতায়েন আত্মরক্ষা দলের স্থল বাহিনী প্রত্যাহার করেছে। এখন কেবল জাপানের আত্মরক্ষা দলের নৌ বাহিনী ইরাকে পরিবহনের দায়িত্ব পালন করছে।
উত্তর কোরিয়া কর্তৃক জাপানীদের অপহরণ করার সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন লাভ করা হচ্ছে আবে শিনজোর এবারের মার্কিন সফরের আরেকটি আলোচ্য বিষয়। জনগণের মন জয়লাভের জন্য আবে এই সমস্যায় সর্বদাই শক্ত অবস্থান অবলম্বন করে আসছেন। ২২ এপ্রিল অপহৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সময় আবে বলেছেন, "আপনাদের জন্য শান্ত জীবন সৃষ্টি করা হচ্ছে আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব। অপহরণ সমস্যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে আমি আবার প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে অপহরণ সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করবো।"
জর্জ ডাবলিউ বুশ
অপহরণ সমস্যায় মার্কিন সরকারের সমর্থন এবং জনমত অর্জনের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে বার বার জাপানী বাহিনীর প্রমোদবালা সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। মার্চ মাসে তিনি বলেছিলেন, জাপানী বাহিনীর প্রমোদবালা হতে কোন নারীকে বাধ্য করার প্রমান নেই। তাঁর কথায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা প্রকাশ করে।
কিন্তু জনমত মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। ফলে সম্ভবত আবে শিনজোর এবারের মার্কিন সফর তাঁর প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল হবে না। যুক্তরাষ্ট্র কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠকের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয় এবং কূটনৈতিক উপায়ে কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের আশা করে। এটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান এশিয়ার নীতির গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু জাপান বার বার অপহরণ সমস্যা নিয়ে ছ'পক্ষীয় বৈঠকে বাধা সৃষ্টি করছে। নিঃসন্দেহে এটা যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করছে না। ফলে অপহরণ সমস্যায় আবে বুশের কাছ থেকে কতটা সমর্থন পাবেন, তা বলা মুশকিল।
জাপানের তথ্য মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, আবে ও বুশের বৈঠকের পর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যাতে পৃথিবীর উষ্ণায়ন মোকাবিলার ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা জোরদার করা যায়। এই চুক্তিতে দু'দেশ উপ-মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা, যৌথভাবে উদ্ভাবন ও জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয় ব্যবস্থা ও অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত কতগুলো সহযোগিতামূলক বিষয় থাকবে। কিন্তু বুশ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত "কিয়োটো প্রটোকোল" সমর্থন করেন না। এটা নিঃসন্দেহে জাপানের বিশ্বের উষ্ণায়ন মোকাবিলার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার প্রয়াসের ওপর বাধা সৃষ্টি করবে।
|