২৫ এপ্রিল ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের মহাসচিব ও পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনার শীর্ষ প্রতিনিধি আলি লারিজানী ও ইইউ'র কূটনীতি ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি জ্যাভিয়ের সোলানা তুরস্কের রাজধানী আনকারায় ইরানের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা আবার শুরু করবে । নিরাপত্তা পরিষদের ইরানের ওপর শাস্তি আরোপের দ্বিতীয় প্রস্তাব গৃহিত হওয়ার পর ইরান ও ইইউ এ প্রথমবার আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে , তাই বিভিন্ন পক্ষের দৃষ্টি ইতোমধ্যেই আকৃষ্ট হয়েছে ।
এর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বার বার ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা বন্ধ করার কথা বলেছে । সময়সীমার মধ্যে ইরান যদি তা বন্ধ না করে , তাহলে নিরাপত্তা পরিষদ তার ওপর আরো কঠোর শাস্তি আরোপের ব্যবস্থা নেবে । এ দিকে ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য আনকারা আলোচনা ঠিক নিরাপত্তা পরিষদের ৬০দিন সময়ের ৩০ দিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশা করে এ বারের আলোচনায় বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হবে।
এর আগে ইইউ ও ইরানের দ্বন্দ্বের কেন্দ্র বিষয় ছির , ইইউ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পরিকল্পনা বন্ধকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে মনে করে । তবে ইরানের শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হল ইরানী জনগণের অধিকার । এ কারণে ইরান ইইউ'র অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে । ২৩ এপ্রিল লুক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত ইইউ'র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে সোলানা বলেছেন , এবার বৈঠকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনার বন্ধ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে না , তবে ইরানকে নতুন একটি গুচ্ছ প্রস্তাব দেয়া হবে , যাতে বেসামরিক পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে দু'পক্ষের সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করা যায়।
ইরান এ বারের আলোচনার জন্যও অনেক প্রস্তুতি নিয়েছে । চলতি মাসের ৯ তারিখে ইরান ঘোষণা করেছে যে , ইরান শিল্পায়নের লক্ষ্যে পরমাণু জ্বালানী উত্পাদনের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং মধ্য ইরানের নাতান্জে আরো ৫০টি সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করবে । ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ মোহাম্মদ আলি হোসেনী ২২ এপ্রিল তেহরানে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন , অনুষ্ঠিতব্য এ আলোচনায় ইরানের শিল্পায়নের লক্ষ্যে পরমাণু জ্বালানী উত্পাদনের অবস্থানকে বিবেচনা করতে হবে ।
২৩ এপ্রিল লারিজানী তেহরানে আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন , নতুন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে । তিনি বলেছেন , যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষ সতর্ক মনোভাব নিয়ে এ আলোচনা করে , তাহলে ইইউ'র জন্য সন্তোষজনক ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব হবে । বিশ্লেষকদের ধারণা , লারিজানী যে "সতর্ক মনোভাবের কথা" উল্লেখ করেছেন , তার অর্থ হল ইইউকে পরমাণু শক্তির উন্নয়নে ইরানের অগ্রগতির বিষয়টি স্বীকৃতি দিতে হবে ।
বিশ্লেষকরা আরো লক্ষ্য করেছে যে , ২৩ এপ্রিল সোলানা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা বন্ধ নিয়ে আলোচনা না করার কথা বলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আলী হোসেনী একই দিন বলেছেন যে , এবার বৈঠকে খুব সম্ভবত অগ্রগতি অর্জিত হবে ।
বর্তমান পরিস্তিতিতে ইইউ ও ইরান উভয়ই আশা করে আনকারা আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের একটি নতুন উপায় খুঁজে বের করবে । তা ঠিক যেন ২৩ এপ্রিল সোলানার কথার মত , তিনি বৈঠকে অগ্রগতি অর্জন নিশ্চিতভাবে হবে অথবা বৈঠকটি ব্যর্থ হবে এমন কথা তিনি বলতে পারেন না । কারণ ইইউ'র দিক থেকে , আনকারা আলোচনায় ইইউ ইরানের ইউরেনিয়া সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা বন্ধের বিষয় উল্লেখ করবে না , তবে ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইইউ'র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ইরানের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের চেয়ে আরো কঠোর শাস্তি আরোপের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তবে ইরানের দিক থেকে , ইরান তার সম্প্রতি অর্জিত পরমাণু সাফল্যকে আলোচনার পণ হিসেবে মনে করে । তবে পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে , ইরান তার পরমাণু উত্পাদনে অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে যে কথা প্রচার করছে তা সঠিক নয় । তাই এমন পরিস্থিতিতে আলোচনায় অগ্রগতি অর্জিত হবে কিনা , তা এখনবলা মুস্কিল।
|