কারুশিল্প চীনের স্কুলে মৌলিক শিক্ষাদানের একটি বিষয়। বুনিয়াদী ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এবং শিক্ষক ও সম্পদের-অভাবে বর্তমানে চীনের গ্রামাঞ্চলের কারুশিল্প ছাত্রছাত্রীদের কাছে শুধু গান বা ছবি আঁকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে উত্তর পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের এক গ্রামের একটি স্কুল বিশেষ জাতীয় বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন মহলে সুনাম অর্জন করেছে। আজকের শিক্ষার আলো অনুষ্ঠানে এই পিয়াও ইয়াং পরীক্ষামূলক স্কুল সন্বন্ধে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করব।
চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, এরহু নামক চীনের বেহালা বাজানোর গান ---"ঘোড়দৌড়"শুনছেন। এ গানটি পিয়াও ইয়াং পরীক্ষামূলক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বাজাচ্ছে। এই গানে চীনের মঙ্গোলিয় জাতির উত্সব উদযাপনের সময় সুখের পরিবেশ তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রদর্শন অনুষ্ঠান চিলিন প্রদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন কি তারা পেইচিংসহ বিভিন্ন মহানগরেও গিয়ে পরিবেশন করেছে।
এই স্কুলের উপাচার্য তোং জিহো ব্যাখ্যা করেছেন, পিয়াও ইয়াং পরীক্ষামূলক স্কুলটি আগে শুধু গ্রামের একটি সাধারণ প্রাথমিক স্কুল ছিল। গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিল্প-বিদ্যা অনুধাবন করা এবং শিক্ষাদানের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ১৯৯৩ সাল থেকে স্কুলের শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদেরকে জাতীয় বাদ্যযন্ত্র শিক্ষাদান শুরু করন। যাতে ছাত্রছাত্রীরা শিল্প-বিদ্যা ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ পায়।
আমাদের স্কুল ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের পাঠ ভালোভাবে শিক্ষাদানের পাশাপাশি ছুটিতে তাদেরকে শিল্প-বিদ্যা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গ্রামের সাংস্কৃতিক জীবন খুব একঘেয়ে। শনিবার ও রবিবার তারা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পেতো না। আমরা এই সময়ের সদ্ব্যবহার করেছি। ফলে ছাত্রছাত্রীরা কেবল বিশেষ নৈপূণ্য শিখতে পেরেছে তাই নয়, রবং কিছু পেশাগত জ্ঞানও অর্জন করতে পেরেছে।
এর পাশাপাশি চীন সরকার ড্যান্ডেলিয়ন নামক পরিকল্পনা চালু করেছে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামের শিশুদের সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলার শিক্ষা উন্নত ও জোরদার করা। চীন সরকার অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়ার কারণে পিয়াও ইয়াং পরীক্ষামূলক স্কুল বহু নতুন স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
স্কুলের উপাচার্য তোং চিহো ব্যাখ্যা করেছেন, স্কুলের বিশেষ প্রশিক্ষণের -ধরন এবং শিক্ষাদানের পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে উন্নত হওয়ায় কাছাকাছি এলাকার ছাত্রছাত্রীরাও এখানে শিক্ষা লাভের জন্যে আগ্রহী হয়ে উঠে। এ পর্যন্ত পিয়াও ইয়াং পরীক্ষামূলক স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় শোরও বেশি। ছাত্রছাত্রীরা বলেছে, গ্রামের ছাত্রছাত্রী হিসেবে তারা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখার সুযোগ খুব কম পায়। তবে এই স্কুল তাদেরকে এখন এই সুযোগ দিচ্ছে।
ছাত্রী কাও ছুং বলেছে, আমি মনে করি জাতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মাধ্যমে ক্লাসের বাইরে আমার জীবন বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এবং আমি বেশি সাফল্যও অর্জন করেছি।
ছাত্রী লি ছুন ইউ মনে করে, এরহু শিখার মাধ্যমে তার জীবন উন্নত হচ্ছে, জ্ঞান উন্নত হচ্ছে। তাছাড়া স্কুলের বিভিন্ন তত্পরতার মাধ্যমে তার অভিজ্ঞতা বেড়েছে।সম্প্রতি ইউনেস্কো পিয়াও ইয়াং পরীক্ষামূলক স্কুলকে ইউনেস্কো ক্লাবের সদস্য করেছে। উপাচার্য তোং চিহো বলেছেন, আমি আশা করি, এই প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে চীনের গ্রামের যুবকযুবতীদের নতুন চেহারা আরো ভালোভাবে প্রদর্শন করা যাবে।
আমরা এই সুযোগের মাধ্যমে ইউনেস্কোর সঙ্গে সহযোগিতায় আন্তর্জাতিকীকরণ করতে পারি। পরবর্তীতে আমরা বিখ্যাত স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করবো। এর পাশাপাশি এই সুযোগে আমরাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুদের আমাদের স্কুল দেখতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
|