২২ এপ্রিল ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর নুরি আল মালিকি কায়রোতে প্রথমবারের মত তাঁর মিশর সফর শুরু করেছেন । তাঁর সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী মাসে মিশরের শার্ম এল শেইখে অনুষ্ঠিতব্য ইরাকের নিরাপত্তা সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া । পরে তিনি সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমীরাত এবং ওমানসহ বিভিন্ন উপকূলীয় দেশ সফর করবেন ।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী প্রতিনিধি দেশ , আট দেশ গোষ্ঠী এবং ইরাকের প্রতিবেশী দেশগুলোর অংশ নেয়া মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলন ৩ ও ৪ মে মিশরের শার্ম এল-শেইখে অনুষ্ঠিত হবে । সম্মেলনে ইরাকের রক্তাক্ত সংঘর্ষ নিরসনের জন্য সমাধানের পদ্ধতি খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা হবে । মালিকি কায়রোতে পৃথক পৃথকভাবে মিশরের প্রেসিডেন্ট হুসনি মুবারাক ও প্রধানমন্ত্রী আহমেদ নাজিফের সঙ্গে বৈঠককালে ইরাকের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন । বৈঠকের পর একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মালিকি বলেছেন, ইরাকে সংঘটিত হিংসাত্মক ঘটনা আল কায়েদা সংস্থা এবং তার সমর্থকরা শুরু হয়েছে । ইরাকের সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় সংঘর্ষ এখন ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে । নাজিফ বলেছেন, মিশর সরকার ইরাকের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিরীহ লোকদের ওপর চালানো বিভিন্ন সন্ত্রাসী তত্পরতার নিন্দা করছে ।
এ ছাড়া, ইরাক এবং মিশরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন হচ্ছে দু'পক্ষের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । মালিকির নেতৃত্বাধীন ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, ইরাকের সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসাত্মক সংঘর্ষ অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে । ইরাকের প্রতিবেশী দেশগুলো ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয় নিয়ে চিন্তভাবনা করছে ।এদিন মালিকি , প্রেসিডেন্ট মুবারাক ও প্রধানমন্ত্রী নাজিফের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, তিনি মুবারাকের সঙ্গে দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে থাকা সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তিনি মনে করেন , দু'পক্ষের উচিত সক্রিয়ভাবে দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত এবং দু'দেশের সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করা উচিত । নাজিফ বলেছেন, মালিকির এবারের সফর দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে আরো ত্বরান্বিত করবে এবং পুনরায় ঘোষণা করেছেন যে, মিশর ইরাকের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করবে । বৈঠকের পর মালিকি এবং নাজিফ উভয়েই বলেছেন, মিশরের কোম্পানিগুলো যাতে পুনরায় ইরাকে ফিরে গিয়ে ইরাকের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনকাজে অংশ নিতে পারে সে ব্যাপারে চেষ্টা চালাবেন ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে অবনতিশীল, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ এবং হিংসাত্মক তত্পরতার অবস্থা অব্যাহতভাবে গুরুতর হচ্ছে । ইরাক ও তার প্রতিবেশী দেশগুলো এবং গোটা মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় তা হুমকির সৃষ্টি করেছে । কিভাবে ইরাককে সাহায্য করে তার রক্তাক্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটানো যায় এবং ইরাকের শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা যায় তা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক মতৈক্যে পরিণত হয়েছে । ইরাকের নিরাপত্তা সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আগে মালিকি মিশরসহ বিভিন্ন আরব দেশ সফর করা , ইরাকের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা জানানো , সক্রিয়ভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদকে চ্যালেঞ্জ করা এবং সম্মিলিতভাবে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করার পর , ইরাকের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক গঠনমূলক ভুমিকা পালন করবে ।
|