মধ্য প্রাচ্য সফররত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট গেটস ১৯ এপ্রিল হঠাত ইরাকের রাজধানী বাগদাদে পৌঁছেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতিন অবনতি ঘটার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঝটিকা ইরাক সফর করেছেন। রবার্ট গেটসের ঝটিকা ইরাক সফরে ইরাকের নিরাপাত্তা পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে।
১৯ এপ্রিল বাগদাদ পৌঁছানোর পর রবার্ট গেটস হেলিকপটার যোগে বাগদাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় ফাল্লুজা শহরে যান । সেখানে তিনি ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাবাহিনীর সর্বোচ্ছ কমর্কর্তা পেট্রোয়াসসহ উচ্চ পদস্থ অফিসাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তাঁরা ইরাকের বতর্মান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ২০ এপ্রিল তিনি ইরাকের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। বৈঠকে তাদের মধ্যে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আর জাতির সমঝোতার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হওয়ার পর এটা হল তাঁর তৃতীয় বাগদাদ সফর। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আরও বেশী সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ইরাকে নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা শুরু করার পর এটা হল রবার্ট গেটসের প্রথম সফর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রবার্ট গেটসের এবার ঝটিকা ইরাক সফরের প্রধান প্রধান কারণ এই যে, প্রথমত ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তাঁর এবার সফরের লক্ষ্য হল ইরাকের পরিস্থিতির অবনতি ঘটার প্রধান কারণ আরও জেনে ফেলা এবং নতুন নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিকল্পনা কার্যকর করার ব্যাপার যাচাই করা। যে দিন রবার্ট গেটস বাগদাদে পৌঁছেছেন, ঠিক সেদিনই বাগদাদ শহরের কেন্দ্রে আত্মঘাতী গাড়ী বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কমপক্ষে দশ জন নিহত আর ২১জন আহত হয়েছে। এর আগে বাগদাদ শহরের সাডলিয়া বাজারে একটি আত্মঘাতী গাড়ী বিস্ফোরণে ১৪০জন মারা গেছে, ১৫০ জন আহত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে, ইরাকের সংসদ ভবনে সংঘটিত একটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তিন জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। সম্প্রতি ইরাকের সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পক্ষ কেউই প্রথমে অস্ত্র বর্জন করতে রাজি হয় না । ' আইন ও শৃংখলা' নামে বাগদাদের নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা চালু হওয়ার দু মাস পর সহিংস হালমলা কখনো বন্ধ হয়নি। কেবল সৈন্যের সংখ্যা বাড়ার মাধ্যমে ইরাকের সমস্যা নিষ্পত্তি করা যায়? ইরাকের নিরাপদ পরিবেশ কেমনভাবে পুনরুদ্ধা করা যায়? সে সব বিষয় নিয়ে রবার্ট গেটস এবং ইরাকের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা হবে।
দ্বিতীয়ত দু'মাসেরও বেশী সময় ধরে অনুসৃত বাগদাদের নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনার প্রতি তাঁর সমর্থন দেখানো রর্বাট গেটসের এবার সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য। গত ১৭ এপ্রিল জর্দান সফরের সময় রবার্ট গেটস সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ইরাক থেকে সৈন্য প্রহ্যাহারের সঠিক সময়সূচী প্রণয়নের বিরোধীতা করেন। তিনি বলেছেন, এটা একটি ভুল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেছেন, মার্কিন কংগ্রেস সৈন্য প্রত্যাহারের যে সময়সূচী নির্ধারন করেছে তাতে স্পষ্টভাবে ইরাকের কাছে একটি তথ্য পাঠানো হয়েছে । অন্যাথায় মার্কিন বাহিনীর সমর্থন সিমিত। যদি ইরাকের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আপোষ না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক সমর্থন বন্ধ করবে।
গত ১৭ এপ্রিল থেকে রবার্ট গেটস জর্দান, মিসর , ইসরাইল সফর করেছেন। জন্যমত অনুযায়ী, ইরাক সমস্যা এখনও রবার্ট গেটসের মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রধান বিষয়। ১৮ এপ্রিল কায়রোতে মিসরের প্রেসিডেন্ট মুবারকের সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর উদ্দেশ্যে ইরাক সরকারকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে।
|