বগুড়া জেলার শ্রোতা আব্দুল্লাহেল হাদী তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনে কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি আছে? সে সব সংখ্যালঘু জাতি চীনের কোন কোন জায়গায় বসবাস করে? উত্তরে বলছি, চীন একটি জাতিবহুল দেশ। চীনে ৫৬টি জাতি বাস করে। চীনের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। এর মধ্যে শতকরা ৯৪জন হান জাতিভুক্ত। হান জাতি ছাড়া আরও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতি আছে। সময়াভাবে আমি সকল জাতি সম্পর্কেবণর্না করতে পারব না। চীনের সব অঞ্চলেই হান জাতি বসবাস করে, তবে প্রধানত উত্তরপূবের হুয়াংহো নদী অববাহিকায়, ইয়াংসি নদী অববাহিকায় আর যুজিয়াং নদী অববাহিকায় এবং সোংলিয়াও সমভূমিতেই হানজাতি কেন্দ্রীভুত। সংখ্যালঘু জাতিগুলো তাদের শতশত বছরের বাসভুমি অনেকগুলো সুবিশাল অঞ্চলে বসবাস করে। আবার এমন নজিরও অনেক যে বিভিন্ন অনেক জাতি একত্রে মিলেমিশে , অথবা ব্যাপক দূরত্বে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সম্প্রদায় হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করে। অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের শতকরা সত্তরটি জেলায় ও শহরে দুই বা দুয়ের বেশি জাতি একত্রে মিশ্রিতভাবে বাস করে। সিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বাস করে তেরটি জাতি, ইয়ুন্নান প্রদেশে তেইশটি জাতি, আর সিশুয়াংবান্ন স্বাশাসিত বিভাগে দশটিও বেশি জাতির বসবাস। স্বাধীন ও সমান জাতিসমূহের একটি মহাপরিবারে চীনের সবকটি জাতি ঐক্যবদ্ধ। কোনো জাতির লোকসংখ্যা যাই হোক না কেন, অথবা যেখানেই তারা বসবাস করুক না কেন, প্রতিটি জাতিই অন্যসব জাতির সমকক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কামকর্মে সক্রিয় অংশ নেয়। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর অনেক প্রতিনিধি আছেন, চীনা কমিউনিষ্ট পাটিতে ও গণসরকারে আছেন সংখ্যালঘু জাতিভূক্ত নেতৃস্থানীয় ক্যাডারা। প্রতিটি জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোকে আর চাহিদাকে রাষ্ট্র পুরোপুরিভাবে বিবেচনার মধ্যে রাখে। রাষ্ট্র প্রতিটি জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখকরতে হবে যে, বিভিন্ন জাতির ভাষাগুলোকে সরকারীভাবে উত্সাহ দেওয়া হয় ও লালন করা হয়।
রাজশাহী জেলার শ্রোতা রাতু তরফদার তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি রেল লাই আছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চীনের রেলপথ সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। চীনের মাল-পরিবহণ ব্যবস্থায় রেলপথের গুরুত্ব খুব বেশী। দেশে মাল পরিবহণের মোট পরিমাণের শতকরা ৬০ ভাগ রেলযোগে সম্পন্ন হয়। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে চীনে প্রথম রেলপথ বসিয়েছিল ইংরেজরা ১৮৭৯ সালে। তখন থেকে মুক্তির বছর ১৯৪৯ সাল পযর্ন্ত এই ৭৩ বছরে মাত্র ২২ হাজার কিলোমিটার রেলপথ গড়ে উঠেছিল। এই রেলপথেরও প্রায় অধের্কই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল দীঘর্দিন ধরে দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মুক্তির সময়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী রেলপথ ছিল মাত্র ১১ হাজার কিলোমিটার। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পুরনো রেলপথগুলো মেরামত বা সংস্কার এবং অজস্র নতুন রেলপথ তৈরী করা হয়। বতর্মানে চীনের প্রতি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে রেলগাড়ীর চলাচল হয়েছে। গত বছর ছিনহাই-তিব্বত রেলপথ স্থাপিত হয়েছে। তার মানে সারা চীনে এমন যায়গা নেই যেখানে রেলগাড়ীতে যাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা চীনে রেলগাড়ীর গতি কয়েক বার বাড়ানো হয়েছে। যেমন ধরুন, বিশ বছর আগে পেইচিং থেকে সাংহাই যেতে প্রায় ২১ ঘন্টা লাগত । কিন্তু এখন মাত্র ১১ ঘন্টা। আগামী দশ বছরের মধ্যে পেইচিং থেকে সাংহাই যেতে মাত্র ৭ ঘন্টা লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেলগাড়ী চীনা মানুষের প্রধান যানবাহন। কোন জায়গায় গেলে রেলগাড়ীতে চড়া নিরাপদ মনে করা হয়।
|