v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-04-19 13:38:57    
লাওশে চা দোকান

cri

    চীনের একটি প্রবাদ আছে বেশ কয়েক কাপ সুন্দর মদ খেলেই বন্ধুতে পরিণত হওয়া যায় আর সেই সাথে এক কাপ সুগন্ধি চা খেলে মন হবে নেশায় মদির । চা সংস্কৃতি হচ্ছে চীনের সুউজ্জ্বল সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক সংস্কৃতির একটি অংশ । এখন তাহলে আমরা পেইচিংয়ের একটি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চা দোকানে গিয়ে চীনের চা সংস্কৃতির কথা বন্ধুদের জানিয়ে দেই ।

    পেইচিংয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত চা দোকানের অন্যতম লাওশে চা দোকানটিতে অতিথিগণ আসার সঙ্গে সঙ্গেই চীনা পাঞ্জাবী এবং চীনা টুপি পরা পরিবেশকরা পেইচিংয়ের আঞ্চলিক ভাষায় আন্তরিকতার সঙ্গে অতিথিদের স্বাগতম বলে অভ্যর্থনা জানায় । অতিথিরা পেইচিং-এর চা দোকানের পরিবেশকদেরকে "সিয়াও'আর" বলে ডাকেন । লাওশে চা দোকানের নাম চীনের বিখ্যাত লেখক লাওশের সম্মানে তার নামে নামকরণ করা হয়েছে । ৪০ বছর আগে লাওশে চীনের নাট্য ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত নাটক --চা দোকান নাটকটি লিখছিলেন । এ নাটকের মধ্য দিয়ে সে কালের পেইচিং-এর সমাজিক অবস্থার পুঙ্খানু পুঙ্খভাবে  ফুটে ওঠে । এর বহুদিন গত হয়ে গেছে । লাওশে'র নাটকে বর্ণনা অনুযায়ী সেই চা দোকান আর খুঁজে পাওয়া যায় না । তবে পেইচিং-এর লাওশে চা দোকানটিকে প্রাচীনকালের নাটকের মত করেই পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে । পর্যটকরা এখানে এলে এখন অনুভব করতে পারেন প্রাচীনকালের সুন্দর পরিবেশকে ।

    প্রাচীনকালে পেইচিং-এর অধিবাসীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় চা ছিল চামেলি চা । তা হল চামেলি ফুলের সুগন্ধ এবং সবুজ চা মিশিয়ে তৈরী এক ধরনের চা । এর রঙ পরিস্কার, সুগন্ধও খুব বেশি । আপনারা লাওশে চা দোকানে সেই ঐতিহ্যিক চামেলি চা খাওয়ার পাশাপাশি চা এবং ফুল দিয়ে তৈরী আর এক ধরনের বিশেষ চাও খেতে পারেন । পরিবেশকরা গ্লাসে গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে সামান্য চা পাতা ছড়িয়ে দেন , সঙ্গে সঙ্গে চা পাতার ভেতর থাকা ফুলগুলো আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে শুরু করে । খুব সুন্দর লাগে দেখতে । লাওশে চা দোকানের পরিচালক ইউ চিং বলেছেন, এ ধরনের চা হচ্ছে তাদের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চা, যা বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী করা হয়ে থাকে ।

    সাধারণত আমরা ১৬০টিরও বেশি ছোট চা পাতাকে সরু সুতো দিয়ে নানা ধরনের টাটকা ফুলের সঙ্গে বেধে নিই। এর মধ্যে রয়েছে চামেলি , ক্যামেলিয়া এবং লিলি ফুল । নিয়মিতভাবে এই ফুলের চা খেলে তা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে । বিশেষ করে নারীদের জন্য নানা ধরনের ফুল চামড়ার সৌন্দর্য্যকে মসৃণ ও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে । এখানে অতিথীরা চা খাওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করতে পারেন । প্রতিদিনই এখানে অনেক চমত্কার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় । যেমন চীনা অপেরা, দড়াবাজি, ছায়া পুতুল দ্বারা অভিনীত নাটক এবং চীনা কুংফু । অনুষ্ঠান দেখা ও চা পানের সময় আপনারা অবশ্যই চা দোকানের পরিবেশকদের বিশেষ কুংফু দেখে নেবেন । অন্যান্য চা দোকানের চেয়ে এ দোকানের পরিবেশকদের হাতের তাম্র চা পাত্রের মুখটি প্রায় ১ মিটার লম্বা । তারা সহজেই এ চা পাত্রের গরম পানি ভরে নিয়ে তা অতিথিদের পরিবেশন করে থাকে ।

     পরিবেশক স্যু তা ওয়েই বলেছেন, তা হচ্ছে প্রাচীনকালে পেইচিং-এর চা দোকানের ঐতিহ্য, এ ধরনের চা-এর পাত্রগুলো ভালভাবেই পানির তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে । লম্বা মুখওয়ালা চা পাত্র সাধারণত :গ্রীন টি মানে সবুজ চা খাওয়ার জন্যে ব্যবহার করা হয় । কারণ চা পাত্রে থাকা পানির তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড আর গ্রীন টি প্রস্তুতের জন্য তাপমাত্রা থাকতে হবে ৮০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ।৯০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের গরম পানি ১ মিটার লম্বা মুখের চা পাত্র থেকে কাপে ঢালার পর, পানির তাপমাত্রা সঠিকভাবে ৮০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হবে । এভাবে তৈরী চা আরো সুস্বাদু লাগে ।

      লম্বা মুখের চা পাত্র ছাড়া বড় পেয়ালার চা হচ্ছে প্রাচীনকালে পেইচিংয়ের চা দোকানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । বড় পেয়ালা চা হল বড় পেয়ালায় রাখা এক ধরনের সস্তা চা । লাওশে চা দোকান হচ্ছে বর্তমানে পেইচিংয়ের একমাত্রা বড় পেয়ালায় চা বিক্রি করা চা দোকান । জানা গেছে, লাওশে চা দোকানের প্রতিষ্ঠাতা ইন শেং সি সর্বপ্রথম ২ সেন্ট দামে বড় পেয়ালায় চা বিক্রির জন্য চা দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন । যদিও এ ধরনের বড় পেয়ালার চা-এ কোনো মুনাফা নেই, কিন্তু ইতিহাস মনে রাখার জন্য লাওশে চা দোকানে অব্যাহতভাবে এ ধরনের চা বিক্রি করেন এবং এর দাম মাত্র ২ সেন্ট ।