১৬ এপ্রিল চীনের জাতীয় স্বত্বাধিকার ব্যুরোর স্বত্বাধিকার বিভাগের প্রধান ওয়াং চি ছিয়ান বলেছেন , কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে চীনের মেধা স্বত্বের বিষয় নিয়ে যে মামলা দায়ের করেছে , তা' সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয় । কেননা যুক্তরাষ্ট্র চীন সরকারের মেধা স্বত্ব রক্ষার নিরলস প্রচেষ্টা ও এ ক্ষেত্রে অর্জিত সুফল উপেক্ষা করে এই মামলা দায়ের করেছে ।
গত সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্র চীনের মেধা স্বত্ব রক্ষা ও বইপত্র বাজারে প্রবেশের বিষয় নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে অভিযোগ তুলেছে । বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথমবার চীনের মেধা স্বত্ব বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে মামলা দায়ের করেছে । ১৬ এপ্রিল চীনের জাতীয় স্বত্বাধিকার ব্যুরোর দায়িত্বশীল ব্যক্তি ওয়াং চি ছিয়ান সি আর আই ও এ এফ পির সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে ওয়াং চি ছিয়ান বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র যে মেধা স্বত্বের বিষয় নিয়ে ডাব্লিও টি ওর কাছে অভিযোগ তুলেছে , তা' সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয় । মেধা স্বত্ব রক্ষা ক্ষেত্রে চীন সরকারের অবস্থান ও প্রচেষ্টা সর্বজনবিদিত । অবশ্য আমরা এ কথাও স্বীকার করি যে মেধা স্বত্ব রক্ষা ক্ষেত্রে অবস্থা আশানুরুপ হয় নি । কিন্তু মেধা স্বত্ব রক্ষা ক্ষেত্রে এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে বলে এ ধরনের চরমপন্থী ব্যবস্থা নেয়া উচিত নয় । এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার দরুন এ ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতার পথ বন্ধ হয়েছে ।
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন , বহু বছর ধরে মেধা স্বত্ব রক্ষা ক্ষেত্রে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনেক বার মতবিনিময় ও বৈঠক হয়েছে । এবার যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে মতবিনিময় না করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে যে সরাসরি অভিযোগ তুলেছে , তা' ২০ মে অনুষ্ঠিতব্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনীতির কৌশলগত সংলাপে প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে ।
ওয়াং চি ছিয়ান আরো বলেছেন , চীন সরকার বরাবরই মেধা স্বত্ব রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে । এ মাসের প্রথম দিকে চীনের সর্বোচ্চ আদালত ও সর্বোচ্চ অভিশংসক বিভাগ মিলিতভাবে মেধা স্বত্ব লংঘন মামলা নিষ্পত্তির নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে । ১৪ এপ্রিল চীনের বিভিন্ন স্থান মোট চার কোটি ২০ লাখ নকল ভি সি ডি ও অবৈধ বইপত্র জোগাড় করে ধ্বংস করেছে ।
চীন সরকার মেধা স্বত্ব লংঘনকারীদের শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি অভিযোগকারীদের পুরষ্কার প্রদানেরব্যবস্থাও নিয়েছে । তাদের সাহায্যে চীনে মোট ২৩০টি বেআইনী সিডি উত্পাদন লাইন ধ্বংস করা হয়েছে । ১৯৯৬ সাল থেকে চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অভিযোগকারীদের মোট আট কোটি ইউয়ান পুরষ্কার দিয়েছে ।
ওয়াং চি ছিয়ান জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন , নিজ দেশের উন্নয়নের জন্য চীন মেধা স্বত্ব রক্ষার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । তিনি বলেছেন , চীন সরকার বার বার ঘোষনা করেছে যে অন্য দেশের চাপে নয় বরং নিজের উন্নয়নের চাহিদা মেটানোর জন্যই চীন মেধা স্বত্ব রক্ষাকে যথেষ্টগুরুত্ব দিচ্ছে । নতুন শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে মেধা স্বত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ।
ওয়াং চি ছিয়ান বলেছেন , বিদেশীদের মেধা স্বত্ব রক্ষা ক্ষেত্রে চীন নিজের নীতি অনুসরণ করে আসছে । ২০০৬ সালের শেষ দিক থেকে ২০০৭ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত ইন্টারনেটের মেধা স্বত্ব লংঘনকারী মামলার মধ্যে মোট ১৩০টি মামলা বিদেশের মেধা স্বত্ব সম্পর্কিত । এখন প্রায় ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে । এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিদেশের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। শুধু অভিযোগগ করা সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে না ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৬০ দিনে এ বিষয় নিয়ে আলাপ পরামর্শ ও মতবিনিময় করতে পারেন । দু মাসের মধ্যে একমত না হলে বিশেষজ্ঞরা সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবেন । চীন এখন এ সমস্যা সমাধানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
|