v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-04-13 17:20:55    
লিউ ছিংচি ও তার আটজন বাবা মা

cri
    লিউ ছিংচির ৪৬ বছর বয়সী স্বামী হঠাত তাকে একাকী করে দিয়ে মারা যান । সংসারের বোঝা তার ওপরে পড়ে । ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলা এবং বৃদ্ধ বাবা মা ও শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে দেখাশুনা করার বোঝা তার ওপর পড়ে । সংসারের কষ্ট ও অসুবিধার সামনে লিউ ছিংচি নতিস্বীকার করেনি ।বুড়োদের সম্মান করা এবং ছোটোদের ভালবাসা সহ চীনাজাতির সকল গুণ তার কাছে পাওয়া যায় ।

    লিউ ছিংচির বাবা তিনজন ভাইর মধ্যে জ্যেষ্ঠ । বহু বছর আগে লিউ ছিংচির দুই চাচার বিয়ে হয়েছে বটে । কিন্তু নানা কারণে দুজন চাচার একজনেরও কোনো সন্তান হয়নি । তাই ছিংচি লিউ পরিবারের একমাত্র সন্তান এবং স্বাভাবিক ছিংচি বাবা মা , চাচা চাচি সহ লিউ পরিবারের ৬জন বৃদ্ধবৃদ্ধার হাতের মুক্তো হয়েছে ।

    ৬জন বাবামার ভালবাসায় ছিংচি সবসময় নতুন কাপড়চোপড় পরে । সবসময় ভাল খাবার খায় । ৬জন বাবামার লালনপালনে ছিংচি বড় হয়ে ওঠে । অভিভাবকরা তাদের আদরের ছিংচির বিবাহ বিষয় নিয়ে চিন্তা শুরু করেন । তারা বাড়িতে এক জামাইকে আনার সিদ্ধান্ত নেন । ১৯৮১ সালে নিজের ৬ বাবামার ইচ্ছানুযায়ী ছিংচিকে নিকটবর্তীর গ্রামের ইউয়ান মুফিং নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয় । বিয়ের পর যুবক স্বামী-স্ত্রী বাড়ির এক হেক্টরেরও বেশি কৃষি জমি চাষ করে সংসার চালায় । তাদের পরিশ্রমে বাবা মা , চাচা চাচি , শ্বশুড় শ্বাশুড়ি সহ বাড়ির ৮জন বৃদ্ধবৃদ্ধা সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করে । বাবা মা হোক , চাচা চাচী হোক অথবা শ্বশুড় শ্বাশুড়ি হোক তাদেরকে সমানভাবে সম্মান করা লিউ ছিংচি ও তার স্বামী ইউয়ান মুফিংয়ের অনুসৃত নীতি ।

    কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই চিহ্নিত হল যে , ছিংচির মেজ চাচা পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন । এই সময় ছিংচির পারিবারিক অবস্থা তেমন স্বছল নয় । তাই চাচার রোগের চিকিত্সার জন্য ছিংচি ও মুফিং সবার কাছ থেকে টাকাপয়সা ধার করে এবং বাড়ির একমাত্র মূল্যবান জিনিস গরু বিক্রি করে দেয় ।

    গরু বিক্রির পর জমি চাষ বাদ দেয়া যাবে না । বাধ্য হয়ে তারা অন্য লোকের কাছ থেকে গরু ধার করে জমি চাষ করতো । গরু ধার করতে না পারলে ছিংচি নিজেই লাঙ্গল টেনে জমি চাষ করতো । ছিংচি ও মুফিং দুজনে মনোযোগের সঙ্গে সেবা করলেও মেজ চাচাকে বাঁচতে পারল না । ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ছিংচি ও মুফিং স্বামী-স্ত্রী দুজন পরপর ছিংচির বাবা সহ ৫জন বৃদ্ধবৃদ্ধাকে বিদায় করেছে । বৃদ্ধবৃদ্ধারা যাওয়ার সময় রেখে যাওয়া ১৮ হাজার ইউয়ান ঋণ তাদেরকে পরিশোধ করতে হবে । জামাই হিসেবে ইউয়ান মুফিং বাধ্য হয়ে কৃষি কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিকটবর্তী গ্রামের কারখানায় মজুরী করতে যায় এবং বসন্তকালেজমি চাষের সময় স্ত্রীকে সাহায্য করতে গ্রামে ফিরে আসে । ২০০১ সালের ৩০ জুলাই সকালে যখন মুফিং ক্ষেতে ধানের চারা রোপণ করছিল তখন "বাচাও বাচাও" চিত্কারের আওয়াজ শুনতে পেলো । কূপে সাদা পিপড়া নিধনরত গ্রামবাসীদের বাঁচানোর জন্যে মুফিং প্রাণ হারান । ২০০১ সালের ১৯ নভেম্বর চীন সরকার মুফিংকে বৈপ্লবিক শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে । ২৫ বছর ধরে সুখে-দুঃখে জড়িত স্বামী মারার সময় একটি কথাও বলেনি । সে হঠাত করেই স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যায়। সে স্ত্রী ছিংচিকে শুধু অশেষ স্মৃতি এবং স্ত্রীর দেখাশোনা দরকার এমন তিনজন বৃদ্ধবৃদ্ধাকে রেখে গেছে । মার বাড়ি থেকে শ্বাশুড়ির বাড়িতে আসা যাওয়া করে মা ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে দেখাশুনা করতে ছিংচি আর সক্ষম নয় বলে সে বাধ্য হয়ে নিজের ৮৫ বছর বয়সী মাকে শ্বাশুড়ির বাড়িতে নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী মুফিং মারা যাওয়ার পর শহরে মজুরী করা মেজ ছেলে ইউয়ান সিয়াংখুন মাকে সাহায্য করার জন্যে শহরের কাজ ছেড়ে সিয়াওছাং জেলার ইয়ুহুয়া গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে । ২০০২ সালের গরমকালের একদিন ধান কাটার কাজ শেষ হওয়ার পর সিয়াংখুন ও ছোটো ভাই দুজন গ্রামের এক পুকুরে গোসল করতে যায় । অসাবধানে পানিতে পড়েমেজ ছেলে মারা যায় । ছিংচি সবেমাত্র স্বামীকে হারিয়েছে আবার এখন মেজ ছেলেকে হারিয়েছে। ছিংচির উপর এটা যেন মরার উপর খাড়ার ঘা-এর মত। কিন্তু মা , শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ি তিনজন বুড়ো মানুষকে তার লালনপালন করা দরকার । তাই ছিংচিকে তিনজন বুড়ো মানুষের সামনে নিজের দুঃখ-দুর্দশা ঢেকে হাসি মুখের ভান করতে হবে ।

    খুশির ব্যাপার হল এই যে , ছিংচির সন্তানরা অত্যন্ত ভাল সন্তান । তারা মা'র ভবিষ্যতের আশা । বড় ছেলে সেনাবাহিনীতে ছিল, এখন সে এক সাংহাই শহরের এক বড় কোম্পানিতে রক্ষীরকাজ করে । ছোটো ছেলে হুপেইর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । তার মেয়ে জেলার এক উত্তম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করছে । ছিংচি বুড়ো মানুষকে যেভাবে সম্মান করে থাকে তা দেখে ছেলেমেয়েরা মুগ্ধ হয় এবং তা অনুসরণ করে নিজের মা , নানা নানী ও দাদা দাদীকে সম্মানকরছে । যদিও ছিংচির আর্থিক অবস্থা এখনো তেমন ভাল নয় এবং তাদের দৈনন্দিন জীবন তেমন স্বচ্ছল নয়, তবুও তারা খুশীতে জীবনযাপন করে । তারা বিশ্বাস করে , তাদের জীবন একদিন না একদিন উন্নত হবেই ।