আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থার মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল বারাদেই ১৪ মার্চ উত্তর কোরিয়ায় তার সফর শেষে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থায় উত্তর কোরিয়ার আবার ফিরে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এদিন মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে তার আর্থিক শাস্তি আরোপ তুলে নিয়েছে । এ থেকে বুঝা যায় যে, কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন পক্ষ তাদের নিজ নিজ প্রতিশ্রুতি মেনে চলার পাশা পাশি পারস্পরিক ক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করবে।
১৪ মার্চ বারাদেই উত্তর কোরিয়ায় তার দু'দিনব্যাপী সফর শেষ করেছেন। তিনি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এবারের সফর ছিল খুবই ইতিবাচক। যার ফলে আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থা ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিকায়নের দিক উন্মোচিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। একই সঙ্গে ইয়ংবিয়োংয়ের পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, উত্তর কোরিয়া সার্বিকভাবে পারমাণবিক গবেষণা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি মেনে চলার কথা প্রকাশ করেছে। তবে এর জন্য এখনই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত উত্তর কোরিয়ার আর্থিক শাস্তি প্রত্যাহার করা।
এদিন মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় উত্তর কোরিয়াকে তাদের ম্যাকাও ব্যাংকো ডেল্টা এশিয়া (এস.এ.আর.এল)-এর মাধ্যমে দেড় বছর তদন্তের কাজ শেষ করার কথা ঘোষণা করেছে। এই ম্যাকাও ব্যাংকো ডেল্টা এশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার অর্থ জমা থাকে, তার সঙ্গে মার্কিন আথিক সংস্থা আর সম্পর্ক রাখবে না। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার আর্থিক শাস্তি বাতিল করার বিষয়টি বিবেচন করেছে। জনমত মনে করে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত পঞ্চম দফার ছ'পক্ষীয় বৈঠকের তৃতীয় পর্যায়ের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের প্রধান ক্রিস্টোফার হিল প্রতিশ্রুতি দেয়ার এক মাসের মধ্যে , মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা প্রকাশ করেছে। সেসময় হিল বলেছিলেন , এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়াকে ৩০ দিনের মধ্যেই আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার আর্থিক শাস্তি বাতিল করায় উত্তর কোরিয়াকে এ প্রতিশ্রুতি মেনে চলার শুরুতেই একটি উপযুক্ত সুযোগ পেয়েছে। উত্তর কোরিয়া এ পর্যন্ত এর ওপর তার কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
২০০৫ সালের অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে " জাল মার্কিন ডলার" এবং " মানি লন্ডারিং"সহ ধারাবাহিক কারণে ম্যাকাও ব্যাংকো ডেল্টা এশিয়ার মোট ২.৪ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থ আটক করেছে। এর জন্য উত্তর কোরিয়া ছ'পক্ষীয় বৈঠকের অংশগ্রহণ থেকে ১৩ মাস দূরে থেকেছে । উত্তর কোরিয়া মনে করে, এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর কোরিয়ার প্রতি বৈরিতা । উত্তর কোরিয়ার আর্থিক শাস্তি যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করেছে , সেই বিষয় নিয়ে উত্তর কোরিয়া ছ'পক্ষীয় বৈঠকে ফিরে আসা ও পারমাণবিক স্থাপনা প্রত্যাহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জনমত অনুযায়ী , পঞ্চম দফার ছ'পক্ষীয় বৈঠকের তৃতীয় পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের পর, উত্তর কোরিয়া সক্রিয়ভাবে শুরুতেই তার কার্যকলাপ বাস্তবায়নের পাশা পাশি আরও ধারাবাহিকভাবে কূটনৈতিক অভিযান শুরু করেছে। সর্বশেষ ব্যবস্থা হলো আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থার সঙ্গে ৪ বছরের বিছিন্ন সম্পর্ক আবার শুরু করা। যার ফলে তার আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থায় আবার ফিরে আসার ইচ্ছার কথাই প্রকাশিত হয়েছে। এটি উত্তর কোরিয়াকে আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধান ও পরীক্ষা করার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিবেচিত হয়েছে। এ নতুন বিষয়ের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ছ'পক্ষীয় বৈঠকের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিল বলেছেন, পিয়ং ইয়ংয়ে বারাদেইর সফর হলো একটি ইতিবাচক দিক।
একই সঙ্গে সংবাদ-মাধ্যমও উল্লেখ্য করেছে যে, পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বারাদেই ইয়ংবিয়োংয়ের পারমাণবিক স্থাপনা কখনও বন্ধ করার কথা বলেনি এবং আন্তর্জাতিক আণবিকশক্তি সংস্থার পারমাণবিক পরীক্ষা সংক্রান্ত কর্মীরা কবে উত্তর কোরিয়ায় ফিরে আসবেন সে কথাও ব্যাখ্যা করেননি। উত্তর কোরিয়ার ইয়ংবিয়োংয়ের পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করা হলেও তার এ ব্যাপারে নেয়া প্রথম পদক্ষেপ। বারাদেই বলেছেন, কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক অস্ত্রমুক্তকরণের প্রক্রিয়া খুবই জটিল ।এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের উচিত অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালানো।
|