চীনের লোকসংখ্যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। লোকসংখ্যা, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের লক্ষে চীন সরকার অনেক ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। উল্লেখ্য, এসব নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে চীন সরকার বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞদের মতামতের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চীনের লোকসংখ্যা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত এক বিদগ্ধ পরামর্শ সম্মেলনে চীনের সামাজিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রসহ গবেষণা বিষয়ক সংস্থার বিশেষজ্ঞ এবং পন্ডিতগণ চলমান অনেক সমস্যার ওপর মত বিনিময় করেছেন।
গত শতাব্দীর ৭০ দশক থেকে চীনে পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা চালু হয়। এ নীতি বাস্তবায়নের ৩০ বছরে চীনের প্রসবহার অব্যাহত কমে গেছে। যার ফলে ০.৪ বিলিয়ন সন্তান কম জন্ম হয়েছে । সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, এসব সাফল্য অর্জন খুব বেশি সহজ নয়। বর্তমানে আমাদের উচিত অবিরাম এ পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা উন্নতর জন্য প্রচেষ্টা চালানো । চীনের সামাজিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রের লোকসংখ্যা বিষয়ক বিভাগের গবেষক থিয়ান সুয়ে ইয়ান বলেছেন," কেন বর্তমানে উপস্থাপিত লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে? চীনের লোকসংখ্যা সমস্যার মৌলিক বিষয় হলো লোকসংখ্যা বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করা । কারণ উদ্বৃত্ত শ্রম-শক্তিতে সমস্যা থাকে।"
অনেক উন্নত দেশেই তাদের লোকসংখ্যার সমস্যা হলো উত্পাদনশক্তিতে লোকসংখ্যার চাহিদা অর্থাত্ এক কথায় শ্রম-শক্তির অভাব। এর বিপরীতে চীনে গত ৩০ বছর ধরে প্রসবহার অনেক বেশি হয়েছে। তাই লোকসংখ্যার দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে চীনে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেন্জের মধ্যে অন্যতম।
বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, বর্তমানে চীনের প্রসবহার কিছুটা ত্রাস পেয়েছে। একে স্থিতিশীল রাখা খুবই প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে " যত নিচে থাকা সম্ভব ততই ভাল।" এমন ধরণের কথাও ঠিক নয়। প্রসবহার বেশি কমে গেলে, চীনে লোকসংখ্যার বয়োবৃদ্ধি সমস্যার জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এর ফলে জনগণের গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশি ঝামেলা দেখা দেবে। এসব দিক সমাজ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুর্বল প্রভাব ফেলবে । চীনের সামাজিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রের লোকসংখ্যা বিষয়ক বিভাগের গবেষক থিয়ান সুয়ে ইয়ান বলেছেন," আমার মনে হয় যে, এ ব্যাপারে আমরা বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী, দেশের পরিবার পরিকল্পনাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"
অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞগণ বর্তমানে চীনা লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রের কিছু কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বয়োবৃদ্ধি সমস্যার ব্যাপারে চীনের জনগণ বিশ্বিবিদ্যালয়ের লোকসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান উ ছাং ফিং বলেছেন, ২০২০ সালে চীনে ৬৫ বছরের বেশি এমন বয়সীদের সংখ্যা হবে মোট ১৬.৪ কোটি। যা মোট লোকসংখ্যার ১১.২ শতাংশে দাঁড়াবে। এ শব্দাতীর ৪০ দশকের শেষ দিক হচ্ছে বয়োবৃদ্ধি সমস্যার ব্যস্ততম সময়। তখন প্রত্যেক ৩ বা ৪ জনের মধ্যে কমপক্ষে ১ জন বুড়ো-বুড়ি থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। লোকসংখ্যার বুয়োবৃদ্ধি সমস্যার জন্য চীনের সামাজিক সুনিশ্চিয়তা সিস্টেম ও গণ-পরিসেবা সিস্টেম ক্ষেত্রে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
চীনের লোকসংখ্যা ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা খুবই মন দিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় লোকসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমিটির উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগের প্রধান ছেন লি সিয়ান বলেছেন, এ পর্যন্ত, চীনের লোকসংখ্যা ক্ষেত্রে মোট তিন পর্যায় রয়েছে । তিনি বলেন:" প্রথম পর্যায় হলো প্রসবহার কমিয়ে দেয়া। দ্বিতীয় পর্যায় হলো প্রথম পর্যায়কে স্থিতিশীলভাবে রাখা । আর তৃতীয় পর্যায়হচ্ছে , আমাদের দায়িত্ব নিয়ে বিবিধভাবে লোকসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা। জনগণের গুণগত মান উন্নত করার মাধ্যমেই লোকসংখ্যার কাঠামো উন্নয়ন করা যায়। এর ফলে চীন একটি বৃহত্তম লোকসংখ্যার দেশ হিসেবে জনশক্তিকে কাজে লাগানো দেশে পরিণত হবে।"
চীনের লোকসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমিটির প্রধান চাং ওয়েই ছিং বলেছেন, বুয়োবৃদ্ধি সমস্যায় চীন সরকার এর ওপর অনেক গুরুত্ব আরোপ করেছে। যাতে যথযথভাবে আনুষংগিক ব্যবস্থা নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
|