v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-04-06 19:35:42    
চীনে কৃষকদের শরীর চর্চা কর্মসুচী

cri

    পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের তেন ইয়াং শহরের তাও শি থানার লি চুয়াং গ্রামের কৃষক ফেং চিন চুং'র বয়স ৭৫ । তিনি কৃষকদের একটি বাস্কেটবল দলের সদস্য হিসেবে চীনা গণ মুক্তি বাহিনীর প্রয়াত বিখ্যাত জেনারেল স্যু শি ইউ'র সঙ্গে বাস্কেটবল খেলেছিলেন । বৃদ্ধটি বয়স্ক হয়েছেন । কিন্তু তিনি এখনো বাস্কেটবল খেলা পছন্দ করেন । তিনি বলেন , তার বয়স হয়েছে , বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অক্ষম । কিন্তু তিনি অল্পবয়সীদের বাস্কেটবল খেলা দেখতে খুব পছন্দ করেন । গ্রামাঞ্চলে এই সব স্বাভাবিক আমোদ প্রমোদ না থাকলে জুয়াসহ নানা ধরনের খারাপ রীতি-নীতি চালু হতে পারে ।

   কৃষকদের সচ্ছলতা ছাড়া চীনে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা অসম্ভব । কৃষকদের শরীর চর্চা না চালালে প্রকৃত গণ স্বাস্থ্যও অর্জিত হবে না । অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে চিয়াংসু প্রদেশ চীন দেশের প্রথম সারিতে রয়েছে । এ প্রদেশ কৃষকদের শরীর চর্চার ওপর খুব গুরুত্ব দেয় । ২০০৬ সালে চিয়াংসু প্রদেশের ৭২৯৫টি গ্রামে শরীর চর্চার জন্য ব্যবহার্য ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম গড়ে তোলা হয়েছে । এই সংখ্যা আগের ৮ বছরে এই প্রদেশে নির্মিত শরীর চর্চার জন্য ব্যবহার্য ব্যবস্থার মোট সংখ্যার চেয়েও বেশি এবং তা রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর উদ্যোগে দেশের ৩১টি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে নির্মিত শরীর চর্চা ব্যবস্থার মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ।

    চিয়াংসু প্রদেশের বিভিন্ন স্তরের ক্রীড়া অনুশীলন বিভাগের পক্ষে ২০০৬ সাল একটি গ্রামীণ বর্ষ বলা যায় । ক্রীড়া অনুশীলনের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের ওপর ব্যাপক মনোযোগ দেয়া হয়েছে । এর আগে এই প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে শরীর চর্চা ব্যবস্থা খুব পিছিয়ে ছিল । চীনের ক্রীড়া অনুশীলনের ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম বিষয়ক পঞ্চম জাতীয় জরীপ থেকে জানা গেছে , এই প্রদেশের গ্রামীণ খেলার মাঠ শুধু সমগ্র প্রদেশের আনুষ্ঠানিক খেলার মাঠের মোট সংখ্যার ৪.২ শতাংশ ছিল । অনানুষ্ঠানিক খেলার মাঠও শুধু সমগ্র প্রদেশের মোট সংখ্যার ৮.৪ শতাংশের । গ্রামীণ মাথাপিছু খেলার মাঠের আয়তন শহরের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল । ২০০৫ সালে চিয়াংসু প্রদেশের নাগরিকদের শরীর তত্ত্বাবধান ও জরীপ বিষয়ক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে , ২০০০ সালের তুলনায় শহরবাসীদের শরীর ভাল হয়েছে । কিন্তু কৃষকদের শরীর কিছুটা দুর্বল হয়েছে ।

    লিয়ান ইয়্যুন কাং শহরের কান ইয়্যু জেলার ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী , সমগ্র জেলায় শুধু জেলা শহরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল আর ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোতে বাস্কেটবল ও টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থা আছে । অন্যান্য জায়গায় কোন আনুষ্ঠানিক বাস্কেটবল খেলার মাঠও নেই । এই প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে কুনসেন শহর এগিয়ে আছে । কিন্তু গ্রামীণ শরীর চর্চা ব্যবস্থা খুব অনুন্নত ছিল ।

    চিয়াংসু প্রদেশের ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর মহাপরিচালক লি ই নিন বলেছেন , আগে কৃষকদের অন্ন-বস্ত্র সমস্যা ছিল , ক্রীড়া অনুশীলন তো দূরের কথা । এখন গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নত হয়েছে । ক্রীড়া অনুশীলন তাদের বাদ দেয়া উচিত নয় ।

    চিয়াংসু প্রদেশ গ্রামাঞ্চলের ক্রীড়া অনুশীলনের জন্য উপযোগী একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রামীণ শরীর চর্চা প্রকল্প গড়ে তোলার কার্যক্রম প্রণয়ন করেছে । গ্রামাঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় শরীর চর্চা প্রকল্পের মধ্যে একটি বাস্কেটবল খেলার মাঠ , একটি আমোদ প্রমোদ কক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত । এটাও চিয়াংসু প্রদেশে গ্রামীণ শরীর চর্চা প্রকল্প উন্নয়নের মূল কাঠামো । কৃষকদের খেলার চাহিদা মেটানোর জন্য বেশ কিছু অঞ্চলে গেটবল্ ও শরীর চর্চা কেন্দ্রসহ নানা রকম ক্রীড়া ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে ।

    গ্রামীণ ক্রীড়া ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর বহু শহর ও জেলার নেতৃবৃন্দ খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন । এই প্রকল্প গড়ে তুলতে হলে অর্থ বরাদ্দের সমস্যা নিষ্পত্তি করতে হবে। এই ক্ষেত্রে কৃষকদের ওপর কোন ভার দিতে হবে না । চিয়াংসু প্রাদেশিক ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর কর্মকর্তারা দু' মাসেরও বেশি সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছেন। পরিদর্শনকালে তারা কৃষকদের জীবনযাত্রা ও শরীর চর্চার চাহিদার খোঁজখবর নিয়েছেন ।

লু তুং জেলার সিন তিয়ান থানায় অর্থের অভাব ছিল । বহ গ্রামে শরীর চর্চা প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছিল না । খুশির ব্যাপার এই যে , থানার সাহিত্য ও ক্রীড়া অনুশীলন কেন্দ্রের প্রধান সুং থিয়ান হাও'র হাতের লেখা খুবই সুন্দর । তিনি থানার কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য হস্তলিপি লেখার মাধ্যমে যে আয় করেছেন , তার ওপর নির্ভর করে ৮টি গ্রামে ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে ।

     চিং চিয়াং শহরের ভাইস মেয়র ফাং মিন শহরের ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর কর্মীদের কাজকর্মের ওপর খুব মনোযোগ দিয়েছেন । এক দিন তিনি একটি গ্রাম পরিদর্শন করতে যান । বৃষ্টি পড়ছিল । সড়কের একটি অংশ নষ্ট হল । গ্রামে ঘুরে না দেখার জন্য কর্মীরা তাকে পরামর্শ দেন । তিনি হেঁটে চলে গ্রামে পৌঁছলেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখার জন্য মাঝে মাঝে একটানা কয়েক দিন লাগতো ।

     লুকাও শহরের ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর উপ-পরিচালক চৌ ছিয়াং বলেছেন , গ্রামীণ ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলা এবং অর্থ বরাদ্দ লাভের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালানো দরকার । ক্রীড়া অনুশীলন ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের কাজ কৃষকদের সমর্থন ও স্বীকৃতি পাওয়া প্রয়োজন । নইলে সুফল পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য ।

   চিংথাই শহরের ক্রীড়া অনুশীলন ব্যুরোর পরিচালক চু স্যুয়াং হো বলেছেন , তাদের জেলার গ্রামাঞ্চলে ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য কৃষকদের কোন হয় নি । কৃষকদের স্বেচ্ছায় পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে পরিবেশ সংস্কার করা হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে । এতে যেমন গ্রামের পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়েছে , তেমনি শরীর চর্চার জন্য ব্যবহার্য ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে ।

    গ্রামাঞ্চলে ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলার পর চাংথাই শহরের পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকরা খুব খুশি হয়েছেন । তারা শরীর চর্চা করার পাশাপাশি স্বেচ্ছায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন । গ্রামবাসীরা বলেছেন , পাহাড়ী এলাকায় ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলা খুব দুর্লভ । তার ওপর মূল্য দিতে হবে ।

    ২০০৭ সালের শেষ নাগাদ চিয়াংসু প্রদেশের গ্রামে গ্রামে ক্রীড়া অনুশীলন প্রকল্প গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে । তখন বিপুল সংখ্যক কৃষক শরীর চর্চা অভিয়ানে অংশ গ্রহন করবেন ।