v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-30 21:01:31    
দত্তক মেয়ে ও তার পালিত বাবা

cri
    চীনের হুপেই প্রদেশের সিয়েনথাও শহরের ফানকুয়ান মাধ্যমিক স্কুলে ছেন চিংতাও নামে এক যুবতী শিক্ষক আছেন । বয়স মাত্র ২৩ বছর হলেও তার বিশেষ অভিজ্ঞতা অনেক বেশী । ছোটোবেলায় তার বাবামা মারা গেছেন । তার পালিত বাবা তাকে মানুষ করে তুলেছেন । পালিত বাবার সাহায্যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় । গ্রামের শিক্ষক হওয়া তার একান্ত ইচ্ছা । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে সে পালিত বাবাকে সঙ্গে নিয়ে দরিদ্র গ্রামে ফিরে যায় ।

    ২৩ বছর আগের এক গ্রীষ্মকালের একদিন হুপেই প্রদেশের সিয়েনথাও শহরের কোহৌ থানার ইয়ে জি গ্রামে এক জন মহিলা যিনি মাত্র কয়েক মাস আগে মা হয়েছেন তিনি মারা যান । দুঃখ- বেদনা এবং সংসারের ভারী বোঝায় তার স্বামী পাগল হয়ে যায় । তখন তাদের মাত্র ৮ মাসের মেয়ে ভীষণ অসুস্থ । মেয়েটির বেদনাভূক্ত চাচা ছেন ইউছাই মুমুর্ষূ ভাগ্নীকেনিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং তাকে ছেন চিংতাও নামটি দেন । কিন্তু ছেন ইউছাইর স্ত্রী স্বামীকে বোঝেন না । অবশেষে তারা দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় । এ দিন থেকে চাচা ছেন ইউছাই নিজের ভালবাসা ও অনুভূতি সবই অসুস্থ চিংতাওকে দেন । আনন্দের বিষয় হল যে , চাচার মনোযোগের দেখাশোনায় চিংতাওয়ের অবস্থা দিনদিন ভাল হয়ে ওঠে । সময় তাড়াতাড়ি পার হয় । চিংতাও বড় হয়ে ওঠে এবং স্কুলে ভর্তি হয় ।

    যাতে ছেন চিংতাও স্কুলে ভর্তি হতে পারে তার জন্যে ছেন ইউছাই চিংতাওকে নিয়ে মজুরী করতে বাড়ি ত্যাগ করেন । তারা বাড়ি থেকে ১০০ কিলোমিটার দুরের সাইয়াং জেলায় আসেন । তিনি রাস্তার এক কোণে সানগ্লাস বিক্রি করেন এবং দিনে ৩০ ইউয়ান উপার্জন করেন । এই ৩০ ইউয়ান দিয়ে ছেন ইউছাই সংসার এবং চিংতাওয়ের স্কুলেরফি চালান । ছেন ইউ ছাই প্রত্যেক দিন বাজার থেকে সবচেয়ে সস্তা সব্জি কিনে বাসায় ফিরে আসেন । সাধারণত সকালে তিনি কিছু নূডলস খেয়ে বাইরে যান । দুপুরে তিনি খান না আর রাতে পাতলা পাতলা ফেনাভাত খান ।

    দরিদ্র জীবনে চিংতাও ছোটো বেলা থেকেই সাশ্রয়ের সঙ্গে জীবনযাপন করেছে। গরিব হলেও চিংতাও ও তার বাবা দুজনই সুখশান্তিতে জীবনযাপন করে । চিংতাও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয় । এক দিন স্কুল থেকে ফিরে এসে চিংতাও গম্ভীরভাবে বাবাকে বলে, আমাদের একই জায়গার এক চাচি আমাকে বলেছেন , আপনি আমার আপন বাবা নন । এই চাচির কথা শুনে আমি বিশ্বাস করি না । তবে তিনি কেন আমাকে এই কথা বলেন । আমি এই ব্যাপারে সত্য কথা জানতে চাই । ছেন ইউছাইয়ের খুব দ্বন্দ্ব হয় । কিন্তু অবশেষে তিনি মেয়েকে সব কিছু খুলে বললেন । বাবার কথা শুনে চিংতাও বাবার কাছ থেকে দূরে থাকেনি , বরং আগের চাইতে বাবাকে আরও বেশি ভালবাসল ।

    চিংতাও পালিত বাবার আশা বিফল করে না । সে ক্লান্তিকেউপেক্ষা করে মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করে । কয়েক বছর পর সে ভাল ফল নিয়ে মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হয় এবং ২০০১ সালের গ্রীষ্মকালে হুয়াংসি শহরে অবস্থিত হুপেই শিক্ষক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয় । এ জন্যে বাবা ও মেয়ে দুজন খুশিতে নিমজ্জিত হয় । কিন্তু কয়েক দিন পর তাদের মনে হল যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে তাদের সামনে এক বিরাট কঠিন সমস্যা রয়েছে । সমস্যাটি হল চিংতাওয়ের ১৪হাজার ইউয়ান ফি লাগবে । ছেন ইউছাই যিনি কখনো অসুবিধার সামনে নতস্বীকার করেননি সেই রাতে তিনি দুঃখদুর্দশায় কেঁদে ফেললেন । যখন বাবা ও মেয়ে অসহায় হচ্ছিল তখন একটি টেলিফোন নম্বর তাদের আশার আলো দেখাল । অর্থাত এই নম্বরের মাধ্যমে তারা ব্যাংক থেকে পড়াশুনার ঋণ নিতে পারবে । ছেন ইউছাই চিংতাওকে নিয়ে সিয়েনথাও শহরের প্রশাসন বিভাগের কাছে ঋণ নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন । অবশেষে তারা ১০হাজার ইউয়ান ঋণ পেয়েছে ।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শীত্কালীন ছুটির এক দিন যখন চিংতাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে আসে তখন সে বিষ্মিত হল যে ,বাবা মাটিতে বসে বরফে জমাট পানি খাচ্ছে । দীর্ঘকাল ধরে অত্যন্ত ভারী শারিরীক পরিশ্রমের কারণে অনেক আগেই ছেন ইউছাইর গুরুতর বাত ও কোমর ব্যথা হয়েছে। সময়চিতভাবে চিকিত্সা না করার কারণে তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত । প্রথম দু'মাসে ছেন ইউছাই নিজের অবস্থা ঢেকে রাখার চেষ্টা করায় চিংতাও বাবার আসল অবস্থা কিছুই বুঝতে পারেনি । বাবার গুরুতর অবস্থা দেখে চিংতাওয়ের দুঃখ হয় এবং স্কুল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু চিংতাও ভাবতে পারেনি, তার এই সিদ্ধান্তে বাবার এত রাগ হতে পারে । বাবা বলেন , চিংতাওয়ের দেখাশোনার বদলে তার ব্যথায় মরে যাওয়া ভাল।

    বাবাকে দেখাশোনা করার জন্যে চিংতাও ও বাবার মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । চুক্তি অনুযায়ী চিংতাও বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবে । এক দিন হুপেই প্রদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত "গ্রামীন শিক্ষকের সাহায্য কার্যক্রম পরিকল্পনা" সম্পর্কিত ভ্রাম্যমান রিপোর্ট দল চিংতাওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে । প্রাসঙ্গিক রিপোর্ট শুনে চিংতাও খুব আলোড়িত হয় । এর মধ্যে ফাং সিয়েনলুং নামে একজনের ভাষণে চিংতাও বিশেষভাবে মুগ্ধ হয় । ফাং সিয়েনলুং বলেছেন , ১৫ হাজার ইউয়ান ঋণের কল্যাণে তিনি মধ্য দক্ষিণ চীন অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছেন বলে তিনি সবসময় তার প্রতিদান দিতে চান । তাই তিনি গ্রামে শিক্ষাদানের কাজে যোগদান করেছেন । তার আগমন একের পর এক বাচ্চার ভাগ্য পরিবর্তন করেছে । সেই রাতে চিংতাওয়ের ঘুম হয়নি । সেও গ্রামে শিক্ষাদানে যোগ দিতে চায় । বাবাও তার মেয়েকে সমর্থন করেন । বাবা ও মেয়ে দুজন ফানকুয়ান উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে আসেন । স্কুল দুজনকে স্বাগত জানায় এবং দুজনের থাকার ব্যবস্থা করে ।

    ছেন চিংতাও ফান কুয়ান উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় এক বছর শিক্ষকতাকরেছে । সে ৩০জন ছাত্রছাত্রীকে ইংরেজী সহ তিনটি বিষয় পড়াচ্ছে। তার প্রচেষ্টায় ছাত্রছাত্রীরা তাড়াতাড়ি জ্ঞান লাভ করেছে । চিংতাও জানে, বাবা না থাকলে আজকের চিংতাও থাকত না । তাই সে বাবাকে ধন্যবাদ জানায় এবং সবসময় বাবার কথা মনে রেখে মনোযোগের সঙ্গে শিক্ষয়ীত্রির কাজ করে । সে স্থির করে যে, যে কোনো অসুবিধাই হোক না কেন অথবা পরে তার বিয়ে হোক না কেন সে সবসময় তাকে নিজের আপন বাবা হিসেবেই মনে করবে । সে বাবাকে আরোগ্য করে তোলার চেষ্টা করবে । যাতে তিনি সুখ-শান্তিতে নিজের বার্ধক্যের জীবনযাপন করতে পারবেন ।