চীনে প্রতি বছর ১৩০ কোটি মানুষ যক্ষ্মা রোগে মারা যায়। সম্প্রতি চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের জানিয়েছে, বতর্মানে চীন যক্ষ্মা নিরসনের কাজ কঠোর চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রান্ত জ্ঞান জনপ্রিয় করার জন্যে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপ নেবে। যাতে জনসাধারণের যক্ষ্মা নিরসনের ব্যাপরে সচেতনতা বাড়ানো যায় এবং যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের কৌশল ক্রমাগত আয়ত্তকরা যায়। এখন শুনুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি রির্পোট।
যক্ষ্মা হল এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। ফিঁসফাঁসের মধ্য দিয়েও এই রোগ ছড়ায়। যক্ষ্মা বিশ্বজুড়ে প্রকোপ আকারে দেখা দেয় । সারা পৃথিবীতে এই রোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ গণ স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক বছর চীনে ১০ লাখেরও বেশী লোক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। রোগীদের এ কেবল ভারতের পর পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করেছে। গত বছর যক্ষ্মা নিরসনে চীন মোট ৪০ কোটি রেন মিন পি বরাদ্দ করেছে। তা ছাড়া, চীন সরকার যক্ষ্মা নিরসনের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছে। যক্ষ্মা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যে বিনা পয়সায় ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাধি নিরসন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যুর্রোর উপ মহা পরিচালক শিয়াও ডং লো ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
চীনের প্রতিটি প্রদেশ, জেলা, থানা এবং গ্রামে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সার্বিক সেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা হয়েছে। গত ৫ বছরে ২ লাখ ৫০ হাজার যক্ষ্মা রোগী খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তাদের চিকিত্সা করা হয়েছে। যার ফলে কোটি কোটি লোক যক্ষ্মা থেকে রেহাই পেয়েছে।এ জন্য প্রত্যেক বছর ৮০০ কোটি রেন মিন পির সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে এও বলেছেন, যদিও চীনের যক্ষ্মা নিরসন কাজে কিছুটা সাফল্য অর্জিত হয়েছে তবুও কঠোর চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেমন এ রোগ নিরসনে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে যক্ষ্মা নিরসনের সংস্থা এবং কর্মীদের কর্মের সার্মথ্যকে উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন বতর্মান ও আগামী বছর সারা চীনে অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণকারী যক্ষ্মা রোগীদের ওপর জরিপ চালানো হবে। এ প্রসঙ্গে উপ মহা পরিচালক শিয়াও ডং লো বলেছেন,
এবারের জরিপ চীনের ৩১টি প্রদেশ, স্বায়াত্তশাসিত অঞ্চল এবং কেন্দ্রীয় শাসিত শহরগুলোতে চালানো হবে। এই জরিপের সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনার জন্যে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক কোটি ৭০ লাখের বেশী রেন মিন পি রবাদ্দ করবে। বতর্মানে বিভিন্ন জরিপ কেন্দ্রের পূর্ব পযার্য়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১ এপ্রিল সারা চীনে একই সময় এই জরিপ শুরু হবে।
জানা গেছে, চীনের যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৮০ ভাগ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন যুবক-যুবতী। সম্প্রতি গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতী শহরগুলোতে চাকরি করছেন। সুতরাং চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের মধ্যে যক্ষ্মা নিরসনের জ্ঞান প্রচার করছে। পেইচিং শহরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ গবেষণালয়ের চিকিত্সা কর্মীরা সম্প্রতি পেইচিংএর রাজধানী বিমান বন্দর নির্মান স্থানে বিনা পয়সায় ২ শোরও বেশী কৃষক কর্মীর জন্যে শরীরের পরীক্ষা করছেন। চিকিত্সক চাও লিন রোগীর থুথু পরীক্ষা করার সময় বর্নণা করেছেন,
লাল রং হল যক্ষ্মার ব্যাসিলাস।এটা হল যক্ষ্মা রোগের প্রধান আক্রান্ত উত্স। আমাদের ইচ্ছামত থুথু ফেলা উচিত নয়। কারণ থুথুতে এসব জীবাণু রয়েছে। যদি যক্ষ্মা রোগী ইচ্ছামত থুথু ফেলে তাহলে এসব জীবাণু দ্রুত বাতাসে ছড়িয়ে যায় এবং অন্যজনকে এই রোগে আক্রান্ত করে ফেলে।
|