v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-29 21:56:35    
চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্য সারা বিশ্বের আলোড়ন সৃষ্টি করে

cri
    সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প ক্ষেত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অনেক চীন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্য শুধু যে চীনে সমাদর পেয়েছে তাই নয়, বরং বিদেশেও সমাদর পেয়েছে এবং আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশীদের চীনা ছবি দেখা এবং বই পড়াতে আরো বেশি সুবিধা হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের কাছে চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্যের উন্নয়ন সম্বন্ধে কিছু বলবো।

    ২০০৬ সালের শেষ দিকে পেইচিংয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন শিল্প মেলা আয়োজন করা হয়। অনেক অংশগ্রহণকারী সংস্থা এ মেলায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্য প্রদর্শন করে। পাশাপাশি সংস্কৃতি প্রেমীরাও এসব সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্যে উপভোগ করে। চীনের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র চেং গোষ্ঠীর মহাপরিচালক ওয়াং কুয়াংমিং সংবাদদাতাদের কাছে বলেছেন, বহু বিদেশী পরিবেশন সংস্থার চীনের জাতীয় সংগীতে মনোযোগ আকৃষ্ট করে। তিনি বলেছেন,

    'আমরা চিলিন প্রদেশের পক্ষ থেকে এবারের মেলায় অংশ নেই। আমরা প্রধানত চীনের ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র চেং প্রদর্শন করি। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানীসহ  বিভিন্ন দেশের পরিবেশন সংস্থা এবারের মেলায় আমাদেরকে এসব দেশে পরিবেশন ও প্রশিক্ষণ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।'

    চেং চীনের সবচেয়ে প্রাচীন একটি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ওয়াং কুয়াংমিং বলেছেন, চীনের চেং গোষ্ঠী কয়েক বছরের আগে থেকে চেংয়ের উত্পাদন, বিক্রি, পরিবেশন ও প্রশিক্ষণ উন্নয়নের পদ্ধতি গবেষণা শুরু কর। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে, চীনের চেং গোষ্ঠীর প্রতিনিধি দল শুধু যে ইউরোপের প্রায় সকল দেশে পরিবেশন করেছে তাই নয় বরং জার্মানী ও ব্রিটেনসহ ৩০টিরও বেশি দেশে প্রশিক্ষণ দেয়।

    উত্তর চীনের থিয়ানচিন শহরের একজন ব্যবসায়ী আধুনিক উপাদান দিয়ে উত্পাদিত চেং প্রদর্শন করেন। থিয়ানচিন শহরের সংস্কৃতি ব্যুরোর শিল্প কার্যালয়ের একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা হো ওয়েনমাও বলেছেন, এ ধরণের চেংয়ে ঐতিহ্যিক চেংয়ের সংগীতের চেয়ে আরো সুন্দর হয়। সেজন্য অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মেলার প্রথম দিনেই তিনি ৯০লাখেরও বেশি ইউয়ান রেনমিনবির বিক্রীর কন্ট্র্যাক্ট স্বাক্ষর করেছেন।

    জানা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে থিয়ানচিনের প্রচুর ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি শিল্প পণ্যদ্রব্য বিদেশে রফতানি করেছে। শুধু যে বহু চীনের ঐতিহ্যিক অপেরা ও অ্যাক্রোব্যাটিক বিদেশে পরিবেশিত হয় তাই নয় বরং অনেক ঐতিহ্যিক চিত্রকর্মও বিদেশে সমাদর পায়। হো ওয়েনমাও বলেছেন,

    'ইয়াং লিউছিং নববর্ষ উপলক্ষে আঁকার দেওয়াল চিত্র ও চাং মাটির পুতুল হল চীনের ঐতিহ্যিক শিল্প। বিশেষ করে ইয়াং লিউছিং নববর্ষ উপলক্ষে আঁকা দেওয়াল চিত্রের ঐতিহ্যিক খোদাই আঁকারের সঙ্গে সামন্ঞ্জস্য করা হয়। এসব আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদর পায়। প্রতি বছর প্রচুর এ ধরণের চিত্রকর্ম জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোয় রফতানি হয়।'

    এবারের মেলায় শেনসি প্রদেশের ঐতিহ্যিক গান, নাচ ও পুতুল নাচ দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে হয়। একজন মার্কিন ব্যবসায়ী শেনসি প্রদেশের পুতুলনাচ যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

    পেইচিং সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন শিল্প মেলায় আরো অনেক বিভিন্ন ধরণের চীনা ঐতিহ্যিক শিল্প পণদ্রব্য প্রদর্শিত হয়। এর মাধ্যমে চীনের সংস্কৃতি শিল্পের প্রাণশক্তি প্রদর্শিত হয়। পেইচিং শহর আয়োজিত এবারের মেলা হল চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প বিশ্বে প্রচারের একটি সুষ্ঠ প্ল্যাটফর্ম। এবারের মেলা ছাড়া চীনের কোনো কোনো অঞ্চলে সাংস্কৃতিক শিল্প সমর্থনের জন্য বিশেষ নীতি ও ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন, পেইচিং সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়োগে অর্থ সাহায্য দেয় এবং সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কর কমায়। ২০০৬ সাল থেকে পেইচিং সরকার 'সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন শিল্প সংক্রান্ত বিশেষ পুঁজি' প্রবর্তিত করে। প্রতি বছর ৫০কোটি ইউয়ান রেনমিনবি দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশন, প্রকাশ, বাণিজ্য, অনুষ্ঠানের রচনা, বিদেশের সঙ্গে বিনিময়, কার্টুন ও ইন্টারনেট খেলার গবেষণার ক্ষেত্রে সাহায্য দেয়।

    বর্তমানে, চীনের সাংস্কৃতি পণ্যদ্রব্য ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা পাচ্ছে। চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদেশিক সাংস্কৃতিক বাণিজ্য গবেষণালয়ের পরিচালক লি হুয়াইলিয়াং এ সম্বন্ধে বলেছেন,

    'গত বছরে অনুষ্ঠিত জার্মানীর ৫৮তম ফ্রান্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বই মেলায় চীনের বই ও কপিরাইট বাণিজ্য প্রসারিত হয়। আমরা ৬শোরও বেশি বই'র কপিরাইট রফতানি করি। এর তাত্পর্য সুগভীর।'

    যদিও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্য আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদর পেয়েছে, তবুও চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্যের বহুমূখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি কম। লি হুয়াইলিয়াং মনে করেন, প্রধান কারণ হল চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্যের বাণিজ্যিক পরিচালনা ব্যবস্থা সম্পন্ন হয় নি। তিনি চীনের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্যের বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি গবেষণা ও উন্নয়নের চেষ্টা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুধু যে চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্যে সংস্কৃতির সঙ্গে সামন্ঞ্জস্য রেখে উত্পাদন করা হয় তাই নয় বরং বিদেশী মানুষের পছন্দের দিকে নজর রাখা হয়। যাতে চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যদ্রব্য বিক্রীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা যায়।

    লি হুয়াইলিয়াং বলেছেন, চীনের অর্থনীতির সামর্থ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের চীনের উত্কৃষ্ট সংস্কৃতি অধিক থেকে অধিকতরভাবে বিদেশীদের আকৃষ্ট করছে। তিনি বলেছেন,

    'বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে চীনা ভাষা শিক্ষার হিড়িক পড়েছে। অনেক দেশ কোন্ফুসিয়ান ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়ার পাশাপাশি চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মত দ্রুতভাবে উন্নয়ন এবং সাফল্য অর্জন করছে।'