v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-29 21:00:30    
রসঘন থিয়েনচিন শহর(ছবি)

cri

 থিয়েনচিন উত্তর চীনের "কথকতার ভুমি" বলে পরিচিত। বিশেষ করে থিয়েনচিনের চা দোকানে এই বৈশিষ্ট্য সবসময়ই গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়।

 থিয়েনচিন শহর উত্তর চীনের সমভূমিতে অবস্থিত। তার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বোহাই সাগর। থিয়েনচিন হচ্ছে উত্তর চীনের বৃহত্তম উপকূলীয় উন্মুক্ত শহর। ১৩০০ বছর আগে, থিয়েনচিন ছিল একটি স্থল আর জল বন্দর । দেশের বিভিন্ন জায়গার ছোট-বড় জাহাজগুলো থিয়েনচিনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতো। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে আসতেন। ৬০০ বছর আগে থিয়েনচিন একটি শহরের রূপ নেয়। ১৯শ' শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থিয়েনচিন তত্কালীন উত্তর চীনের বৃহত্তম আর্থিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। আধুনিক চীনের ইতিহাসে থিয়েনচিনের গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা রয়েছে।

 থিয়েনচিন আর চীনের রাজধানি পেইচিং খুব কাছে হলেও এই দুটি শহরের অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবন ধারায় অনেক পার্থক্য রয়েছে। চেনচিয়াং প্রদেশের ওয়েনচৌ শহর থেকে আসা মিঃ হো ছিউ বলেছেন, "আমি ২০০২ সালে থিয়েনচিনে এসেছি। আসার পর ছুটির দিনে আমার তেমন কোন কাজ ছিলো না। আমার বন্ধুরা আমাকে এখানকার রসাত্মক সংলাপ শুনার প্রস্তাব দিতো। আমার সত্যি ভালো লেগেছে। এর পাশাপাশি আমি থিয়েনচিনের কিছু আঞ্চলিক ভাষাও শিখেছি। যেমন "আপনি খেয়েছেন? মেঝ ছেলের বাবা-মা" ইত্যাদি। খুব মজা। অন্য শহরে এমন কথা সহসাই শুনা যায় না। এখন আমার স্বদেশবাসী, বন্ধু-বান্ধবরা আসলে আমি তাঁদেরকে নিয়ে থিয়েনচিনের রসাত্মক সংলাপ শুনতে যাই। সবাই-এর মজা পেয়েছে।"

 থিয়েনচিন শহরের নানকাই অঞ্চলের গুই রাস্তায় অবস্থিত ছিয়েনসিয়াংঈ চা দোকান আগে একটি রেশম শিল্পের দোকান ছিলো। পুনর্নির্মাণের পর এখন একটি চা দোকানে রূপান্তরিত হয়েছে। আপনি ১০ ইউয়েন রেনমিনপি ব্যয় করে সেখানে কোন এক একটি আসনে বসে হাতে এক কাপ চা নিয়ে মজার মজার সাত, আটটি চমত্কার কথকতা উপভোগ করতে পারেন। কি যে আরামদায়ক সময় কাটবেন, বলে বুঝানো যাবে না?

 সপ্তাহশেষে বা ছুটির দিনে এ চা দোকানে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে। খালি জায়গা পাওয়া খুবই কষ্টকর এবং এখানে হাসাহাসির প্রাণ খোলা শব্দ আগত সবাইকেই আকৃষ্ট করে।

 ইয়াং ওয়েই থিয়েনচিনের একজন রসাত্মক সংলাপ শিল্পী। তাঁর বাবা ইয়াং শাও হুয়া ও ছোট ভাই ইয়াং ঈ উভয়েই চীনের বিখ্যাত রসাত্মক সংলাপ শিল্পী। থিয়েনচিনের চা দোকানে রসাত্মক সংলাপ জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইয়াং ওয়েইও থিয়েনচিনের অগনিত দর্শকের আন্তরিক সমাদর পেয়েছেন। চা দোকানের রসাত্মক সংলাপের বৈশিস্ট্য আকর্ষণ সম্পর্কে ইয়াং ওয়েই বলেছেন, "আমার মনে হয়, চা দোকানের রসাত্মক সংলাপের আকর্ষণ হচ্ছে দর্শকদের কাছে পেয়ে তাদের ঘনিষ্ঠ দিকগুলোকে তুলে ধরে তাদের মনকে সতেজ করে তোলা। এখন দর্শকের মনও মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হচ্ছে। গতকাল আমি একটি রসাত্মক সংলাপ পরিবেশন করেছি। আজ আমি আবার তা পরিবেশন করলে একই দর্শক অবশ্যই তা শুনতে চাইবে না। সুতরাং আমাদের সবসময়ই পরিবর্তনের কথা ভাবতে হয়। "

 থিয়েনচিন হচ্ছে একটি ৬০০ বছরের ইতিহাস সম্পন্ন পুরনো শহর এবং চীনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর। জলপথ পরিবহনের উন্নয়ন থিয়েনচিন শহরের "জাহাজঘাট সংস্কৃতিকে" তুলে ধরেছে। বহুবিধ সামাজিক শ্রেণী বহুবিধ সংস্কৃতির সৃষ্টি করে। বিভিন্ন চরিত্রের নিয়তি আর কাহিনী সেখানকার লোক-কারুশিল্পের জন্য সমৃদ্ধ উপাদান সরবরাহ করে। এভাবে থিয়েনচিনের কথকতা ধারাবাহিকভাবে উন্নতি হয়ে আসছে।

 এখনও থিয়েনচিনের চা দোকানে সবচেয়ে আদিম রসাত্মক সংলাপ শুনা যায়। থিয়েনচিনের একটি পর্যটন এজেন্সির ম্যানেজার চাং চি ফাং বলেছেন, "দেখুন, পেইচিংয়ে মিং ও ছিং রাজবংশ থেকে সংরক্ষিত রাজপ্রাসাদ , রাজকীয় পার্ক ও পিকিং অপেরা রয়েছে। সুচৌ ও হাংচৌ এই দুটি শহরে মনোরম নদনদী ও পাহাড় এবং স্থানীয় অপেরা রয়েছে। থিয়েনচিনে কি আছে? আমি বলি, এখানে কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য ছাড়াও রয়েছে অনেক লোকশিল্প, যেমন ইয়াংলিওছিন চিত্র, মাটি দিয়ে তৈরি রঙিন ভাস্কর্য এবং ব্যতিক্রম ধর্মী ঘুড়ি তৈরী ইত্যাদি।"  

ইয়াংলিওছিন চিত্র

    থিয়েনচিনের ইয়াংলিওছিন চিত্র দেশ-বিদেশে বিখ্যাত। এই চিত্র বলতে চীনের বসন্ত উত্সব উপলক্ষে লাগানো এক রকমের বিশেষ ছবিকে বুঝায়। অতীতে ভুতকে তাড়িয়ে দেয়া এবং পাপ দূর করার উদ্দেশে স্থানীয় লোকজন নিজ নিজ বাসায় বা বাসার দরজায় এ ধরনের ছবি লাগাতেন। তবে সময়ের পরিবর্তনের সংগে সংগে চিত্রগুলো সম্পর্কিত কুসংস্কার এবং পশ্চাত্পদ ধারনা ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে। এখন এ ধরনের ছবি বাস্তবসম্মত এক রকমের জনপ্রিয় চিত্র হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে এবং তার মধ্য দিয়ে শুভকামনার কথা প্রকাশ পাচ্ছে। এ ছাড়া এ চিত্রপরিবেশের শোভা বাড়ানোর ভূমিকাও পালন করছে।

 থিয়েনচিনের  পুরানো ঘড়ি ভবন থিয়েনজিন শহরের একটি ঐতিহাসিক প্রতীক। এটা দেখে ইতিহাস সম্পর্কে অনেকের স্মৃতি জাগরিত হয়। যেমন থিয়ানজিনের উতাডাও নামক একটি জায়গার কথাই ধরা যাক। ওখানে এখনও বিদেশীদের নির্মিত ব্যাংক, গির্জা , বাণিজ্য সংস্থা ও উদ্যানসহ নানা ধরণের স্থাপত্য কীর্তি সংরক্ষিত রয়েছে। স্থাপত্যগুলো সবই আফিম যুদ্ধকালে অর্থাত ১৬০ বছর আগে নির্মিত। এ জায়গাটাকে বহুদেশীয় স্থাপত্য প্রদর্শনী এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়।

 ঐতিহাসিক স্মৃতি ছাড়াও থিয়েনচিনের পর্যটন সম্পদও খুব সমৃদ্ধ। সারা বছর নানা ধরনের পর্যটন কর্মসূচী এখানে আয়োজন করা হয়। যেমন জি জেলার পর্যটন এলাকা তার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর জন্য সারা বিশ্বে সুনাম ছড়িয়েছে। উপকূলীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন থাওকু বিনোদন এলাকা এখন হাইহো নদীর প্রধান দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। থিয়েনচিন শহরের কেন্দ্রীয় পর্যটন অঞ্চলের মধ্যে আরো রয়েছে ব্যস্ততম সোনালী সড়ক, গোবুলী বাণিজ্য সড়ক, ভিন্ন দেশের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদাতাও ইত্যাদি।

 থিয়েনচিন শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বোহাই সাগর। ফলে থিয়েনচিনে আসলে আপনি যদি বোহাই সাগর না দেখেন তাহলে তা হবে পরিতাপের ব্যাপার। আপনারা কখনো এখানে আসলে এক দিন অন্তত জেলের জীবনকে অনুভব করে যাবেন। বিশেষ করে অনুক্ষণ-ব্যস্ত শহরবাসীরা সত্যিই এখানে অভুতপূর্ব আরাম অনুভব করবেন। পযর্টকদের সাগরে মাছ ধরার আগ্রহ মেটানোর জন্যে মাঝেমাঝে বন্দর থেকে বিশটিরও বেশী নৌকা সাগরে পাঠানো হয়। সাগরে মাছ-ধরা নিঃসন্দেহে ভিন্ন স্বাদের এবং এটা কিন্তু একটা মজার ব্যাপারও বটে।

গোবুলি বাওজি রেস্তোরাঁ

 থিয়েনজিন গেলে গোবুলি বাওজি না খেলে একটি বিশেষ খাবার থেকে আপনারা বঞ্চিত হবেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, গোবুলি বাওজি এক ধরনের বিশেষ রুটি জাতীয় খাবার । যার ভিতরে মাংস আর অন্যান্য জিনিষ ভরে দেয়া হয়। থিয়েনজিন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত গোবুলি বাওজি রেঁস্তোরা সারা দিনই মানুষের ভীড়ে গমগম করতে থাকে।

 গোবুলির অর্থ বলতে গেলে একটি কাহিনী অবশ্যই আপনাদের শুনতে হবে। ছিং রাজবংশে থিয়েনচিনের পাশে উ ছিং জেলার ইয়াং গ্রামে একজন কিশোর ছিলেন। তাঁর মেজাজ ছিল খুব খারাপ। সে রাগ হলে বাবা-মার কথাও শুনতো না। তার মা দুঃখ পেয়ে একদিন বলেন, "কুকুরও তোমার সাথে কথা বলবে না।" আস্তে আস্তে একথা ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে। আর এভাবেই তার ডাক নাম হয়ে যায় গোবুলি।

 এ ছেলেকে ১৪ বছর বয়সে তার বাবা থিয়েনচিনের লিউচিয়াংচেন নামে একটি খাবারের দোকানে প্রযুক্তি শেখার জন্য পাঠান। কেউ ভাবতে পারেন নি, ছেলেটি সেখানে গিয়ে পরিশ্রম করে সকলের স্নেহ আর আদর পাবে। হয়েছেও তাই। ও খুব দ্রুত নানা ধরণের খাবার তৈরির প্রযুক্তি শিখে ফেলে। বিশেষ করে, তার তৈরি বাওজি খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়। তিন বছর পর ও নিজেই একটি বাওজি তৈরির ছোট রেস্তোরা খুলে বসে। তার ডাকনাম গোবুলি ট্রেডমার্ক হিসেবে তার বাওজির সাথে রয়েছে এবং অসম্ভব জনপ্রিয়তার কারণে তা এখন চীনের বিখ্যাত স্থানীয় খাবারে পরিণত হয়েছে।

 থিয়েনজিনের আরেকটি বিশেষ খাবার মাহুয়া আমি খেয়েছি। তাও খুব মজা। মাহুয়া এক ধরনের মচমচে মিষ্টি খাবার। এখন থিয়েনজিনের যে কোনো জায়গায় মাহুয়া দোকান দেখা যায়। থিয়েনচিনের গুয়েফাশিয়াং মাহুয়া সবচেয়ে খাটি ও সুস্বাদু। চকলেট দিয়ে, কালো তিল দিয়ে, ষ্ট্রবেলি দিয়ে ,কমলালেবু দিয়ে, ইউক দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক মাহুয়া এখানে পাওয়া যায় । আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবীদের জন্যে এটা উপহার হিসেবেও মন্দ নয়।