কুমিলা জেলার শ্রোতা মজিনা খাতুন তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি প্রদেশ , কয়েকটি জেলা , এবং কয়েকটি শহর আছে? প্রিয় বন্ধু, প্রশাসনের প্রয়োজনে চীনদেশেকে ২৩টি প্রদেশে আর ৬টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, তা ছাড়া আছে ৪টি কেন্দ্রশাসিত মহানগর। চীনে যে ২৩টি প্রদেশ আছে সেগুলোর নাম হল: হোপেই, শানসি, লিয়াওনিং, চিলিন, হেইলোংচিয়াং, সেনসী, কানসু, ছিংহাই, শানতোং, চিয়াংসু, চেচিয়াং, আনহুই, চিয়াংসি, ফুচিয়াং, থাইওয়ান, হোনান, হুপেই, হুনান, কুয়াংতোং , হাইনান, সিছুয়ান, কুইচৌ এবং ইয়ুন্নান। চীনে যে-পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আছে সেগুলোর নাম হল: অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। কেন্দ্রশাসিত চারটি মহানগরের নাম হল: পেইচিং, শাংহাই , থিয়ানচিন এবং ছংছিন। প্রদেশ বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অধীনে আছে: শহর, স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ, জেলা, স্বায়ত্তশাসিত জেলা। জেলা বা স্বায়ত্তশাসিত জেলার অধীনে আছে মহকুমা বা টাউন।
চীনে প্রায় ৩ হাজারও বেশী শহর আছে। এ সব শহরের মধ্যে ছ'টি কেনদ্রশাসিত শহর চীনের বড় বড় শহর। যেমন, পেইচিং শহর চীনের রাজধানী এবং চীনের রাজনৈতিক, অথর্নৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আটমো বছরের ইতিহাসসম্পন্ন পেইচিং শহরে আছে এমন অনেক জায়গা বা মনোরম দৃশ্যাবলীতে রুপময় অথবা ঐতিহাসিক গুরুত্বে গরীয়ান। শাংহাই চীনের সবচেয়ে বড় শহর এবং পৃথিবীর বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে একটি। সাংহাই শহর চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য, শিল্প ও ব্যাংকিং কেন্দ্র। চীনে জেলার সংখ্যা দু শতাধিক ।
নরসিংদী জেলার শ্রোতা আইনূল হক তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের চিকিত্সা ব্যবস্থা কি রকমের ? চীনের গ্রামাঞ্চলে হাসপাতাল আছে? উত্তরে বলছি, চীনের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ গ্রামাঞ্চলে থাকায় গ্রামাঞ্চলই হল চীনের চিকিত্সাকর্মের ভারকেন্দ্র। গণসরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরই মুক্তির আগে যে কয়েকটি মাত্র চিকিত্সা কেন্দ্র শহরে কেন্দ্রীভূত ছিল চীন সরকার তার পরিবর্তন করতে শুরু করেন। পুরনো হাসপাতালগুলো পুনগর্ঠিত ও সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিপুল সংখ্যক হাসপাতাল ও চিকিত্সা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বতর্মানে চীন দেশের সকল জেলাতেই বহু শাখা হাসপাতাল , স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগ-প্রতিরোধ কেন্দ্র, মাতৃমঙ্গল ও শিশুকল্যাণ সদন এবং ঔষধপত্র পরীক্ষা করার সংস্থা আছে। থানাগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শহরে হাসাপাতালগুলোতে পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের এবং গ্রামাঞ্চলে চিকিত্সার জনপ্রিয়করণের ফলে সারাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চল জুড়ে জালের মতো বিস্তৃত চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষার মোটামুটি একটা সুব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ গোগীই নিজেদের জেলায় চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারে। কেবল কঠন ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিভাগীয় বা আরো বড় হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য যেতে হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, চীনের ঐতিহ্যিক চিকিত্স বিশ্ববিখ্যাত। উনবিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে পশ্চিমী ঔষধ প্রবতর্নের আগে চীনা জনসাধারণ বহু শতাব্দী ধরে স্বাধীন চিকিত্সা-বিজ্ঞানরুপে প্রতিষ্ঠিত চীনা চিকিত্সা পদ্ধতি ও ঔষধের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। প্রাচীনকালে চীনে অনেক বিশিষ্ট চিকিত্সকের আবির্ভাব হয়েছিল। আমাদের হাতে এখনো রয়েছে চীনা চিকিত্সা-বিজ্ঞান ও ভেষজ-বিজ্ঞানের বিপুল পরিমাণ তথ্য। এক অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের কাছে এখন আছে চীনা চিকিত্সা-বিজ্ঞান ও ভেষজ-বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রায় আট হাজার বিবরণ। এর মধ্যে দেশির ভাগই ব্যবহারিক চিকিত্সা-বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিবরণ। চীনে রোগ-চিকিত্সার ব্যাপারে ওষুধ ব্যবহার করা ছাড়াও আরো কতকগুলো বিশেষ চিকিত্সা পদ্ধতি আছে। যেমন, আকুপাংচার, মক্মিবাশ্চন ও নিউমো-থেরাপি প্রভৃতি। আকুপাংচার ও মক্সিবাশ্চন চিকিত্সায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে এবং এই পদ্ধতিতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই , থাকলেও খুব সামান্য। চীন সরকার চীনা ঐতিহ্যিবাহী চিকিত্সা পদ্ধতি ভূমিকা পালনে গুরুত্ব দেন। এই ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য সরকার 'চীনা সনাতন চিকিত্সা-বিজ্ঞান আকাডেমী' স্থাপিত করেছেন। সনাতন পদ্ধতিতে চিকিত্সার জন্য বিপুল সংখ্যক হাসপাতালও স্থাপিত হয়েছে। আজকের চীনে আছে ৮০০টির বেশী এই ধরনের হাসপাতাল, ২০টির বেশী চীনা চিকিত্সা বিজ্ঞানের কলেজ, তিন লাখের অধিক সনাতন পদ্ধতির চিকিত্সক এবং ১ লাখ ৪০ হাজার অন্যান্য চিকিত্সাকর্মী।
|