মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত মধ্যস্থতাকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্জা রাইস ২৭ মার্চ সকালে জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইস্রাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট নিয়মিত বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক দিক।
রাইস বলেছেন, ওলমার্ট ও আব্বাস তাঁর সঙ্গে বৈঠকের সময় বহু ক্ষেত্রেই নমনীয়তা প্রকাশ করেছেন। আব্বাস বলেছেন, তিনি আন্তরিক সংলাপের মাধ্যমে বন্ধু হতে ইচ্ছুক। এর পাশাপাশি ওলমার্ট অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন। অবশেষে দু'পক্ষ প্রতি দু'সপ্তাহ অন্তর একবার নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। রাইস বলেছেন, এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। কারণ নিয়মিত বৈঠকের ব্যবস্থা গড়ে তোলা ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের মধ্যে শান্তি আলোচনার কর্মসূচী প্রণয়ন করার জন্য একটি বাস্তব ভিত্তি তৈরী করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তাঁরা একসঙ্গে সংলাপ করতে ইচ্ছুক এবং এই সংলাপ অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। এটি হচ্ছে শান্তির পথে খুব গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা।
জনমত অনুযায়ী, যদিও দু'পক্ষ বৈঠকের প্রথম দিকে চূড়ান্ত অবস্থানের আলোচনা প্রায় অসম্ভব। তবে নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে দু'পক্ষের নিরাপত্তা এবং ফিলিস্তিনের মানবিক দিক যার যার উদ্বিগ্ন বিষয়গুলো যথাযথ সমাধানের জন্য ইতিবাচক হবে। সংবাদ সম্মেলনে রাইস বলেছেন, তাঁর বিশেষ দূত পরবর্তীসময় প্রচেষ্টা চালিয়ে দু'পক্ষের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকরীর জন্যে একটি মানদন্ড প্রণয়ন করবেন। তিনিও মধ্যপ্রাচ্য এলাকা নিয়মিতভাবে সফর করবেন। যাতে ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের আলোচনাকে সফল করা যায়।
তাছাড়া, ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের নেতৃবৃন্দের নিয়মিত বৈঠক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে বহু পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টার ফলাফল। রাইস মধ্যপ্রাচ্য এলাকা সফরের পর পরই জাতিসংঘের মহাসচিব বান কিন মুনও মধ্যপ্রাচ্য এলাকা সফর করেছেন। ২৮ মার্চ আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলন সৌদী আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের প্রধান প্রসঙ্গ হচ্ছে ২০০২ সালে গৃহিত "আরব শান্তি উদ্যোগ" আবার শুরু করা। এই উদ্যোগের প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে আরব দেশগুলো ইস্রাইলের সঙ্গে সার্বিক শান্তি বাস্তবায়ন করা, ইস্রাইলের ১৯৬৭ সালে দখল করা আরবের ভূভাগ প্রত্যাহার করা, ফিলিস্তিন জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর,গাজা এলাকা ও পূর্ব জেরুজালেমে দেশ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজি হওয়া এবং ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের সমস্যা ন্যায্যভাবে সমাধান করা। বর্তমানে বিভিন্ন পক্ষ শান্তি আলোচনা আবার শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। এমনকি রাইস বলেছেন, বুশ সরকার দু'বছরের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের মত বিনিময়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে জনমত মনে করে, নিয়মিত সংলাপ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় তারা চাপের সম্মুখীন হবে। ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা ও মানবিক এই দুটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান সম্পর্কে বর্তমানে ফিলিস্তিনের নতুন সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অংশ। নতুন সরকারের মূল অংশ হামাস ইস্রাইলকে এখনো স্বীকার করে নি। সকল ধরণের বিরোধী কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়ার পরিস্থিতিতে গাজা থেকে ইস্রাইলের ওপর হামলার সমস্যা সমাধান এখনো খুব কঠিন।
ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের নেতৃবৃন্দের নিয়মিত বৈঠক ব্যবস্থা গড়ে তোলাশুধু এক ভালো সূচনা। দু'পক্ষের চূড়ান্ত অবস্থান সংক্রান্ত বাস্তব আলোচনা শুরু করার পথ আরো দীর্ঘ ছিল।
|