v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-28 15:00:17    
পাখীর স্বর্গ

cri
    উত্তর-পশ্চিম চীনের নিং সিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পিং লোও জেলায় কেন্দ্রীভূত ছিল লবণাক্ততা ও জলাভূমি । গত দশ বারো বছরে পিং লোও জেলা সরকার ব্যাপক আকারে সংস্কারমূলক চালিয়ে বিপুল প্রয়াসের সংগে প্রাকৃতিক মত্স চাষের উন্নয়ন ঘটিয়ে স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরাট পরিবর্তন করেছে এবং এখানে শীত কাটানোর জন্যে বিরাট সংখ্যক বন্য পাখীকে আকৃষ্ট করেছে । আজকের অনুষ্ঠানে চীনের নিং সিয়া অঞ্চলের পিং লোও জেলার এ পাখীর স্বর্গ সম্পর্কে কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।

    অতীতে এ জেলার সবখানেই ছড়িয়ে ছিল বিস্তীর্ণ লবণাক্ত ভুমি । তখন বাতাস হলে সর্বত্রই পলিমাটি বয়ে যেতো । এখন পুকুর ও হ্রদ খননের পর এখানকার আবহাওয়া আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে ।

    পিং লোও জেলার কৃষক চাং ইয়ু পিয়াও এ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন । তিনি ১৯৯০ সাল থেকেই মাছের চাষ শুরু করেন । তিনি পর পর পিং লোও জেলার ৩০ হেক্টর জমির ঠিকাদার নিয়েছেন । তিনি ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বারো বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার ঠিকাদার নেয়া নিম্ন ও লবণাক্ত অনাবাদী জমি ও ছোট ছোট পুকুর একেকটি মত্স চাষের বিশাল হ্রদে পরিণত হয়েছে এবং তার পরিবারের আয়ও অনেক বেড়েছে । গত কয়েক বছরে চাং ইয়ু পিয়াংয়ের মত পিং লো জেলার অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক কৃষক মাছের চাষ শুরু করেন । এভাবে অতীতের নিস্তেজ পুকুরগুলো আস্তে আস্তে সতেজ হয়ে ওঠেছে । মাছের পুকুরগুলোর আয়তন এবং আশেপাশের ঘাস ও গাছপালা বাড়ার সংগে সংগে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে । এতে বহু পাখী এখানে বাসা বানাতে শুরু করেছে । কনকনে শীতকালেও মাছের পুকুর ও হ্রদের ওপরে সবসময় ধুসর ও সাদা রংয়ের অসংখ্য পাখী আকাশে উড়ে বেড়ায় । সারা বছরের চার ঋতুতেই এখানে সর্বত্র এক প্রাণবন্ত দৃশ্য বিরাজ করে ।

    গোড়ার দিকে কৃষকরা আশংকা করতেন যে , পাখীরা এখানে এসে বেশি বেশি মাছ খাবে এবং তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি এনে দেবে । তাই তখন তারা পাখীদের আগমনকে পছন্দ করতেন না । তবে গত কয়েক বছরে পিং লোও জেলা সরকার বন্য পাখীদের সংরক্ষণের কাজ জোরদার করেছে । জেলা সরকার প্রতি বছর নানা ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করে পাখী সম্পদের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে আসছে । এতে করে পিং লোও জেলার কৃষকদের পাখী সংরক্ষণের সচেতনতা বেড়েই চলেছে । চাং ইয়ু পিয়াও আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,এখন এখানকার কৃষকরা পাখীদের নিজেদের বন্ধু বলে মনে করছেন । তারা আর পাখীদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন না । তিনি বলেছেন ,

    পাখীগুলো আমাদের মাছের পুকুরে আসলে আমরা তাদের স্পর্শ করি না । তারা পুকুরের ছোট ছোট দ্বীপে থেকে যায় এবং সেখানেই ডিম পারে ও বাচ্চার জন্ম দেয় । আমরা জানি যে, পাখী হচ্ছে দেশের সংরক্ষিত জীব । তাদের আগমনে আমাদের কিছু অর্থনৈতিক ক্ষতি হলেও আমরা তাদের হয়রানি করি না ।

    মত্স চাষে নিয়োজিত অন্য একজন কৃষক মা ইয়ুন ধুসর রংয়ের একটি সারসকে বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন । একদিন মাছ ধরার কাজ শেষ করে যখন তিনি বাড়িতে ফিরছিলেন , তখন একটি নদীর তীরে তিনি একটি আহত ধুসর সারসকে দেখতে পেলেন । তিনি তাকে বাড়িতে নিয়ে তার ক্ষত স্থান বেঁধে দিলেন এবং নিজের পুকুরের ছোট ছোট মাছ তাকে খাওয়ালেন । মা ইয়ুনের আন্তরিক পরিচর্যায় অল্প দিনের মধ্যে ধুসর সারসটি সেরে ওঠলো । তাকে ছেড়া দেয়ার দিনে আশেপাশের কৃষকরা মা ইয়ুনের সংগে মিলে মাঠে গিয়ে এক সংগে সেই সারসের আবার নীল আকাশে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠান উদযাপন করেছেন ।

    অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ ও সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তু পিং লোও জেলাকে পাখীদের স্বর্গে পরিণত করেছে । গত বছর শীতকালে দক্ষিণমুখী ২০ হাজারেরও বেশি পাখী এখানেই থেকে গেছে । এ দৃশ্য দেখে কৃষক মা ইয়ুন মহা খুশী । তিনি বলেছেন ,

    বসন্ত শুরু হওয়ার পর এখানকার হ্রদগুলোতে পানি আনা হয়েছে । এতে অনেক পাখী এখানে উড়ে এসেছে । এখানে এসে তারা হ্রদের মাছ ধরে ধরে খাচ্ছে । সে যে কত রকম পাখী । আমার খুব ভালো লাগছে ।

    পিং লোও জেলা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ । এ জেলার ৮ হাজার ৬শ'রও বেশি হেক্টর জলাভূমি ও হ্রদ উন্নয়ন করা যাবে । এখন এগুলোর অধিকাংশই উন্নয়ন ও ব্যবহার করা হয়েছে । পিং লোও জেলার উপকন্ঠের যেখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়া ছোট বড় পুকুর আজ বিশাল বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়েছে । অতীতের খালি থাকা লবণাক্ত জমিতেও আজ বিভিন্ন ধরণের গাছপালা বড় হয়ে ওঠছে । পিং লোও জেলার জলজ দ্রব্য কেন্দ্রের উপপরিচালক রেন ইয়ুং পিন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    আমাদের জেলা সরকার প্রাকৃতিক মত্স চাষের উন্নয়নের পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে । এ পরিকল্পনা অনুসারে অতীতের ছেট ছোট পুকুরকে বড় বড় হ্রদে পরিণত করা হয়েছে এবং হ্রদের চারদিকে কাশ ও বাঁশ লাগানো হয়েছে আর হ্রদগুলোতে পদ্মের মত জলজ বৃক্ষ লাগানো হয়েছে । এভাবে পিং লোও জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত হয়েছে এবং কৃষকদের আয়ও অনেক বেড়েছে ।

    জলজ দ্রব্য ও মাছের চাষ উন্নয়নের জন্যে ৪৮ বছর বয়সের কৃষক থিয়ান সিন চিয়াং পিং লোও জেলার সি সুই মত্স চাষ ঘাঁটিতে ১৭ হেক্টর অনাবাদী জমির ঠিকাদারী নিয়েছেন । এতে করে তিনি আনেক টাকা উপার্জন করেছেন । তিনি এখন চিন্তাভাবনা করছেন যে , তার মাছের পুকুরের আশেপাশে মাছ ধরা কেন্দ্র এবং পাখী পরিদর্শন মঞ্চ স্থাপন করে কৃষকদের পরিবার-ভিত্তিক পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটাবে । তিনি বলেছেন ,

    এখন আমাদের এখানে পানির অভাব নেই । পানি বেশি থাকায় পাখীগুলোও এখানে জড় হয়েছে । আমরা বেশ সুন্দরভাবে পাখীগুলোর সংগে মেলামেশা করছি । তারা এখানে আসলে আমরা কখনো তাদের তাড়িয়ে দিই না এবং মারি না । কেন না , আমরা সবসময় আশা করি যে , আমাদের আশেপাশের পরিবেশ ভালো থেকে আরো ভালো হবে ।

    বস্তুত মানুষ ও প্রকৃতি সম্প্রীতিতে সহঅবস্থানের চিত্র পিং লো জেলার সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় । লোকেরা সহজেই দেখতে পাচ্ছে যে, অসংখ্য পাখীর সমাবেশ হচ্ছে । কেউ কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে , আবার কেউ কেউ নিজেদের উল গুছিয়ে নিচ্ছে । লোকেরা তাদের পাশ দিয়ে চলার সময় হাল্কাভাবে হাটাহাটি করেন , যাতে পাখীগুলোর হয়রানি না হয় ।