রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রাশিয়া সফর করবেন এবং রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য চীন বর্ষ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন । সফরের আগে তিনি পেইচিংয়ে ইন্টার ফ্যাক্স সংবাদ সংস্থাসহ রাশিয়ার ৬টি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । তিনি বিশ্বাস করেন, এবারের সফর চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কের গভীরত্বের ক্ষেত্রে আরো নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে ।
চলতি বছর হবে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ বর্ষ । দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারী সম্পর্ক দ্বিতীয় দশম বার্ষিকীতে প্রবেশ করেছে । রাশিয়া বর্ষ কার্যক্রম গত বছরে চীনে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চীন বর্ষ কার্যক্রম প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও এ গুরুত্বপূর্ণ সময় রাশিয়া সফর করছেন । তিনি বলেছেন, এবার রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে আমরা খুবই আশাবাদী । আমরা দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারী সম্পর্ক, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাস্তব সহযোগিতা সম্প্রসারণ আর অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন নিয়ে গভীরভাবে মত বিনিময় করবো এবং উভয়েই চীন বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আর চীনকে জানুন প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবো । আমি বিশ্বাস করি দু'পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের সফর অবশ্যই বাস্তব ভিত্তিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং দু'দেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে ।
বর্তমান চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কের মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে । দু'পক্ষ 'চীন -রাশিয়া সুপ্রতিবেশীমূলক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা চুক্তির' নীতি অনুযায়ী পারস্পরিকভাবে রাষ্ট্র বর্ষ কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমে সার্বিকভাবে রাজনীতি, আর্থ-বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করেছে এবং অনেক সাফল্য অর্জন করেছে ।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নতুন বছরে চীন রাশিয়ার সঙ্গে চার ক্ষেত্রের সহযোগিতার মাধ্যমে দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়নকে আরো জোরদার করবে । তিনি বলেছেন,প্রথম হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পারস্পরিক আস্থা জোরদার করা । রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বার্থের বিষয়ে অব্যাহতভাবে পারস্পরিক সমঝোতা ও সমর্থন করা । দ্বিতীয় হচ্ছে পারস্পরিক উপকারিতামূলক ও অভিন্ন স্বার্থ অর্জন করার ভিত্তিতে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্য, জ্বালানী সম্পদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাস্তব সহযোগিতাকে সচল করা । তৃতীয় হচ্ছে চীন বর্ষ কার্যক্রমের সুযোগে দু'দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের সম্প্রসারণ এবং দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা ও মৈত্রীকে জোরদার করা । চতুর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ব্যাপারে দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে , বিশ্বের শান্তি সংরক্ষণ এবং সম্মিলিতভাবে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আরো বেশি অবদান রাখা । আমি বিশ্বাস করি, দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারী সম্পর্কের উন্নয়ন দু'দেশের জনগণ এবং বিশ্বের জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে ।
আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা হচ্ছে দু'দেশের সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের অর্থনীতি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । তা দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার জন্য ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে । হু চিন থাও বলেছেন, আরো বেশি রাশিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠানের চীনে পুঁজি বিনিয়োগ করাকে চীন স্বাগত জানায় । দু'দেশের বাণিজ্য পরপর ৮ বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে , গত বছরের এর মূল্য ৩৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যা ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে । আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক মূল্য ৬০ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্য অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে ।
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও'র সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে চীন বর্ষ কার্যক্রমে অংশ নেয়া । রাশিয়ায় চীন বর্ষ কার্যক্রমে চীন রাজনীতি, অর্থনীতি ,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিসহ ২০০টিরও বেশি ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে । এ প্রসঙ্গে হু চিন থাও বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার পারস্পরিকভাবে রাষ্ট্র বর্ষ কার্যক্রমের আয়োজনের উদ্দেশ্য হল দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং দু'দেশের জনগণের দীর্ঘকালের মৈত্রী উন্নত করা । আমি বিশ্বাস করি, এসব কার্যক্রম দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা ও মৈত্রীকে জোরদার করবে এবং দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারী সম্পর্কের উন্নয়নে নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে ।
|