v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-23 19:08:48    
স্বামীর গোপন

cri

    চীনের বসন্ত উত্সবের পর এক রাতে ৩৩ বছর বয়সী হু ফোংলিং মার বাড়িতে কয়েকদিন থাকার পর তাড়াহুড়া করে নিজের বাড়িতে ফিরে যান । বাড়িতে পা রাখা মাত্রই মেয়ে তাকে এক আশ্চর্য ব্যাপার জানিয়েছে । মেয়ের কথা শুনে হু ফোলিং বিষ্মিত হন । ব্যাপারটা কি ? কেন মেয়ের কথা শুনে তিনি অবাক হয়েছেন ?

    হু ফোংলিংয়ের মেয়ে তাকে বলেছে , বাবা একজনকে বাড়িতে কয়েক দিন থাকতে দিয়েছেন। লোকটা খুব ময়লা । বাবা তাকে গোসল করালেন এবং তাকে আমার বিছানায় শোয়ালেন। লোকটা যাওয়ার সময় বাবা তার জন্য রেল টিকিট কিনলেন এবং আমার বসন্ত উত্সবকালে পাওয়া টাকাগুলো তাকে দিলেন । মেয়ের কথায় হু ফোংলিংয়ের সন্দেহ হলঃ আমি বাবামার বাড়িতে থাকার এ কয়েক দিনে স্বামী কি করেছিলেন ? তিনি যে ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন সে ছেলে কে ?

(হু ফোংলিং)

     স্বামী লি কুয়াংচিয়ার বয়স তার চেয়ে ২৩ বছর বড় । তিনি এক জন সত্ মানুষ । মাসে মাত্র কয়েকশ" টাকা উপার্জন করেন । তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন স্বছল নয়, তবে কেন তিনি ভিক্ষুকের মতো লোককে টাকা দেন । ছেলেটির সঙ্গে স্বামীর কি সম্পর্ক ? হু ফোংলিং সন্দেহ করেছেন, স্বামী টাকাগুলো তার সাবেক স্ত্রীকে দিয়েছেন বলে তার সত্য কথা বলার সাহস নেই ।

    স্বামীর অদ্ভূত আচরণে হু ফোংলিংয়ের সন্দেহ দিন দিন বেড়ে যায় । নিজের অজানতে স্বামী সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করায় হু ফোংলিং অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। স্বামী লির নিশ্চয়কোনো গোপন কিছু আছে ?

    স্ত্রী পরিবারের আয় নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়ায় স্বামী লি কুয়াংচিয়ার আপত্তি নেই । কিন্তু ছেলেটি কে এ সম্পর্কে তিনি কোনো ব্যাখ্যা করেননি । কয়েক দিন পর লি আরও এক ময়লা ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন । আর সহ্য করতে পারেন না বলে স্ত্রী হু রেগে বাবা মার বাড়িতে ফিরে যান ।

    আগে বাড়ির সব আয় ও খরচ স্বামী লি নিয়ন্ত্রণ করতেন । ফোংলিং স্বামীকে খুব বিশ্বাস করতেন । কিন্তু এখন ফোংলিং ভাবতে পারেন না যে , স্বামী লির এ কয়েক বছরের বেতন কোথায় গেছে ? এক দিন স্বামী লির এক সহকর্মী ফোংলিংকে বললেন, লির বেতন আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না ? কেন ? ফোংলিং জিজ্ঞেস করলেন । সহকর্মীটি বললেন , তিনি তো সব বেতন অন্য লোককে দিতেন ।

     একদিন এক টিভি সংবাদ ফোংলিংকে আকৃষ্ট করল । টিভি কেন্দ্রেপাওয়া একটি নামবিহীন চিঠিতে সিয়ে ছেন যিনি দরিদ্র লোককে চাঁদা দিয়েছেন তাকে খুঁজে বের করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে ।

     স্বামীর আচরণ স্মরণ করে ফোংলিং ভাবেন , যে লোকটাকে সবাই খুঁজছেন সে লোক আমার স্বামী হতে পারেন ? যদি কথাটা সত্য হয় তাহলে সে কেন আমাকে বলেন না ? ফোংলিং স্বামীর নেতৃবৃন্দকে তার সন্দেহের কথা জানালেন ।তারা অফিসের নামে ব্যাপারটা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    প্রতিবেশীরা জানালেন, লি কুয়াংচিয়া কিছু গৃহহারা ছেলেমেয়েকে গ্রহণ করেছেন । প্রতিবেশীদের কথা অনুযায়ী কয়েক দিন পর এই সব ছেলেমেয়েকে পাওয়া গেল । ফোংলিং বুঝতে পারেন না যে, স্বামী কেন তাদেরকে সাহায্য করেন ? তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয় । একথা ভেবে হঠাত দু বছর আগের এক কথা তার মনে পড়ে ।লির বড় মেয়ে হল লি ও তার সাবেক স্ত্রী দুজনের মেয়ে । তাকে লি সবচেয়ে আদর করতেন । তিনি অনেক আগে তার জন্য অর্থ জমা করতে শুরু করলেন । কিন্তু এক ভাল কাজের জন্য মেয়ের দশ হাজার রেনমিনপির অগ্রিম প্রয়োজন হলে লি বলেন , তার এত বেশি টাকা নাই । ফলে বড় মেয়ে কাজের সুযোগ হারিয়েছে । বাবার জমা টাকাপয়সা কোথায় গেল? রেগে মেয়ে বাড়ি ত্যাগ করল । দুবছর পার হল , কিন্তু মেয়ের কোনো খোঁজখবর নেই । মেয়ের কথা সব সময় মনে পড়লেও সেই জমা টাকাপয়সা সম্পর্কে লি কিছু বলেননি ।

    কয়েকজন ছেলেমেয়ে জানাল , তাদের বাড়ি অত্যন্ত গরিব , মা অনেক বছর আগে মারা গেছেন । সংসারের জন্য বাবা বাইরে মজুরী করতে গেছেন । বাড়িতে শুধু আশি বছর বয়সী দাদী আছেন । তাদের খাওয়াতে ও পড়াতে দাদী সক্ষম নন । বাধ্য হয়ে তারা বাইরে ভিক্ষা করে দিন কাটায় । চাচা লি তাদেরকে এই ছোটো ঘরে আনেন । তারা বলে, চাচা লি নতুন জুতা কিনেন না , ভাল খাবার খান না, দূর জায়গায় গেলে বাসে ভ্রমণ করেন না । যে টাকাপয়সা বাঁচানো হয় তিনি তা আমাদের দেন ।

    ছেলেমেয়েদের কথা শুনে সবাই মনে করেন, নামবিহীন চিঠিতে যে লোককে খোঁজা হচ্ছেলি কুয়াংচিয়া হলেন সেই লোক । আবশেষে অফিস নেতৃবৃন্দের কাছে লি কুয়াংচিয়া স্বীকার করলেন, তিনিই সিয়েছেন নামে সেই লোক।

     স্ত্রী ফোংলিংয়ের বারবার জিজ্ঞেস করায় লি কুয়াংচিয়া কষ্টের সঙ্গে অতীতের সেই সব কথা স্মরণ করলেন । লি কুয়াংচিয়ার পরিবার অত্যন্ত গরিব ছিল । ছোটোবেলায় দরিদ্র পাহাড়ি গ্রাম থেকে বাইরে এক ভাল কাজ পাওয়ার জন্য তিনি ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেও কোনো কাজ পেলেন না । তিনি ভিক্ষা করে ইছাং শহরের পাহাড়ি এলাকার বাড়িতে ফিরলেন । তখন ছিল শীতকাল । কিন্তু গরিবের কারণে তার গায়ে শুধু পাতলা পাতলা কাপড় আর পা খালি ছিল । অনাহারে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়লেন । একজন বুড়ো কাঠুরি তাকে বাঁচিয়েছেন এবং নিজের মাত্র ৫০ পয়সা তাকে দিলেন এবং বলেন , খোকা, এই ৫০ পয়সা দিয়ে কিছু খাবার কিনে খাও ।

    এই অভিজ্ঞতার উত্সাহে লি অক্লান্তভাবে লেখাপড়া করেন এবং পরে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিয়ে সিয়েছেন নামে ব্যাটারিয়ানের একজন সৈন্য হলেন । সৈন্যবাহিনীতে মেয়াদ শেষ করে তিনি এক কোম্পানিতে চাকরি পান ।তার সেই অভিজ্ঞতা তিনি কখনো ভুলতে পারেন না এবং সবসময় গৃহহারা ছেলেমেয়েদের উপর মনোযোগ দেন । কিন্তু তিনি মনে করেন , তার এই অভিজ্ঞতা কাউকে বলা যাবে না । স্বামী কেন দয়ালু ছেলেমানুষদের সাহায্য করেন এ সম্পর্কে হু ফোংলিং ভাল করে বুঝেছেন ।

    লি কুয়াংচিয়ার কাহিনী তাড়াতাড়ি ইছাং শহরের চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার বাড়ি ত্যাগী মেয়ে বাবার কাহিনী শুনে খুব অনুতপ্ত হয়ঃ সে বাবাকে ভুল বুঝেছে। এখন ৮জন পালিত ছেলেমেয়ে নিয়ে বুড়ো লি তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে সুখ শান্তিতে জীবনযাপন করছেন ।

    এখন ইছাং শহরে অধিক থেকে অধিক লোক বুড়ো লির তত্পরতায় যোগ দিয়েছেন । ইছাং শহরের স্থানীয় সরকার এবং বহু লোক আর্থিক সাহায্য সহ নানা দিক থেকে লিকে সাহায্য দেন । যাতে তিনি আর ভাল করে দরিদ্র ছেলেমেয়েকে সাহায্য করতে পারেন ।