বর্তমানে চীনা জনগণের জীবনযাত্রার মাননোন্নয়ন হচ্ছে এবং তাদের চিকিত্সার সুযোগ-সুবিধাও উন্নত হচ্ছে । সুতরাং এখন চীনাদের আয়ু সাধারণভাবে বেশি হচ্ছে । এটি সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক বিকাশের একটি নিদর্শন । অথচ একই সময় আমাদের দেশে একটি নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে । তা হচ্ছে লোকসংখ্যার বার্ধক্য থেকে উদ্ভূত সমস্যা । কিছুদিন আগে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন ও গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে । চীনের লোকসংখ্যার বার্ধক্যজনিত সমস্যা রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্যদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি কয়েকজন সদস্যের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।
পৃথিবীতে চীনের বৃদ্ধদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । সারা দেশে যাদের বয়স ষাটের উপর , তাদের সংখ্যা ১৪ কোটি ৩০ লাখ । এটি চীনের মোট লোকসংখ্যার ১১ শতাংশ এবং এশিয়ার বৃদ্ধদের সংখ্যার অর্ধেক ও বিশ্বের বৃদ্ধদের সংখ্যার এক পঞ্চমাংশ । রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য ও চীনের বার্ধক্য সংক্রান্ত উন্নয়ন তহবিল সংস্থার চেয়ারম্যান লি পাও খু চীনের বার্ধক্যায়নের পরিস্থিতির উল্লেখ করতে গিয়ে উপরোক্ত সংখ্যা তুলে ধরেছেন ।
বিরাট এ বৃদ্ধ গোষ্ঠী আমাদের সমাজের উপর কি কি ধরণের প্রভাব ফেলেছে ? চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য ও এ কমিটির লোকসংখ্যা, পরিবেশ ও সম্পদ সংক্রান্ত কমিটির সহকারী পরিচালক চেং সি লিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন ,
বার্ধক্যায়ন সমাজের জন্যে অনেক সমস্য এনে দিয়েছে । প্রথমত অবসরকালীন ভাতার চাপ বেড়েছে । গত বছর চীনে ৪ কোটি ৬০ লাখ লোক নিয়মিত অবসরকালীন ভাতা পেয়ে থাকেন । চীন সরকারের বরাদ্দ অবসরকালীন ভাতা ৫০০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে । দ্বিতীয়ত চিকিত্সা ফি বেড়েছে । সাধারণ পরিসংখ্যান অনুসারে বৃদ্ধদের চিকিত্সা ফি তরুণ-তরুণীদের চিকিত্সা ফির তিন গুণেরও বেশি । তৃতীয়ত বৃদ্ধদের দেখাশোনা করা দরকার বলে তাদের দেখাশোনার চাপও অনেক বেড়েছে ।
এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও চীন সরকার বার্ধক্যায়ন সমস্যার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বৃদ্ধদের এক সুখী শেষ জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্যে ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে । এ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কাজকর্মে কিছু সাফল্যও পাওয়া গেছে । রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য ও চীনের বার্ধক্য সংক্রান্ত উন্নয়ন তহবিল সংস্থার চেয়ারম্যান লি পাও খু বলেছেন ,
চীনের বার্ধক্যায়নের বাস্তব অবস্থা অনুসারে চীন সরকার সরকারী পরিচালনা , সমাজের অংশগ্রহণ ও জনসাধারণের পরিচর্যার পথনির্দেশক নীতি উপস্থাপন করেছে । এ নীতির আলোকে চীনের বিভিন্ন স্থানে বিশেষভাবে বার্ধক্য সংক্রান্ত সংস্থা স্থাপন করা হয় এবং বৃদ্ধদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন ও নীতি চালু করা হয় । পৃথিবীতে বার্ধক্য সংক্রান্ত কাজকর্মে চীন বেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে । এ সাফল্য বিভিন্ন দেশের প্রশংসা ও স্বীকৃতি লাভ করেছে ।
চীন এখন বিপুল প্রয়াসের সংগে সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার কাজ করছে । এ প্রক্রিয়ায় বার্ধক্য সংক্রান্ত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে । এ সমস্যা সুরাহার জন্যে চীন সরকার কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে । এ প্রসংগে সদস্য লি পাও খু বলেছেন ,
চীনের শহরগুলোতে সর্বনিম্ন জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা চালু হওয়ায় দরিদ্র বৃদ্ধরাও পেট ভরে খেতে পারছেন । এ বছরের জাতীয় গণ কংগ্রেসের অধিবেশনে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওন চিয়া পাও ঘোষণা করেন যে , শহরের সর্বনিম্ন জীবনের নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থা গ্রামাঞ্চলেও চালু করা হবে । এ ব্যবস্থার কল্যাণে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র বৃদ্ধদের জীবনের মৌলিক চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে । যেসব বৃদ্ধ শহরে থাকেন , তারা চিকিত্সার মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন । গ্রামাঞ্চলেও এখন নতুন সমবায়মূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে । এ ব্যবস্থা থেকে গ্রামাঞ্চলের বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন । বর্তমানে চীনের ৫০ শতাংশ জেলায় সমবায়মূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হয়েছে । চীনের বৃদ্ধদের অবসরকালীন জীবন সমৃদ্ধ করে তোলার জন্যে সারা দেশে নানা ধরণের ২০ হাজারেরও বেশি বৃদ্ধ বিদ্যালয় খোলা হয়েছে । এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃদ্ধরা যেমন অনেক নতুন জ্ঞানার্জন করতে পারেন , তেমনি বেশ কিছু নতুন বন্ধুকেও পেতে পারেন । পাশাপাশি তাদের নিসংগতার সমস্যাও কিছুটা সমাধান করা সম্ভব হয় । বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু জ্ঞানার্জনের সংগে সংগে তাদের জীবনে আনন্দও বেড়েছে এবং জীবনের মানও উন্নত হয়েছে । সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে বৃদ্ধদের জন্যে নানা ধরণের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেরও আয়োজন করা হয় । তাদের অনুপ্রেরণায় বৃদ্ধরা স্বেচ্ছায় বৃদ্ধদের সংগীত দল , নৃত্য দল , মডেল দল গঠন করেছেন । বিভিন্ন স্তরের সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু বৃদ্ধদের কার্যক্রম কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ।
চীনের ধারাবাহিক ব্যবস্থার কল্যাণে বৃদ্ধদের অবসরকালীন জীবনের সুষ্ঠু নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব হয়েছে । অথচ চীনের বৃদ্ধদের সংখ্যা বৃদ্ধির গতির দিক থেকে দেখতে গেলে বার্ধক্যের পরিস্থিতি এখনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ হচ্ছে । সংশ্লিষ্ট গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে , এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চীনের বৃদ্ধদের সংখ্যা প্রতি বছর আরো ৬০ লাখ হারে বাড়বে । এ প্রসংগে চীনের জাতীয় বার্ধক্য সংক্রান্ত কর্ম কমিটির উপপরিচালক ইয়ান ছিং ছুন বলেছেন ,
বৃদ্ধদের যত্ন নেয়া ও তাদের ভালোবাসা উচিত । তাদের কঠোর পরিশ্রমের ভিত্তিতে আমাদের এখনকার উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে । তারা আমাদের সমাজের জন্যে বিশেষভাবে অবদান রেখেছেন । বিভিন্ন স্তর, গোষ্ঠী ও পরিবারের মধ্যে মানুষের সম্প্রীতি স্থাপন করা উচিত । এ দিক থেকে দেখতে গেলে চীনের বৃদ্ধদের সমাজের আরো বেশি ভালোবাসা ও মর্যাদা লাভ করা উচিত ।
সুতরাং চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সাম্প্রতিক বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেয়া সদস্যরা আশা প্রকাশ করেছেন যে , চীনের বৃদ্ধরা অর্থনৈতিক বিকাশ ও সামাজিক সভ্যতার আরো বেশি সুফল উপভোগ করতে পারবেন ।
|