ইনছুয়ানের উত্তর-পশ্চিমে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চেনপেইপাও নামক প্রাচীন দুর্গ। চেনপেইপাও দুর্গ প্রাচীনকালের মিং ও ছিং রাজবংশ নির্মিত একটি দুর্গ । তা দু'টি দুর্গ নিয়ে গঠিত । এর মধ্যে পুরনো দুর্গটা ১৬ শতাব্দীর মিং রাজবংশের সময় নির্মিত হয়, তাকে মিং দুর্গও বলা হয় । আরেকটি নতুন দুর্গ ১৭৪০ সালে নির্মিত হয় , তা হচ্ছে ছিং দুর্গ । মিং দুর্গ পাহাড়ের কাছেই নির্মিত হয় । প্রাচীনকাল থেকে তা সীমান্ত এলাকার প্রতিরোধক দুর্গে পরিণত হয় । বর্তমানে চীনা ও বিদেশী চলচ্চিত্র শিল্পী ও নির্মাতাদের প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে । অনেক চীনা ছায়াছবি এখানে শুটিং করা হয়েছে । এ জন্য চেনপেইপাও দুর্গ একটি ছায়াছবির শহরেও পরিণত হয়েছে ।
পর্যটন স্থান হিসেবে চেনপেইপাওতে অবশ্যই অনেক গাইড আছে । আমাদের গাইড নিউ শু হুই হলেন একজন আন্তরিক ও প্রাণচঞ্চল মেয়ে । তিনি চেনপেইপাওতে ১০ বছর ধরে কাজ করছেন । তিনি মনে করেন, চেনপেইপাও হল তাঁর বাড়ি ।
এখানকার বুনিয়াদি ব্যবস্থা অতি দুর্বল। কাছাকাছি এলাকায় পানি , পথ এবং বিদ্যুত্ কিছুই ছিল না । কিন্তু কয়েক বছর এখানে ছায়াছবি শুটিং করার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার বুনিয়াদি ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে । আমাদের চলাচ্চিত্রের এই শহরে প্রদর্শনীর স্থানগুলো চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে । আমাদের পর্যটন শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে চেনপেইপাও অব্যাহতভাবে উন্নত হয়েছে । ১৯৮১ সালে চীনের বিখ্যাত লেখক চাং সিয়ান লিয়াং প্রথমবারের মতো চেনপেইপাও দুর্গকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে । এখানে শুটিং হওয়া প্রথম ছায়াছবির নাম হল 'একজন এবং আট জন', এর ডিরেক্টর হলেন চাং জুন চাও । এ ছবির ফটোগ্রাফার হলেন বর্তমান চীন ও বিশ্বের বিখ্যাত ডিরেক্টর চাং ই মৌ । তিনি 'একজন এবং আট জন' ছায়াছবি শুটিং করার জন্য চেনপেইপাওকে পছন্দ করেছেন । পরে তাঁর 'লাল ব্রুমকোর্ন' নামের ছায়াছবিটির শুটিংও এখানে হয়েছে এবং এ ছায়াছবি জর্মানীর বার্লিন ছায়াছবি উত্সবের স্বর্ণ পদক লাভ করেছে । এর পর চীনের অনেক বিখ্যাত ছায়াছবিরও এখানে শুটিং করা হয়েছে এবং এসব ছায়াছবির মাধ্যমে বিশ্বের জনগণ চীনের ছায়াছবি ও চীনের পশ্চিমাঞ্চল সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পেরেছেন। চেনপেইপাও চলচ্চিত্র শহরের একটি অতি বড় নাম স্বাক্ষারের দোয়ালে গাইড নিউ শু হুই আরো বলেছেন,
এ বড় দোয়ালে অনেক বিখ্যাত চীনা শিল্পীর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্বাক্ষর দেখতে পারি । দেখেন, এটা হচ্ছে ডিরেক্টর চাং ই মৌর নিজের স্বাক্ষর, তাঁর নাম লেখা অতি কঠিন আমরা সহজভাবে তাঁর লেখা বুঝতে পারি না। সেখানে গো ইয়ো, ছেন তাও মিং , চিয়াং ওয়েনসহ অনেক চীনা শিল্পীর স্বাক্ষর রয়েছে ।
ছিং দুর্গের চেয়ে মিং দুর্গের অবস্থা কিছুটা ভিন্ন । এর ভিতরে অনেক হুলদ মাটি ও পাথর দিয়ে গঠিত স্থাপত্য রয়েছে । দীর্ঘকালে ঝড়তুফান বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়ার প্রভাবে গোটা শহরটি দেখতে পুরনো মনে হয় । ছায়াছবির শিল্পীরা তাঁদের কল্পনা ও প্রয়াসের মাধ্যমে এ পুরনো শহরের বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে সুন্দর করে তুলে ধরেছেন । ছায়াছবি 'লাল ব্রুমকোর্নের' মধ্যে মদের দেবীকে শ্রদ্ধা করার দৃশ্য হয়তো পুনরায় পুরনো দুর্গে প্রদর্শন এবং বাতাসে ব্রুমকোর্ন মদের সুগন্ধও এখনো হয়তো পাওয়া যাবে।
ছায়াছবি লাল ব্রুমকোর্নের একটি শুটিং দৃশ্য চাঁদ দরজারের নীচে এবং পাশে ছায়াছবিতে ব্যবহৃত মদের সাইনবোর্ড ও দেখা যায় । ইতিহাসের ছায়া পুনরায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে । চীনের মূলভূভাগের একজন পর্যটক লি চুন ছবি তোলার পর বলেছেন, এখানকার দৃশ্য দক্ষিণ চীনের দৃশ্যের মতো নয় । এখানকার দৃশ্য আমার বেশি ভাল লাগে । এমন বিশাল খালি জায়গা দক্ষিণ চীনে খুঁজে পাওয়া কঠিন ।
মিং দুর্গের উত্তর দিকে ২০০ মিটার দূরে ছিং দুর্গ অবস্থিত । মিং দুর্গের পুরনো দৃশ্যের চেয়ে ছিং দুর্গের দোয়াল ভালভাবে সংরক্ষিত । ছিং দুর্গে প্রবেশ করার পর, দেখা যায় বিখ্যাত ছায়াছবি রাজপথ । সেখানে মাংসের দোকান, ব্যাংক, চা রেস্টরেন্ট, কাপড়ের দোকান এবং অপেরা থিয়েটারসহ চীনের প্রাচীন রাজপথের বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে পাবেন ।
অপেরা থিয়েটারের বাইরে দু'টি স্তম্ভে টাংগানো রয়েছে দর্শকদের প্রদর্শনের জন্যে চীনের শ্লোক । শ্লোকেরবিষয় হল প্রতিদিন বিশ্বের নানা স্থানে নানা ধরনের ঘটনা ঘটে । পর্যটকরা এসব স্থানে নিজেদের কল্পনা অনুযায়ী ছায়াছবির শিল্পীর মতো কিছু অনুষ্ঠান দেখতে শুনতে ও অনুভব করতে পারেন । অনেক পর্যটক ছায়াছবি শহরের কাপড় পরে চিত্রতারকার মতো নিজেদের ডিভিডি ছায়াছবি তৈরী করেন । পূর্বচীনের চিয়াংসু প্রদেশ থেকে আসা পর্যটক চিয়াং হাই ফেং আনন্দচিত্তে বলেছেন, আসার আগে আমি শুনেছি নিংসিয়া গেলে অবশ্যই চেনপেইপাও'র ছায়াছবির শহরে যেতে হয় । সেখানে প্রাচীনকালে মিং ও ছিং রাজবংশের ঐতিহাসিক দৃশ্য রয়েছে । যেসব মহা নগরে দেখতে পারা যায়নি সেখানে গেলে সেই সব নগরের দৃশ্য দেখা যাবে সহজেই ।
ছিং দুর্গের উপর উঠে দূরদুরান্তের হোলানশান পাহাড় এবং উজ্জল সুর্য্যের আলোতে গোটা দুর্গের দৃশ্য দেখতে পারা যাবে । অনেক ছায়াছবির গল্পও এখানে সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং চেনপেইপাও আগের মতোই প্রত্যেক পর্যকটদের আসার অপেক্ষায় রয়েছে । সবশেষে আমি আপনাদের চেনপেইপাও যাওয়ার উপায় জানিয়ে দেবো । আপনারা ইনছুয়ান শহরের সিমেন স্টেশন থেকে বাসে করে সরাসরিভাবে চেনপেইপাও চলাচ্চিত্র নগরীতে পৌঁছতে পারবেন ।
তাছাড়া, ইনছুয়ান শহরাঞ্চলের নানকুয়ান মসজিদের পশ্চিম দিকে ১০০মিটার দুরে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মিনিবাস যোগেও সেখানে পৌঁছতে পারবেন । প্রতি ১২ মিনিট অন্তর বাস ছাড়ে । পৌঁছতে প্রায় ১ ঘন্টা ১০ মিনিট লাগে । টিকিটের দাম ৫ ইউয়ান । চেনপেইপাও'র দু'টি দুর্গের টিকিটের মূল্য ৪০ ইউয়ান এবং গাইডের পরিসেবার জন্য কোন টাকা লাগে না । সেখানে ভোর এবং সন্ধায় তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি । তাই বেশি কাপড় নিয়ে আসা উচিত । সুর্যও খুবই উজ্জ্বল সান ক্রিম ও সানগ্লাস থাকা ভালো ।
|