v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-20 21:44:13    
বিদ্রোহীর মর্ম আমরা স্মরণ করি(৩)

cri
    খঃ নজরুল ইসলাম একদিকে এক হাতে রণ তুর্য ধরে পুরনো বিশ্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, অন্য দিকে আরেক হাতে বাঁশের বাঁশি ধরে প্রেমের সুরায় আকন্ঠ নিমগ্ন করে দেন সবাইকে। তার প্রেমের কবিতাও দারণ শক্তিশালী ও খুবই মুগ্ধকর। পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক ডক্টর জাং শিং আমাদের জন্য নজরুলের একটি প্রেমের কবিতা "বিজয়িনী" আবৃত্তি করেছেন।

    "হে মোর রানী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।----"

    কঃ প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নজরুল ইসলাম নিজের কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ও পশ্চিম বাংলার সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা করেছেন অতুলনীয়ভাবে। সবুজ রংয়ের মালভূমি, শাপলা ভরা ছোট নদী, গ্রামের বাড়ি, বৃষ্টিতে ময়ূড়ের নাচ, নৌকা ভরা গঙ্গা নদী এবং শান্ত-স্নিগ্ধ মধুরাত। কবির এতো বেশি কবিতা লেখার শক্তি ও উত্স কোথা থেকে এসেছে। এই প্রশ্ন নিয়ে চিয়াং ছেং জুং-এর নিজের মতামত আছে। তিনি বলেছেন:

    "আমি মনে করি কবি তার মাতৃভূমি ও এই ভূমিতে জন্ম হওয়া জনগণের প্রতি গভীর ভালবাসা পোষণ করেন। তার মাতৃভূমির ঐতিহ্যবাহী এবং সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক পটভূমি রয়েছে। তাতে কবির মূল্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, কবি শুধু তার নিজ দেশকে ভালবাসেন তা নয়, তিনি বিশ্বের বিখ্যাত কবিদের কাছ থেকেও অনেক নতুন অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তাই তার কবিতা লেখার সময় বিভিন্ন দেশের রূপকথা ও প্রবাদ এবং সেই দেশের ভাষাও ব্যবহার করেছেন অবলীলায় । তাই তার কবিতা এতো সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং মনোমুগ্ধকর।"

    খঃ নজরুলের কবিতা শুধু চিয়াং ছেং জুংকেই মুগ্ধ করেছে তা নয়। বাংলা বিভাগের কর্মী সুই হুয়াও তার প্রেমের কবিতায় মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি নজরুলের চীনা ভাষায় অনুদিত "আশা" নামক কবিতাটি আবৃত্তি করেছেন।

    "হয়ত তোমার পাব দেখা, যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।

    ঐ সুদূরের গাঁয়ের মাঠে, আলের পথে, বিজন ঘাটে। হয়ত এসে মুচকি হেসে ধরবে আমার হাতটি একা।

    ঐ নীরের ঐ গহন-পারে ঘোমটা-হারা তোমার চাওয়া, আনলে খবর গোপন-দূতী দিক-পারের ঐ দখিন হাওয়া। বনের ফাঁকে দুষ্টু তুমি, আস্তে যাবে নয়ন চুমি', সেই সে কথা লিখছে হেথা, দিগ্বলয়ের অরূণ-লেখা।"

    কঃ চীন আর বাংলাদেশ উভয়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস আছে। এবং দু'দেশের সংস্কৃতি বিনিময় সুদীর্ঘকালের। যদি হিমালয় পাহাড় না থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের দু'দেশের বিনিময় আরো বেশি হতো। চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেছেন:

    "আজ আমরা এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে চীনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নজরুলের কবিতা উপভোগ করছি। সবার বক্তৃতা শুনে আমি বুঝতে পেরেছি নজরুলের কবিতা আপনাদের সকলের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। চীন আর বাংলাদেশের সুদীর্ঘ দিনের বিনিময়ের ইতিহাস রয়েছে। আজ নজরুল এবং তার কবিতার মাধ্যমে আমরা আবার একসঙ্গে মিলে সুষম সাম্যের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছি, আনন্দ চিত্তে। আমাদের উভয়েরই উচিত পরষ্পরের কাছ থেকে সংস্কৃতির সুন্দরতম দিক শেখা , গ্রহণ করা এবং পরষ্পরের সংস্কৃতিকে ফলপ্রসূভাবে উপভোগ করা।"

    খঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত চীনে এসে চীনা লেখকদের সঙ্গে সাহিত্যসৃষ্টির অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ নজরুল পান নি, কিন্তু চীনা বিপ্লবী লেখকদের মত তাঁর রচনা ছিল জনগণের স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজবাদ ও সামন্ততান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে মুক্ত মন ও মননশীলতার প্রতীক।

    "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত চীনে এসে----"

    কঃ বাই খাই ইউয়ান সাহেবের নিররস প্রচেষ্টায় এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্যে নজরুল ইসলামের কবিতার বইয়ের প্রকাশ আজ সম্ভব হয়েছে। নজরুলের হৃদয়ের গভীর ভালবাসা আর তীব্র ঘৃণা ও বিদ্রোহের মর্ম এবং দেশ ও জনগণের প্রতি ভালবাসার কথা তার কবিতার মাধ্যমেই অনুভব করা যায়। তার লেখা বাংলা সাহিত্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তার লেখা অব্যাহতভাবে মানুষকে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে শক্তি যোগায় এখন চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সমঝোতা বাড়ানোর একটি সেতু।

    খঃ আমাদের দৃঢ় আশা এবং বিশ্বাস প্রেম ও বিদ্রোহের এই মহানকবি অমর হোক। বাংলাদেশ ও চীনের আরো অটুই হোক!