v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-20 21:42:37    
বিদ্রোহীর মর্ম আমরা স্মরণ করি(২)

cri
    খঃ তিনি আমাদের সঙ্গে আরেকটি মজার ব্যাপার ভাগাভাগি করেছেন। তিনি বলেছেন, নজরুলের কবিতা পড়তে শুরু করলে তার মনে হয় যেন আরেক জন চীনা কবির কবিতা শুনছেন। তিনি হলেন চীনের বিখ্যাত কবি কুও মো রো। এই দু'জনের কবিতার মধ্যে অনেক আশ্চর্য মিল আছে। যেমন দু'জনের কবিতায় বিপ্লবের তীব্র ইচ্ছার কথা আছে, এবং তারা দু'জনে প্রায় একই তুলনা ব্যবহার করেছেন। নজরুল তার "বিদ্রোহী" কবিতায় বলেছেন "আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস"। এবং কুও মো রো তার কবিতা "কুকুর দেবতায়" বলেছেন, " আমি কুকুর দেবতা। আমি চাঁদকে খেয়ে ফেলি, আমি সূর্যকে খেয়ে ফেলি, আমি পৃথিবী খেয়ে ফেলি। আমি তাই।"

    কঃ হ্যাঁ, এমন মিল থাকার ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। নজরুলের "বিদ্রোহী" ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় এবং কুও মো রো'র "কুকুর দেবতা"ও ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয়। কি অদ্ভুত মিল। বক্তব্য ও সময়কাল প্রায় একই সময়ে। অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, চীন ও ভারতের ঐতিহাসিক প্রায় সমসাময়ীক কালের। ভারত ছিল ব্রিটেনের উপনিবেশবাদী শাসনাধীনে। চীন ছিল আধা ঔপনিবেশিক ও আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশ। রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লবের কামান গর্জন করে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ত্বত্ত চীন ও ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এবং উভয় দেশে যে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্ত্রতন্ত্র বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হয়, তা অনিবার্যভাবেই উভয় দেশের সাহিত্যরচনায় প্রতিফলিত হয়েছে নিখুঁতভাবে। চীনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির সহাসচিব চিয়াং ছেং জুং বলেছেন:

    "চীনা জনগণ, বাংলা দেশের জনগণ এবং ভারতীয় জনগণদের মধ্যে এক অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ছিল। এই কারণে নজরুলের কবিতা ও তার গভীর দেশ-প্রেম অনেক চীনা পাঠকের মনের ভেতর একই অনুভূতি জাগাতে পেরেছে। আমি এর মধ্যে একজন।"

    কঃ তিনি তার কবিতা শুনে এতো উত্সাহীত হয়েছেন যে তিনি নিজেই একটি ছোট কবিতা তৈরী করেছেন। তার মাধ্যমে তিনি এই প্রেম ও বিদ্রোহের মানবতাবাদী কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তার এই কবিতার নাম "শিং"।

    "তিনি দেশ ও জনগণের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার কবিতা থেকে তার তীব্র বিপ্লবের মর্ম অনুভব করা যায়। তার হাতে যেন যুদ্ধের শিং ধরা রয়েছে। এই শিংয়ের আওয়াজে সারা পৃথিবীর পরিবর্তন হয়ে যাবে।"

    খঃ চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন সহকর্মী সিয়ে নান-ও এই অনুষ্ঠানে নজরুলের একটি কবিতার চীনা অনুবাদ আবৃত্তি করেছেন। তার চমত্কার আবৃত্তি অনেকের প্রশংসা সূচক হাততালি পেয়েছে। এই কবিতাটির নাম "পাহাড়ী গান"।

    "মোরা ঝঞ্চার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল। মোরা বিধাতার মত নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মত উচ্ছ্বাল।

    মোরা আকাশের মত বাধাহীন, মোরা মরু-সঞ্চার বেদুঈন, মোরা মানিনা শাসন-উশৃঙ্খল! মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল। মোরা সিন্ধু-জোয়ার কল-কল, মোরা পাগল-ঝোরার ঝরা-জল, কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল, কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল।

    মোরা দিল-খোলা খোলা প্রান্তর, মোরা শক্তি-অটল মহীধর, মোরা মুক্ত-পক্ষ নভ-চর, মোরা হাসি-গান সম উচ্ছ্বল। মোরা বৃষ্টির জল বনফল খাই, শয্যা শ্যামল বন-তল, মোরা প্রাণ-দরিয়ার কল-কল, মোরা মুক্ত-ধারার ঝরা-জল। কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল, কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল।"

    কঃ এবারের অনুষ্ঠানে আরো ১৬জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ছিলো। তারা এখন চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছে। তাদের বাংলা ভাষা এখনো ততটা ভাল হয়নি যে তারা নজরুলের কবিতা পড়তে পারবে না। কিন্তু চীনা অনুবাদ পড়লে তারাও খুব মুগ্ধ হয়। ১৯ বছর বয়স্ক থুং ইয়েন ফেং বাংলা ভাষায় বলেছেন:

    "আমি নজরুলের কবিতা খুবই পছন্দ করি। আমি আরো চেষ্টা করে বাংলা ভাষা শিখবো।"

    কঃ তারাও চীনা ভাষায় নজরুলের কবিতা "আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে" আবৃত্তি করেছে। বন্ধুরা তাদের কোরাস কন্ঠে শুনুন সেই আবৃত্তি।

    " আজ সৃষ্টির সুখের উল্লাসে, মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে, আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

    আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে, বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার-ভাঙা কল্লোলে! আসল হাসি, আসল কাঁদন, মুক্তি এলো, আসল বাঁধন, মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে। ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে-আজ সৃষ্টি সুখের উল্লেস!

    আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ, সৃষ্টিছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস, ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস, গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে! ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে, চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে, আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে-আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।"