v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-15 18:51:35    
আমার সঙ্গে চলুন লুলিয়াং জেলায় (ছবি)

cri

 লুলিয়াং একটি জেলা শহর, ইয়ুনান প্রদেশের বৃহত্তম উপত্যকা--- লুলিয়াং উপত্যকার কেন্দ্রে অবস্থিত। ২০ থেকে ৩০ লাখ বছর আগে হিমালয় পর্বত দৈর্ঘে, প্রস্থে ও উচ্চতায় বৃদ্ধি পাওয়ার সময় পৃথিবীর খোলস ভেঙ্গে লুলিয়াং উপত্যকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপত্যকার দক্ষিণাংশে একটি নদী ছিল। নদীর পানি দীর্ঘ দিন ধরে একদিকে চলায় একটি ব-দ্বীপের সৃষ্টি করেছে। লুলিয়াংয়ে জমে থাকা প্রাচীনকালের রঙিন স্ফটিক বালি বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষয় হতে হতে অবশেষে প্রকৃতি যেন তার ওপর চমত্কার খোদাই করে রহস্যময় রঙিন বালির বন সৃষ্টি করেছে। যা এখন প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

 রঙিন  বালির বন সহজে ভেঙ্গে যায় না। এর কারণ হচ্ছে বালি বনের বালিতে সিলিকেট ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট আছে। তা বাতাসের মধ্যে থাকতে পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সঙ্গে মিশে একটি প্রাকৃতিক রক্ষামূলক আবরণের সৃষ্টি করে। এ রক্ষামূলক আবরণের দরুণ বালি বন সহজে ধ্বসে পড়ে না। তা ছাড়াও এখানকার বালিতে ৪৮টি বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র উপাদান রয়েছে। কাল, আবহাওয়া ও সুর্যালোকের কৌণিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর রংও পরিবর্তিত হয়ে যায়। পর্যটকদের যেন একটি মনোরম রঙিন ছবির মধ্যে থাকার মতো। লুলিয়াং জেলায় এখন প্রতি বছর আন্তর্জাতিক রঙিন বালি ভাস্কর্য প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। এই প্রতিযোগিতা দেশি-বিদেশি বহু পর্যটককে এখানে আসতে আগ্রহী করে তোলে। লুলিয়াং জেলার প্রধান থাং বাও ইয়ু বলেছেন, "আমাদের লুলিয়াং জেলার পাঁচটি রঙিন বালি ভাস্কর্য গ্রীনিস বুকে স্থান পেয়ে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তার কারণ হচ্ছে বালি ভাস্কর্য কাজের আকার সবচেয়ে বড়, এর রং সবচেয়ে সমৃদ্ধ, একক বালি ভাস্কর্যের উচ্চতা সবচেয়ে উচু, রুমের বাইরে সংরক্ষণের সময় সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সমুদ্রতল থেকে সর্বোচ্চ স্থানে এই বালি ভাস্কর্য রয়েছে। এ সব কারণে তা বিশ্বের বালি ভাস্কর্য ইতিহাসের এক বিস্ময়ে পরিনত হয়েছে।"

 বালি ভাস্কর্য এক রকম নতুন শিল্পকলা । এর কাঁচা মাল কেবল বালি ও পানি। ২০০১ সাল থেকে লুলিয়াংয়ে পাঁচ বার রঙিন বালি ভাস্কর্য তৈরীর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইতালি, জাপান, বেলজিয়াম , নেদারল্যান্ড ও চীনের বহু অভিজ্ঞ ও প্রবীণ ভাষ্কর অংশ নিয়েছে। তাঁরা লুলিয়াংয়ে হ্যারি পটার, ডন কুইক্সোট এবং সুইহুসহ অনেক দেশি-বিদেশি নামকরা উপন্যাসের চরিত্র ও কাহিনী অবলম্বনে বালি ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছেন। এর উচ্চ উপভোগ মূল্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক রঙিন বালি ভাস্কর্য প্রতিযোগিতার একজন কর্মী মিস. লি ইউয়ান বলেছেন, "এখন আপনারা যে বালি ভাস্কর্যের কাজ দেখেছেন, তা হচ্ছে দুটি দেশের সাত জন শিল্পীর খোদাই করা হ্যারি পটার ও ম্যাজিক আয়না। এ কাজের ভেতর হ্যারি পটার নামক উপন্যাসের সকল চরিত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি রহস্যময় পাশ্চাত্য বিশ্ব আমাদের চোখের সামনে তুলে । এখন আর টেলিভিশনের সামনে বসে হ্যারি পটার দেখা দরকার নেই, সরাসরি লুলিয়াংয়ে এসে হ্যারি পটারকে দেখা যায়।"

 রঙিন বালি বন ছাড়া, লুলিয়াং জেলার আরেকটি বৈশিষ্টময় জিনিস হচ্ছে ছুয়ান জাতির সংস্কৃতি। ছুয়ান সবচেয়ে জটিল একটি চীনা শব্দের অন্যতম হতে পারে। ছুয়ান হচ্ছে ১৩০০ বছর আগে ইয়ুনানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সাধারণ নাম। একটি প্রস্তরখণ্ডে ছুয়ান জাতির ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে।

 এ ছাড়াও পর্যটকরা শত শত বছর ইতিহাসসম্পন্ন মন্দির-- দাজুয়ে মন্দিরে যেতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা গেছে, চতুর্দশ শতাব্দীর পর মিং ও ছিং রাজবংশের দাজুয়ে মন্দিরের সুনাম কুনমিংয়ের পশ্চিম পাহাড়ের হুয়াংটিং মন্দি ও তাইহুয়া মন্দিরের সমান ছিলো। লুলিয়াং জেলার পুরাকীর্তি পরিচালনা ব্যুরোর পরিচালক ওয়াং হোং বিন বলেছেন, লুলিয়াং জেলার দাজুয়ে মন্দির হচ্ছে ইয়ুনান প্রদেশের পুরাকীর্তি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এটা হচ্ছে কনফিউশিয়াস, তাও ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কৃতি ও একীভূত নান্দনিক শিল্পকলার প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য। এখানে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও তিব্বতী সংস্কৃতি কেন্দ্রীভূত হয়েছে।"

 লুলিয়াংয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস জানার পর শ্রোতাবন্ধুদেরকে একটি উপভোগ্য বিনোদনের স্থান--- পাইসুই পুকুরের লিলি ফুল বাগানে নিয়ে যাবো। লুলিয়াং জেলার পর্যটন ব্যুরোর উপ-পরিচালক ম্যাডাম রো ইউয়ান মেই জানিয়েছেন, "মালভূমিতে অবস্থিত লিলি ফুল বাগান অধিক থেকে অধিকতর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই লিলি ফুল বাগানের আয়তন ৬০০ হেক্টরেরও বেশি। পর্যটন উন্নয়ন কেবল লুলিয়াং জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে তাই নয়, বরং এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশকেও নিখুঁতভাবে রক্ষা করেছে। আমাদের জন্মস্থান দিনে দিনে আরো সুন্দর হয়েছে।"

 লুলিয়াং ইয়ুনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং শহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে । কুনমিংয়ের রেল স্টেশনে লুলিয়াংগামী অনেক পাবলিক বাস আছে। কুনমিং থেকে লুলিয়াংয়ে যাওয়ার পথে পাথর বন পার হতে হয়। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে আপনারা কিছু ক্ষণ ভ্রমণ করতে পারেন। কুনমিং থেকে লুলিয়াংগামী বাসের টিকিটের দাম মাত্র ২৫ ইউয়ান রেনমিনপি । যেতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগে। লুলিয়াংয়ে অনেক হোটেল আছে। আমার প্রস্তাব লুলিয়াংয়ের ফাইমা হোটেলে থাকবেন। এ হোটেলের খরচ অনেক কম, স্ট্যান্ডার্ড ঘরের ভাড়া প্রতিদিনের জন্য মাত্র ৪০ ইউয়ান রেনমিনপি । তা ছাড়াও সেখানকার পরিবহন ব্যবস্থাও সুবিধাজনক। লুলিয়াং আসলে চালের গুড়ো দিয়ে তৈরী নুডুলস ও নানা স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় খাবারগুলো খেতে ভুলবেন না।