v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-15 18:16:29    
৮০'র দশকের পর চীনের জন্মগ্রহণকারীদের পণ্যভোগের বিশিষ্ট(ছবি)

cri

 ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিখ্যাত পুঁজি বিনিয়োগ ব্যাংক --- প্যারিসের বিএনপি প্রাইম পেরেগ্রিনের প্রকাশিত এক গবেষণামূলক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীনে পরিবার পরিকল্পনা নীতি কার্যকর করার পর অর্থাত্ বিংশ শতাব্দীর ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণ করা যুবক-যুবতীরা চীনের পণ্যভোগের প্রধান শক্তির পরিণত হচ্ছে। পণ্যদ্রব্যের ট্রেড মার্ক, ফ্যাশন ও নির্দিষ্ট কিছু কাজের ব্যাপারে তাদের তীব্র চাহিদা রয়েছে। এটা চীনের পণ্যদ্রব্যের নিরন্তর উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করছে।

 ২০০৬ সালে কিছু বিশ্ব বিখ্যাত ট্রেড মার্ক বিশেষ করে ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারী চীনাদের জন্য চীনে তাদের বাজার কৌশল পরিবর্তন করেছে। যদিও বিশ্বে নামকরা ট্রেড মার্কের ঘড়ি -- সওয়াচ ৮ থেকে ৮০ বছর বয়স্ক লোকজনের ব্যবহারিক পণ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। কিন্তু চীনে তার প্রথম প্রতীকি রাষ্ট্রদূত বাছাই করার সময় ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের প্রিয় স্টার লি ইয়ু ছুনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কোকাকোলা কোম্পানিও বর্তমান যুবক-যুবতীদের জনপ্রিয় একটি নেট গেম কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা করে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে, যাতে যুবক-যুবতীদের তা পছন্দ হয়।

 এর পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যবসায়ীও দৃষ্টি আকর্ষনী উদ্যোগ নিয়ে ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারী পণ্যভোগীদের হাতছানি দিয়ে ডাকতে শুরু করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে লেনোভো কোম্পানি বিশেষ করে ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের জন্য নতুন প্রজন্মের ফ্যাশন মোবাইল ফোন উত্পাদন করেছে। লেনোভো কোম্পানি এ প্রথম বার তার সর্বদাই ব্যবসায়ীক ভাবমূর্তি বাতিল করে ফ্যাশন ও নেট বিনোদনের ধারণা যোগ দিয়েছে।

 লেনোভো গোষ্ঠীর উপ-প্রেসিডেন্ট লিউ চি জুন বলেছেন, এ নতুন মোবাইল ফোন ভালোভাবে বিক্রি করা যায় কিনা? এটা যুবক-যুবতীদের পছন্দের ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেছেন, "আমরা ভালোভাবে ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারী যুবক-যুবতীদের পরিসেবা দিতে পারলে এই মোবাইল ফোন বাজারে ভালো ব্যবসার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ কারণে আমরা যুবক-যুবতীদের জন্য খুব ভালো ভালো ডিজাইন করেছি । "

 গত বছর চীনের আর্থিক সংস্থাগুলোও পর পর ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের জন্য নানা নতুন পরিসেবা চালু করেছে। চীনের বাণিজ্যিক ব্যাংক ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের জন্য দুটি বিশেষ ক্রেডিট কার্ড বাজারে ছেড়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপ-পরিচালক থাং চি চুং বলেছেন, বিখ্যাত কার্টুন ভাবমূর্তি হেলো কিতির নামক ক্রেডিট কার্ড বাজারে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কম বয়সী নারীদের কাছে তা সমাদৃত হয়েছে। ২১ দিনের মধ্যে মোট ৬০ হাজার কার্ড বিক্রি হয়েছে। তাত্ক্ষণিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্র--- এম এস এন নামক ক্রেডিট কার্ডটি আধুনিক যুবকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। মিঃ থাং বলেছেন, "এম এস এন কার্ড হচ্ছে কার্যালয়ে কর্মরত কর্মীদের জন্য উত্পাদিত এক ধরণের ক্রেডিট কার্ড। এ কার্ড অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাজারে ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ছয় লাখেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।"

 এক জরীপ থেকে জানা গেছে, এখন চীনে ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারী প্রজন্মের সংখ্যা প্রায় ২৮ কোটি । তাঁরা চীনের পণ্যভোগের প্রধান শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। তারা সাধারণতঃ কাপড়-চোপড়, ইলেকট্রোনিক দ্রব্য, বিনোদনমূলক, উদ্ভাবনশীল পণ্য ও কার্টুন আঁকা পণ্য কিনে থাকে। ফ্যাশনের ওপর ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের আগ্রহ পণ্যদ্রব্যের নবায়নকে ত্বরান্বিত করেছে।

 ইয়েন চি নামে একজন মেয়ের ঠিক ৮০'র দশকের পর জন্ম হয়েছে। তিনি মোবাইল ফোন কেনার পর চীনের মোবাইল কোম্পানির এম-জোন বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমি ইন্টারনেট দেখার সময় প্রায় এম-জোন এর ওয়েবসাইট খুলে তার সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যগুলো পড়ি। যেমন কিছু দিন আগে পেইচিংয়ে গায়ক ফান ওয়েই বো এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। কেবল এম-জোন এর ব্যবহারকারীরা তা উপভোগ করতে পারে। আমি মনে করি, এটা হচ্ছে আমাদের বিশেষ অধিকার। তাই আমি প্রায়শঃই এ ধরনের তত্পরতায় অংশ নিই।"

 ইয়েন চি বলেছেন, যদি কোন নতুন ও ফ্যাশনেবল পণ্য উত্পাদিত হয়, তা ব্যবহার করার ব্যাপারে তার আগ্রহ বেশি। এর জন্য তিনি অনেক টাকা খরচ করেছেন। তিনি প্রায়শই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাপড়-চোপড় ও ডিজিটাল পণ্য কিনেন। ইন্টারনেটে বিক্রিকৃত পণ্যগুলোর দাম সাধারণ বাজারের চেয়ে সস্তা এবং নবায়নের গতি দ্রুত, রকমারিতাও বাজারের চেয়ে বেশি।

"সিটি পিক্টরিয়াল" ম্যাগাজিনের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক ম্যাডাম লি হুই মনে করেন, "৮০'র দশকের আগে জন্মগ্রহণকারীরা মনে করেন, সস্তা ও গুণগত মান ভালো পণ্য সবচেয়ে ভালো। কিন্তু ট্রেড মার্কার পিছনে যে সংস্কৃতি তার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে , সামাজিক চাহিদার ওপর তার তেমন খেয়াল ছিল না। কিন্তু এসব বিষয় ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের চোখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"

 ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীরা কেবল চীনের সংগীত, ইন্টারনেট, ডিজিটাল পণ্যের প্রবণতার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করছে তা নয়। তাদের বাবা-মার তুলনায় তারা চীনাদের ঐতিহ্যবাহী সাশ্রয় ও রক্ষণশীল পণ্যভোগের ধারণারও পরিবর্তন করেছে। এটা চীনের সমাজের পণ্যভোগের কাঠামো ও অভ্যাসের ওপর ধারাবাহিকবাবে প্রভাব ফেলবে।

 ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের জিনিস কেনার সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনুপাত খুব বেশী। কিন্তু কোন কারণে যদি সময় মতো ঋণ ফেরত দিতে না পারে , তাহলে কি ফলাফল হবে, তাও অনেকে স্পষ্টভাবে জানে না।

 চীনের একজন সমাজ বিজ্ঞানী চৌ সিয়াও চাং বলেছেন, "৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে এখন কারো কারো ২০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে। কারো কারো বিয়েও হয়েছে। কারো কারো বাচ্চাও হয়েছে। বহিঃবিশ্বে বহু সুযোগ থাকার পাশাপাশি নানা অনিশ্চয়তাও তাদের রয়েছে। সুতরাং তাদেরকে টেকসই পণ্যভোগের চিন্তাভাবনার কাথা জানানো উচিত।"

৫ থেকে ১০ বছর পর ৮০'র দশকের পর জন্মগ্রহণকারীরা চীনের অর্থনীতির কেন্দ্রীয় শক্তিতে পরিণত হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের বিরাট জনসংখ্যা ও বর্তমান পণ্যভোগ্যের কাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই এই প্রজন্মের সবার জন্য আরো বেশি সম্পত্তির যোগ সৃষ্টি করা ও আরো মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন উচিত।