v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-14 16:04:55    
মনেপ্রাণে জনসাধারণের কল্যাণে সচেষ্ট পার্টি সম্পাদক উ চিন ইন

cri

    চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির নিয়মিত বার্ষিক অধিবেশন এখন পেইচিংয়ে চলছে । এ উপলক্ষে আমাদের সংবাদদাতা রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য উ চিন ইনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তিনি মনেপ্রাণে কৃষকদের কল্যাণের জন্যে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । আজকের অনুষ্ঠানে তার কাহিনী বলবো আমি শি চিং উ ।

    চীনের হোনান প্রদেশের ওই হুই শহরে তৃণমূলের একজন কর্মকর্তা ব্যাপক কৃষকদের মধ্যে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন । তাঁর পরিচালনায় থাং চুয়াং নগরের পাহাড়ী এলাকার কৃষক কঠোর পরিশ্রম করে জমির সংস্কার করে অনাবাদী জমিকে উর্বর জমিতে পরিণত করেছেন । তার জন্যে স্থানীয় কৃষকরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ । একজন কৃষক বলেছেন ,

আমরা চিরকাল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এই শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা মনে রাখবো । আমরা সবসময় আমাদের উত্তরসুরীদের জানিয়ে দেবো যে , কে আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে দরিদ্র অবস্থা থেকে স্বচ্ছল অবস্থায় নিয়ে এসেছেন ।

    এ কর্মকর্তার নাম ই চিন ইন । তিনি হোনান প্রদেশের সিন সিয়াং শহরের গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির সহকারী পরিচালক ও ওই হুই শহরের থাং চুয়াং নগরের পার্টি কমিটির সম্পাদক । তিনি ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন , ১৮ বছর বয়সে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং ২৬ বছর বয়সে নগরের পার্টি কমিটির সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন । তখন থেকে তিনি ৩৬ বছর ধরে এ পদে বহাল রয়েছেন এবং উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন । চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির এ বছরের নিয়মিত বার্ষিক অধিবেশন চলাকালে আমাদের সংবাদদাতা উ চিন ইনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।

    আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন , উ চিন ই খুব সাদাসিধে পোষাক পরেন এবং হাসিমুখে সংবাদদাতাকে স্বাগত জানান । যখন তিনি প্রথম থাং চুয়াং নগরে গেলেন , তখন তিনি যে দৃশ্য দেখেছিলেন , তা এখনো তার মনে জাগরূক রয়েছে । তিনি বলেছেন , আমি ১৯৮৭ সালে থাং চুয়াংয়ে গিয়েছি । তখন সেখানকার কৃষকদের অবস্থা বেশ অসুবিধাজনক ছিল । তারা পেট ভরে খেতে পারতেন না এবং মাটি দিয়ে তৈরি কাঁচা ঘরে থাকতেন । সেসময় জমিচাষ করতে গিয়ে কৃষকরা আকাশের ওপর নির্ভর করতেন এবং খাবার পানি খেতেও তাদের কষ্টকর হতো । এমন অবস্থা সহ্য করতে না পেরে অনেক কৃষক গ্রাম ছেড়ে অন্য স্থনে যেতে বাধ্য হন । যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা সবাই তাদের বিদায় দিতে আসেন । ছাড়াছাড়ির সময় সবাই কেঁদে ওঠেন ।

     বিশ বছরের আগের ঘটনা স্মরণ করে উ চিন ইনের চোখে জল আসলো । তখন স্থানীয় কৃষকদের ঐকান্তিক আকাংক্ষা ছিল দরিদ্র অবস্থা থেকে স্বচ্ছল অবস্থায় যাওয়া । তিনি বলেছেন ,গ্রামের কর্মকর্তা হিসেবে আমরা কৃষকদের চাষ করা খাদ্য খাচ্ছি এবং কৃষকদের দেয়া কর থেকে আমরা বেতন পাচ্ছি । জনসাধারণের জন্যে কাজ না করলে এবং তাদের স্বচ্ছল অবস্থায় নিয়ে যেতে না পারলে জনগণের কাছে আমরা ঋণী হবো ।

    স্থানীয় কৃষকদের অবস্থা উন্নত করার জন্যে তিনি ও থাং চুয়াং নগরের অন্য নেতাদের সংগে মিলে এ নগরের প্রতিটি পাহাড় ও খাত ঘুরে ঘুরে দেখেছেন এবং পরিবারে পরিবারে তদন্ত চালিয়েছেন । অবশেষে তিনি থাং চুয়াংয়ের বাস্তব অবস্থা অনুসারে কৃষি উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন । তিনি বলেছেন , পশ্চিম দিকে পাথর , পূর্ব দিকে শাকসব্জি , উত্তর দিকে বন ও ফলমূল এবং দক্ষিণ দিকে খাদ্যশস্যের উন্নয়ন করা হবে । পাশাপাশি গ্রামীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সড়ক বেয়ে বহুমুখী উন্নয়ন ঘটানো হবে ।

    উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়নের পর উ চিন ইনের পরিচালনায় থাং চুয়াংয়ের গ্রামবাসীরা ব্যাপক পর্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন । উ চিন ইন একটানা কয়েক মাস ধরে কর্মস্থলে কৃষকদের সংগে একত্রে তাঁবুতে থাকেন এবং তাদের সংগে একসাথে খওয়া-দাওয়া করেন এবং কাজ করেন । তিনি একের পর একটি কর্মস্থলে অনাবাদী জমির সংস্কার করেন । তার পরিচালনায় এখনকার থাং চুয়াংয়ের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে । এখনকার থাং চুয়াংয়ের অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে উ চিন ইনের মুখে আর হাসি ধরে না । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , এখন পশ্চিম দিকের পাহাড়ী এলাকায় প্রতিটি খাতে পাথর কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে । রাতের বেলায়ও এখানে বাতির আলোকে আলোকিত রয়েছে । থাং চুয়াংয়ের কৃষকরাও আগের কাঁচা ঘর থেকে নতুন বাড়িতে ওঠেছেন । সারা গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৭ হাজারেরও বেশি পরিবার এখন আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন ফ্ল্যাট বাড়িতে ওঠেছে । কোনো কোনো কৃষক মোটর গাড়িও কিনেছেন । গ্রামের পূর্বদিকে ১ হাজার ৬৬৬ একর জমিতে শাকসব্জির চাষ করা হয়েছে । কৃষকদের আগের বার্ষিক আয় ছিল ১ হাজারেরও কম । এখন তাদের বার্ষিক আয় ১০ হাজারেরও বেশি ।

    থাং চুয়াংয়ের কৃষকদের জীবনযাত্রা অনেক উন্নত হয়েছে । অথচ সেখানে নতুন সমাজতান্ত্রিক গ্রামাঞ্চল নির্মাণের ক্ষেত্রে উ চিন ইনের অগ্রগতির উদ্যোগ থেমে যায় নি । ২০০০ সালে তিনি কর্মকর্তাদের সংগে নিয়ে তৃণমূলে গিয়ে তদন্ত চালিয়ে নতুন পরিস্থতিতে থাং চুয়াংয়ের নতুন বিকাশের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন ।

    একজন গ্রামবাসী উ চিন ইনের কথা বলতে গিয়ে তার চোখে জল আসলো । তিনি বলেন , সম্পাদক উ সত্যিই আমাদের আপন লোক । তিনি বছরের পর বছর সকলের সংগে পাহাড়ে বসবাস করেন । কোনো বিপদজনক কাজ হলে তিনি সবার আগে এগিয়ে আসেন । তিনি মনেপ্রাণে আমাদের কৃষকদের কল্যাণের জন্যে কাজ করছেন ।

    উ চিন ইন গত ৫ বছর ধরে চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য পদে বহাল রয়েছেন । আমাদের সংবাদদাতা তাকে প্রশ্ন করেছেন , আপনার জন্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক ব্যাপার কি ? উত্তরে তিনি বলেছেন ,

    জনসাধারণের মতামত ও আবেদন আমি গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের অধিবেশনে আনতে পারলে , অধিবেশনে তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে পারলে , আমার মাধ্যমে জনসাধারণের সমস্যাগুলো দেশের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে এসব সমস্যা সুরাহা করতে পারলেই আমি আনন্দিত হবো ।