v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-13 21:04:04    
মিয়াও জাতি ও ' লম্বা শিং'

cri
     দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের সুগা থানায় মিয়াও জাতির একটি শাখা- তথাকথিত লম্বা শিংয়ের মিয়াও জাতি বাস করে । এই জাতির লোকসংখ্যা মাত্র ৪ হাজারের একটু বেশি । তারা উঁচু পার্বত্য এলাকায় থাকে এবং রহস্যময় ও আদিম জীবনযাপন করছে । সম্প্রতি সংবাদদাতা লম্বা শিংয়ের মিয়াও জাত অধ্যুষিত গ্রাম-সুগা থানার লুংগা গ্রামে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । 

    সংবাদদাতার আসার খবর জেনে লুংগা গ্রামের লম্বা শিং মিয়াও জাতির তরুণ -তরুণীরা উত্সবের পোষাক পরলেন । যখন সংবাদদাতা গ্রামের সামনে পৌঁছলেন , তখন অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য তারা একদিকে চালের মদ পরিবেশন করছেন , অন্যদিকে গান গাইছেন । স্থানীয় রেওয়াজ অনুযায়ী , গ্রামে প্রবেশের জন্য অতিথিদের একটানা তিন কাপ মদ খেতে হয় । স্থানীয় গাইড সংবাদদাতাকে জানালেন , স্বাগতিকের মদের কাপ হাতে না নিয়ে সামান্য একটু খেলেও চলে ।

     লুংগা গ্রামের লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েরা লম্বা চুলকে কাঠ দিয়ে তৈরী একটি লম্বা শিংয়ের উপরে বাঁধিয়ে দেয় । চুলসহ এই কাঠের লম্বা শিং দেখতে খুব ভারী । এই বৈশিষ্ট্যের জন্য লম্বা শিং মিয়াও নাম হয়েছে । তাহলে তারা কেন লম্বা শিং-এ চুলকে সাজাতে পছন্দ করে ? সুগা থানার লম্বা শিং মিয়াও জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে মিঃ মু হুই স্যু বলেছেন ,

    কৃষি ক্ষেত্রে লম্বা শিং মিয়াও জাতি গরুর ওপর নির্ভর করতো । সুতরাং তারা গরুর প্রতি সর্বান্তকরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো । কেউ কেউ মনে করে যে , লম্বা শিং মিয়াও জাতি শিকারের ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতো । অরণ্যে হরিণসহ নানা রকম শিংওয়ালা জীব-জন্তু ছিল । শিকারীদের মাথায় শিং থাকলে প্রাণীদের আর্কষণ করা যেতো ।

   লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়ে স্যুং চি চেই সংবাদদাতাকে বলেন , লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েরা নিজের মাথা থেকে পড়া চুল চটের সুতায় বাঁধিয়ে দিতো এবং এই সব চুল যৌতুক হিসেবে নিজের মেয়েকে উপহার দিতো । যুগ যুগ ধরে সঞ্চয় হলে লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েদের চুল অধিক থেকে অধিকতর হয়ে উঠেছে । তারা পূর্বপুরুষদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিজেদের চুলের উপরে বাঁধিয়ে রেখেছে ।

    চুল এই জাতির একটি বৈশিষ্ট্য । কৃষি কাজ করার সময়ও বৃদ্ধারা পূর্বপুরুষদের চুল মাথায় সাজাতে পছন্দ করে । লম্বা শিংয়ে সাজানোর জন্য ব্যবহার্য তাদের চুল সাধারণতঃ মা বা দাদীর । সুতরাং মায়ের চুলের সঙ্গে অল্পবয়সী মেয়েদের চুলও বাঁধা হয় । চুলের বাইরে কালো পশমী সুতায় মুড়িয়ে দেয়া হয় ।

    লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েদের চুল সাজানোর কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখানোর জন্য স্থানীয় মিয়াও জাতির মেয়েরা চুল আঁচড়ানো ও বেণী বোনার কৌশল পরিবেশন করেছে । তারা দক্ষ ও পারদর্শী । কিন্তু এই সাজানোর কাজ করার জন্য সাধারণতঃ ৪০ মিনিট লাগে । চুল আঁচড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লম্বা শিং মিয়াও মেয়েদের কোমল গড়ন এবং মৃদু হাসিতে ভরা চেহারা অপূর্ব সৌন্দর্যময় চিত্রের মতো সংবাদদাতার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে । 

    লুংগা গ্রামে সর্বত্রই পরিপাটি খড়ের ঘর ছড়িয়ে আছে । এই ধরনের খড়ের ঘরের ছাদ খাড়া। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন , এই ধরনের খড়ের ঘর পানি নিবারণ এবং খড় পচে না যাওয়ার জন্য অনুকূল ।

    ছাদের নীচে জাতীয় পোষাক পরা লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েরা একাগ্রচিত্তে কাপড়ে বিবিধ ডিজাইন আঁকছিল । পোষক আরো সুন্দর বোনার জন্য লম্বা শিং মিয়াও জাতির মোয়েরা প্রাকৃতিক উদ্ভিদকে রঙের পদার্থ হিসেবে সুতী কাপড়ের উপরে বিচিত্র ডিজাইন আঁকে । জানা গেছে , লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েরা পোষাক বোনার পাশাপাশি কাপড়ে রঙ করা আর ডিজাইন আঁকার কাজে খুব পারদর্শী । ওয়াং চিয়া ইং নামে একটি মেয়ে ডিজাইন তৈরীর জন্য তার কোন অনুকরণ লাগে না । তারা নিজের কল্পনা অনুসারে নানা রকম ডিজাইন প্রস্তুত করতে সক্ষম ।

    ছোট বেলায় সে কাপড়ে ডিজাইন তৈরী ও সূচীকর্মের কৌশল শিখতে শুরু করেছে । তখন একটি পোষাক বোনার জন্য এক মাসেরও বেশি সময় লাগতো ।

বস্ত্রবয়ন ও সূচীকর্ম চর্চা করা লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েদের ছোট বেলায় শেখার একটি প্রয়োজনীয় কৌশল ।

    আপনারা যা শুনেছেন , তা লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েদের তাঁতযন্ত্রের শব্দ ।

    লম্বা শিং মিয়াও জাতির মেয়েদের পোষাক বোনার নৈপুণ্য উপভোগ করার পর সংবাদদাতা লুংগা গ্রামের যাদুঘরে গিয়েছিলেন । ১৯৯৮ সালে লম্বা শিং মিয়াও জাতির অনন্য সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার জন্য চীন ও নরওয়ের যৌথ উদ্যোগে এই যাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে ।

    সংবাদদাতা এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখেছেন । যাদুঘরের মেঝের আয়তন ১২০ বর্গ কিলোমিটার । ওখানে লম্বা শিং মিয়াও জাতির আবাস , জামা-পোষাক , জাতীয় বাদ্যযন্ত্র , কৃষিকর্ম ও নিত্য জীবনধারণে ব্যবহার্য দ্রব্য , স্থানীয় বিয়ে ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠান আর ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের দ্রব্যাদি প্রদর্শিত হয় । অডিও-ভিডিও ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সব তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে ।

    জাতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার লক্ষে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ যাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে । কারণ মানব জাতির সামাজিক ব্যবস্থা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে । বাইরের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও প্রভাব বাড়ানোর পাশাপাশি কোন কোন স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা দেখা যাচ্ছে । সুতরাং ভাষা , রীতি-নীতি , চালচলনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ও উদ্ধারের কাজ চালাতে হবে ।

   সূর্যাস্ত হচ্ছিল । সংবাদদাতা লম্বা শিং মিয়াও জাতির তরুণ তরুণীদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন । তরুণ তরুণীরা গান গাইছেন । সংবাদদাতার মনে লম্বা শিং মিয়াও জাতির অসাধারণ আচার ব্যবহারের ব্যাপারে আবেগ ফুটে উঠছিল ।