v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-09 18:49:10    
হুয়িল চেয়ারের লেখিকা চাং ইয়ুচেন

cri
    চীনের হুপেই প্রদেশের সিইয়েন শহরের ছিংশান থানার চিয়াহো গ্রামে একটি ছোটো দোকান আছে । যারা জিনিস কিনতে আসেন তারা স্বাধীনভাবে জিনিস বেছে নেন এবং সচেতনভাবে দাম দেন । এই দোকানের মালিক হলেন চাং ইয়ুচেন নামে একটি যুবতী মেয়ে । এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় তিনি দুটি পা হারিয়েছেন বলে তাকে বাধ্য হয়ে এখন সবসময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় । কিন্তু গত বিশ বছর ধরে তিনি পরপর "মেয়ে সাহিত্য", "যুব লেখক", " গল্পসংকলন" সহ প্রায় ত্রিশটিরও বেশী পত্রপত্রিকায় প্রায় ২০০টি সাহিত্য কর্ম ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন । এই কারণে সিইয়েন শহরের লেখক সমিতি তাকে সদস্য হিসেবে গ্রহণকরেছে ।

    ১৯৮৭ সালের মে মাসের একদিন ,চাং ইয়ুচেন ধান ক্ষেতের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে কাপড় ধুতে নদীর দিকে যাচ্ছিলেন, হঠাত অসাবধানে তিনি আছাড় খেয়ে উপর থেকে নদীতে পড়ে যান । তাঁর মেরুদন্ড চুর্নবিচুর্ন হয়ে যায় । ফলে তাঁর দুই-তৃতীয়াংশ শরির অবশ হয়ে যায় । তখন থেকে এ পর্যন্ত তিনি বিছানায় শুয়ে বিশ বছর কাটিয়েছেন । দুর্ঘটনার সময় তার বয়স মাত্র ১৭ বছর ছিল ।

    গত বিশ বছরে কোথায় তার মেরুদন্ডের চিকিত্সা করতে পারে এমন কথা শুনলে পথ যত দূর হোক না কেন চিকিত্সা পাবার জন্যে বাবা তাকে পিঠে নিয়ে সেখানে যেতেন । কিন্তু ইয়ুচেনের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি । যাতে ইয়ুচেন বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পান বাবা বিশেষভাবে ইয়ুচেনের জন্য রাস্তার পাশে এক ছোটো দোকান খোলেন । এই ভাবে ইয়ুচেন একদিকে বিছানায় শুয়ে জিনিস বিক্রি করতেন অন্য দিকে ক্রেতার সঙ্গে গল্প করতেন ।

    এক আকস্মিক সুযোগে চাং ইয়ুচেন "চীনা বিকলাঙ্গ পত্রিকা"-র গ্রাহক হন । পত্রিকাটি তাঁকে জীবনে আশার আলো দেখায় । তার মতো অনেক বিকলাঙ্গ বন্ধুর গল্প পড়ে ইয়ুচেন অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং অনুপ্রাণিত হন । তিনি নিজের কথা নিয়ে গল্প লিখে পত্রিকাটিরকাছে পাঠান । তিনি ভাবতে পারেন নি যে , তার গল্পটি " চীনা বিকলাঙ্গ পত্রিকায়" প্রকাশ করা হবে । প্রবন্ধের মাধ্যমে অনেক লোক ইয়ুচেনের পরিচয় পেয়ে যান। ইয়ুচেন এখন প্রত্যেক দিন দশ-বারোটা চিঠি পান ।

    সম্পাদকদের স্বীকৃতি ও রোগী বন্ধুদের সান্ত্বনায় ইয়ুচেনের সাহিত্য রচনার আস্থা আরও জোরদার হয়েছে । মেয়েকে সাহিত্য রচনা করতে উত্সাহ দেয়ার জন্য ইয়ুচেনের বাবা মা এখান ওখান থেকে নানা ধরণের বই ধার করে আনেন। শারিরীক অবস্থার কারণে ইয়ুচেন অত্যন্ত কষ্টে বিছানায় শুয়ে বই পড়েন ও প্রবন্ধ লেখেন । কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে ইয়চেন যে প্রবন্ধগুলো পাঠান তার মধ্যে কিছু প্রবন্ধের কোনো উত্তর পাওয়া যায় না আর কিছু প্রবন্ধ আগের মতোই ফেরত পাঠানো হয় । সাহিত্য রচনার মান উন্নত করার জন্য ইয়ুচেন করেস পন্ডেন্সকোর্সে নাম দেন । কয়েক বছর পর ইয়ুচেনের রচনার মানের অনেক উন্নতি হয় । ১৯৯০ সালে তার রচিত " জীবন" নামে একটি কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । কবিতার কথাগুলো এমনিঃ

    সব দুঃখ-বেদনা তোমার জানালায় থেকে যায় তা নয় ,

    হয়ত সামনে এক আকস্মিক চৌরাস্তা দৃশ্যমান,

    তুমি ভুল মনে করো তোমার আর পথ নেই ,

    শীতের বারান্দায় দাঁড়ালেই

    কেবল রোদের উষ্ণতা অনুভব করতে পারবে ,

    জীবনকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করলেই

    কেবল সত্যিকারভাবে জীবনের মূল্য বুঝতে পারবে।

    গ্রামবাসীদের ক্ষেতে পরিশ্রম দেখে চাং ইয়ুচেন " গম" শিরোনামে এক ছোটো উপন্যাস লিখেছেন । উপন্যাসটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পরে " ধারাবাহিক উপন্যাস" শিরোনামে মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । রচনার উপাদান সংগ্রহ করার জন্য চাং ইয়ুচেন মাঝেমাঝে বাবাকে ও প্রতিবেশীদেরকে বাইরের নতুন ঘটনা জানাতে অনুরোধ করতেন । তার "শরত্কালের স্বগতোক্তি " শিরোনামে কবিতা স্থানীয় সাহিত্য প্রতিযোগিতায় বিশেষ পুরস্কার পায় । কিন্তু যখন ইয়ুচেনের সাহিত্য রচনায় অনবরত অগ্রগতি হচ্ছিল তখন ইয়ুচেন জীবনের আরেকটি আঘাতের সম্মুখীন । তার বাবা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর মারা যান ।

    বাবা মারা যাওয়ার পর , বাড়ির সংসারের বোঝা ও কৃষিকাজ সবই ইয়ুচেনের মার উপর পড়ে । ইয়ুচেনের মার বয়স এখন ৬৫ বছর । দীর্ঘকাল ধরে শারিরীক পরিশ্রমের কারণে ইয়ুচেনের মার স্বাস্থ্যএখন দুর্বল । এর আগে এক সময় একটানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় ইয়ুচেনের বাড়ির পিছনের দেয়াল ধ্বসে পড়ে । ইয়ুচেন বলেন , তিনি সবচেয়ে বৃষ্টির দিন ভয় করেন । কারণ তার মা প্রত্যোক দিন এই প্রায় ভেঙ্গে পড়া বাড়িতে রান্না করেন । যদি কোনো দিন বাড়ির মাটির দেয়াল আবার ভেঙ্গে যায় তাহলে পরিণাম কি হবে তিনি ভাবতে পারছেন না । চাং ইয়ুচেনের কাহিনী শুনে লোকেরা মুগ্ধ হয় ,তারা ইয়ুচেনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ান । স্থানীয় সরকার ইয়ুচেনের থাকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে ।