(ওয়েন দাইচং)
বসন্তকাল ফিরে এসেছে । চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব সদ্য সমাপ্ত হওয়ার পর পরই রাজধানী পেইচিংয়ে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস ও রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক আধিবেশন শুরু হচ্ছে । এই দুই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা পেইচিংয়ে আসার পাশাপাশি বসন্ত উত্সবের আগে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়া গ্রামীণ শ্রমিকরাও ধারাবাহিকভাবে তাদের কর্মস্থানে প্রত্যাবর্তন করেছেন । গত কয়েক বছরে শহরে চাকরিরত গ্রামীণ শ্রমিক বিষয়ক সমস্যাকে অন্যমত আকর্ষণীয় বিষয় বলে এই দুই অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । তাহলে গ্রামীণ শ্রমিকরা কেমন করে বসন্ত উত্সব কাটিয়েছেন এবং তাদের বর্তমান অবস্থা কি ? এই প্রশ্ন নিয়ে সিআররাই'র নিজস্ব সংবাদদাতা পেইচিংয়ের একটি নির্মাণস্থানের গ্রামীণ শ্রমিকদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।
মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের গ্রামীণ শ্রমিক চাং ইয়্যু শি আনন্দের সঙ্গে সংবাদদাতাকে বলেন ,
তিনি প্রফুল্লচিত্তে এই বসন্ত উত্সব কাটিয়েছেন । বসন্ত উত্সব আগে তিনি ৫ হাজার ইউয়ান বেতন পেয়েছেন । নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি একটি বিরাট রঙ্গিন টেলিভিশনসহ বেশ কিছু কেনা-কাটা করেছেন । বসন্ত উত্সবের সময় সপরিবার এক দিকে নববর্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন , অন্য দিকে তারা চাওচি নামে চীনাদের জনপ্রিয় খাবার খেলেন ।
গত দু' বছরে চীনের ব্যাপক গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন বিষয়ক সমস্যা নিষ্পত্তি করা হয়েছে । ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । ব্যাপক গ্রামীণ শ্রমিকদের মুখের হাসিখুশি থেকে তা দেখা দিয়েছে । গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন বিষয় যে সুষ্ঠুভাবে মীমাংসিত হয়েছে , তার মূলে রয়েছে গত কয়েক বছরে পার্টি ও সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা ।
চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য , কৃষক সমস্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওয়েন দাই চুং গ্রামীণ কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,
পার্টি ও সরকার গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন সমস্যা নিষ্পত্তি করার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে , তা প্রশংসাযোগ্য । এর আগে গ্রামীণ শ্রমিকরা সময় মতো বেতন পেতেন না । সুতরাং বাড়িতে ফিরে নববর্ষ কাটানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না । এখন এই সমস্যা মোটামুটি দূর হয়ে গেছে । চীনে গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন যথাযথ সময়ে প্রদান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে । এই ক্ষেত্রে সরকার ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের কাজ জোরদার করেছে । চীনের বিভিন্ন স্তরের ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রম বিভাগও গ্রামীন শ্রমিকদের অসুবিধা কাটিয়ে উঠার কাজেও তত্পর রয়েছে । ফলে গ্রামীণ শ্রমিকদের আইনী স্বার্থ সুরক্ষা পেয়েছে । তা ছাড়া ২০০৬ সালে চীনে কৃষি কর আদায় ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে । এতে কৃষকদের কাঁধ থেকে একটি অসহণীয় বোঝা নেমে গেছে ।
কৃষি , গ্রামাঞ্চল ও কৃষক বিষয়ক সমস্যা চীন সরকারের একটি প্রধান কাজ বলে মনে করা হয় । কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষা করা ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য সরকার নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে । কৃষি কর তুলে নেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার বছরে কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রায় এক শো বিলিয়ন ইউয়ান অর্থ বরাদ্দ করে থাকে । কৃষি কর্ম ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ করার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের নানা ধরনের ফি মওকুফ করা ও ভর্তুকী দেয়া বিষয়ক ধারাবাহিক নীতিও প্রবর্তন করা হয়েছে । এই কর্মসূচী আনুযায়ী , চীনের কৃষকদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ইউয়ান বৃদ্ধি পাবে । সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থায় কৃষকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে । এ বছরের শেষ নাগাদ লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচের দিক থেকে গ্রামীণ বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণরত ছাত্রছাত্রীদের যাবতীয় ফি মওকুফ করা হবে । শহরগুলোতে চাকরিরত গ্রামীণ শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হবে । এতে শহরে চাকরিরত গ্রামীণ শ্রমিকদের দুশ্চিন্তাও নিরসন করা হবে ।
এ থেকে বোঝা যায় , চীনে মোট ১৩০ কোটি লোকসংখ্যা আছে । এর মধ্যে ৮০ কোটি লোক গ্রামাঞ্চলে থাকে । চীনে প্রায় ৭৬.৮ কোটি শ্রম শক্তির মধ্যে গ্রামীণ শ্রম শক্তির অনুপাত ৬০ শতাংশেরও বেশি । সুতরাং কৃষি , গ্রামাঞ্চল ও কৃষক বিষয়ক সমস্যা নিষ্পত্তি করার জন্য শুধু গ্রামাঞ্চলের আওতায় সীমিত রাখতে হবে না , বরং শহরে চাকরিরত গ্রামীণ শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে । গ্রামীণ শ্রমিক বিষয়ক সমস্যা প্রসঙ্গে মিঃ ওয়েন দাই চুং বলেন ,
গ্রামীণ শ্রমিক বিষয়ক সমস্যা করতে হলে তাদের আয় বাড়াতে হবে । চীনে ২০ কোটি গ্রামীণ শ্রমিক আছে । গত বছরের আগস্ট মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে , ২০ কোটি গ্রামীণ শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকাংশের মাসিক আয় ৮ শো ইউয়ানের নীচে । চীনের কৃষক ছাড়া তারাও ন্যূণতম উপার্জনকারী । গ্রামীণ শ্রমিকদের আয় বাড়ানো না গেলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করাও সম্ভব হবে না ।
ওয়েন দাই চুং বলেছেন , গ্রামীণ শ্রমিকদের সামাজিক বীমা ব্যবস্থাও আরো পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে হবে । চিকিত্সা , কাজের জন্য আহতদের সমস্যা সুষ্ঠু নিষ্পত্তি , বেকার বীমা ও জীবন বীমাসহ নানা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে হবে । এই সব সমস্যা নিষ্পত্তি করা গেলে গ্রামীণ শ্রমিকদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে । গ্রামীণ শ্রমিকদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের কাজও জোরদার করতে হবে । তাদের কাজের দক্ষতা বাড়ালে শ্রম শক্তির মূল্য ও বেতনের মানও বৃদ্ধি পাবে ।
তিনি মনে করেন , গ্রামীণ শ্রমিক বিষয়ক সমস্যা নিষ্পত্তি করা গেলে চীনে সুষম সমাজ গড়ে তোলার ব্যাপারে ব্যাপক ত্বরান্বিতমূলক ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে ।
শহর ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবধান চীনে সুষম সমাজ গড়ে তোলার একটি সমস্যা । এতে সমাজের অস্থিতিশীলতাও বেড়ে যাওয়া সম্ভবনা রয়েছে । সুতরাং গত কয়েক বছরে চীন সরকার কৃষি , গ্রামাঞ্চল ও কৃষক বিষয়ক সমস্যা নিষ্পত্তির ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে । গ্রামাঞ্চল সমস্যার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি করা গেলে সুষম সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বিররাট চালিকা -শক্তি সৃষ্টি করবে । গ্রামীণ শ্রমিক বিষয়ক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে যেমন শহর ও গ্রামাঞ্চল , মেমনি কৃষকদের জন্য আরো অনুকূল হবে ।
|