v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-03-07 20:43:30    
পেইচিংয়ের অভিনব সিউসুইচিয়ে বাজার

cri

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের বিখ্যাত পূর্ব ছিয়াং আন রাজপথে রয়েছে একটি সুপরিচিত পোষাক বাজার - সিউসুইচিয়ে বাজার । এখানকার চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রেশমী কাপড় বহু বিদেশী বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । তবে অতীতে এ বাজারে কোনো কোনো দোকানদার বিখ্যাত মার্কার পোষাকের অনুকরণে নকল পোষাক বিক্রি করতেন । তবে গত কয়েক বছরে বাজার ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও দোকানদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । এখন এ বাজারে যেসব পোষাক বিক্রি করা হচ্ছে , সেগুলো সবই খাঁটি মার্কার পোষাক । সম্প্রতি ইইউ বাণিজ্য সমিতির মেধাস্বত্ব কমিটির চেয়ারম্যান পাওল রানজার্ড নিজের হাতে এখানকার ৪০টি দোকানদারকে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে উন্নত দোকানদারের সম্মানে ভূষিত করেছেন ।

    সিউসুইচিয়ে বাজার পেইচিংয়ের পূর্ব ছিয়াং আন রাজপথে অবস্থিত ২ থেকে ৩ শ' মিটার লম্বা রাস্তায় একটি বাজার ছিল । গত শতাব্দির আশির ও নব্বইয়ের দশকে রেশমী কাপড় বিক্রি করা হতো বলে সুপরিচিত ছিল । এ বাজার চীনে বিদেশী দূতাবাসের কাছাকাছি রয়েছে বলে বাজারটি অনেক বিদেশী পেইচিংয়ে বেড়াতে আসলে এখানে আসতে পছন্দ করেন । এক সময় কোনো কোনো দোকানদার বিখ্যাত মার্কার অনুকরণে নকল পোষাক বিক্রি করতেন । এসব পোষাকের দাম কম বলে অনেক বিদেশী এখানে পোষাক কিনতে পছন্দ করতেন ।

     গত কয়েক বছরে প্রথাগত মার্কা ও ক্রেতাদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে সিউসুইচিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনা বিভাগ বাজারটি পরিচালনার কাজ জোরদার করেছে । দোকানদাররাও ক্রমে উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে , নকল পোষাক বিক্রি করে তারা মেধাস্বত্ব লংঘন করেছেন । তিন বছর আগে সিউসুইচিয়ে বাজার সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয় । এক হাজারেরও বেশি দোকানদার সাততলার অভিনব দালানে ওঠেছেন । মিস্টার হুয়া শি চুন এ বাজারের একজন পুরনো দোকানদার ছিলেন । অতীতে তিনিও নকল কাপড় বিক্রি করেছিলেন । তবে এখন তিনি সবসময় খাঁটি কাপড় বিক্রি করেন এবং স্বতস্ফুর্তভাবে ক্রেতাদের কাছে খাঁটি কাপড় কেনার পরামর্শ দেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    অতীতে আমি প্রধানত নকল পোষক বিক্রি করতাম । এখন আমার ধারণার একেবারেই পরিবর্তন হয়েছে । অনেক বিদেশী আগের ধারণা অনুসারে এ বাজারে নকল পোষাক কিনতে চান । তবে এখন আমাদের ধাণনার পরিবর্তন ঘটেছে । আমরা এখন ভালো কাজ করছি বলে আমি মনে করছি ।

    মিস্টার হুয়ার দোকানের আয়তন দেড় শ' বর্গমিটার । তার দোকানে নানা ধরণের জিনিস বিক্রি করা হয় । পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কাপড়-চোপড়, টুপি ও জুতো । তার দোকানে ফ্যাশন অনুযায়ী পোষাক ও টুপি মডেলে পরানো হয় , যাতে ক্রেতারা তাদের পছন্দমত জিনিস কিনতে পারেন ।

    আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন , সিউসুইচিয়ে বাজারে পোষাকের দোকানের পাশাপাশি বহু সংখ্যক মনি-মুক্তার দোকান ও চীনের ঐতিহ্যবাহী হস্তজাত পণ্যের দোকান খোলা হয়েছে । এ অভিনব বাজার বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।

    ক্যানাডা থেকে আসা জিম মাইকেল পেইচিংয়ে ২০ দিনের জন্যে অবস্থান করছেন । এ ২০ দিনের মধ্যে তিনি দুইবার এ সিউসুইচিয়ে বাজারে এসেছেন । তিনি বলেছেন ,

    এ বাজারে জিনিস কেনা সত্যিই একটি মজার ব্যাপার । এখানে দামাদামি করাও খুবই মজা লাগে । এখানকার দোকানদাররা খুবই বন্ধুভাবাপন্ন । জিনিসপত্রের মানও বেশ ভালো । আমি ও আমার স্ত্রী ব্যাগ , জ্যাকেট ও উলের কাপড়ের মত অনেক জিনিস কিনেছি । এসব জিনিসের তুলনায় আমার বাক্স ছোট মনে হচ্ছে । তাই এসব জিনিস রাখার জন্যে আমাকে আরেকটি বড় বাক্স কিনতে হবে ।

    সম্প্রতি এ বাজারে চীনের ঐতিহ্যিক মার্কার পণ্যের দোকান খোলা হয়েছে । এ দোকানগুলো বহু বিদেশীকে আকৃষ্ট করেছে । যেমন বিখ্যাত রুইফুসিয়াং এ বাজারে একটি শাখা দোকান খুলেছে । রুইফুসিয়াংয়ের এক শ' বছরের ইতিহাস রয়েছে । এ দোকানে প্রধানত রেশম ও উলের কাপড় বিক্রি করা হয় । এ শাখা দোকানের ম্যানেজার জেনারেল চৌ কোও পিং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার দোকানের কাপড়ের মান খুবই উত্কৃষ্ট । কাপড় সরাসরি সু চৌ ও হাং চৌ থেকে এখানে আনা হয়ে থাকে । তিনি বলেছেন ,

    আমাদের জিনিসপত্র সবই আমাদের সাধারন দোকান থেকে যোগাড় করা হয় । সবই সু চৌ ও হাং চৌ থেকে বিশেষভাবে আনা হয় । আমাদের পণ্যগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে । ক্রেতাতের জন্যে আমাদের দায়ী হতে হবে ।

    রুই ফু সিয়াং দোকানের কাপড় উত্কৃষ্ট বলে এখানে আসলে অতিথিদের মধ্যে খুব কম লোক খালি হাতে চলে যান । অনেক বিদেশী এ দোকান থেকে কাপড় কেনার পর চীনের ঐতিহ্যিক থাং পোষক অনুসারে কাপড় বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং সংগে সংগে এ রকম কাপড় পরতে চান । কেন না সেই চীনা পোষাক পরতে সত্যিই সুন্দর লাগে ।

    অনেক বিদেশী পেইচিংয়ে খুব কম সময় অবস্থান করেন । বিদেশী অতিথিদের বিশেষ চাহিদা মেটানোর জন্যে রুই ফু সিয়াং দোকান দ্রুত পোষক তৈরির সার্ভিস চালু করে । এ দোকানের ম্যানেজার জেনারেল চৌ বলেছেন ,

    আমরা অল্প দিনের মধ্যে সুনাম অর্জন করেছি । ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমরা ক্রেতাদের জন্যে তাদের প্রয়োজনীয় পোষাক তৈরি করতে পারি । দিনের বেলা ও রাতের বেলার মাল পাঠানোর জন্যে আমাদের কোম্পানি বেশ কয়েকটি গাড়ির ব্যবস্থা করেছে । ক্রেতাদের সময় অনুসারে আমরা সবসময় সময়মত তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড়-চোপড় বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে তাদের হাতে পৌছে দিই । তারা আমাদের তৈরি চীনা পোষাক পরে চীন থেকে স্বদেশে ফিরে যান । তাই আমাদের দোকান বিদেশীদের মধ্যে বেশ সমাদর পেয়েছে ।

    দোকানদারদের চীনের জাতীয় মার্কার পোষাক বিক্রি করতে উত্সাহিত করার জন্যে সিউ সুই চিয়ে বাজার ৩ কোটি ইউয়ান দিয়ে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ তহবিল গঠন করেছে ।

    এ ব্যবস্থার কল্যাণে এ বাজারের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । এ পরিবর্তন ইইউ বাণিজ্য সমিতির মেধাস্বত্ব কমিটির চেয়ারম্যান পাউল রানজার্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । কিছুদিন আগে তিনি এ বাজারে এসে ৪০জন দোকানদারকে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে উন্নত দোকানদারের সম্মানে ভূষিত করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে , আমরা তা আনন্দের সংগে লক্ষ্য করেছি ।