ছাও পাও মিং একজন লোকবিশেষজ্ঞ। ৩০ বছর ধরে তিনি পূরের পাহাড়াঞ্চলে গিয়ে কিছু অজানা অথবা নির্বাপিত হওয়া লোকজ সংস্কৃতি খুঁজ বা সংগ্রহ করার চেষ্টা করে এসেছেন। তার প্রচেষ্টায় বাজপাখী শিকারের রীতিনীতি জনসাধারণ জেনে গেছেন।
উত্তর-পূর্ব চীনের চিন লিন প্রদেশের পাহাড়াঞ্চলের প্রবাসীরা কয়েক'শ বছর ধরে বাজপাখী পালন করার নীতি অনুসরণ করে এসেছে। কিন্তু ছাও পাও মিং তা প্রকাশ করার আগে বাইরের কেউ এই নীতি জানে না। এই বিষয় ছাও পাও মিং'র বই "অবশেষ বাজপাখী শিকারী" সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
এই বইটি ছবি ও মুখের কথার মাধ্যমে বাজপাখী শিকারের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়। এই বই লেখার জন্য ছাও পাও মিং একজন বাজপাখী শিকারি চাও মিং চা'র সঙ্গে পাহাড়ে দুই বছর কাটিয়েছেন। ছাও পাও মিং বলেছেন:
"দুই বছর ধরে আমি তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। পাহাড়ের ছোট ছাওয়ায় আমি তার বাজপাখী শিকার ও পালন করার প্রক্রিয়া এবং তার মুখের কথা সব লেখে দিয়েছি। ৪০০ বছরের মধ্যে এই দক্ষতা প্রায় হারিয়ে গেছে। কি হলো অস্পর্শনীয় সংস্কৃতি উত্তরাধিকার? মানব জাতি'র বুদ্ধি। তা হলো এক রকম অগম্য ও প্রক্রিয়া। আমরা বাজপাখী রক্ষা করি, কিন্তু বাজপাখী শিকারের দক্ষতা হলো এক রকম সংস্কৃতি। বাজপাখী শিকারিদের জীবন ও তাদের অগম্য হলো মানব জাতি'র একটি অমূল্য উত্তরাধিকার।"
এই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর চিন লিন প্রদেশের ইয়ু লো গ্রাম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে এই গ্রাম দেখতে আগ্রহী। এবং ছাও পাও মিং'র এই বইটি উত্তরাধিকার সুরক্ষা করার চেষ্টার মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
৫৮ বছর বয়স্ক ছাও পাও মিং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর সত্তর দশক থেকে তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে লোকজ সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। "অবশেষ বাজপাকী শিকারি"সহ তিনি মোট ৬৪টি লোকজ সংক্রান্ত বই লিখেছেন। আরো ৭চি বই প্রকাশিত হবে।
ছাও পাও মিং এখন হলেন চিন লিন প্রদেশের লোকজ বিশেষজ্ঞ পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু অফিসের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে তাকে বেশি দেখা যায়। সমৃদ্ধ বন ও খনিজ সম্পদের কারণে চিন লিনে অনেক রকম লোকজ সংস্কৃতির নীতি আছে। কিন্তু এতের মধ্যে অনেক কিছু নির্বাপিত হওয়ার সম্মুখীন হচ্ছে। ছাও পাও মিং বলেছেন, তার কাজ হলো মানব জাতি'র ভুলে যাওয়া স্মরণের উদ্ধার করা। তিনি বলেছেন:
"কিছু রীতিনীতি শুধু মানুষের স্মৃতিতে থাকে। মানুষের মুখের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শিখিয়ে দেয়া হয়। আসলে সংস্কৃতি বিজ্ঞানের চেয়ে আরো সমৃদ্ধ। কিছু অঞ্চলের মানুষ নিজের ভাষা নেই, কিন্তু নিজের বৈশিষ্টময় সংস্কৃতি আছে। কিন্তু এসব রীতিনীতি নির্বাপিত হচ্ছে। আমার যেন এক আসক্তি আছে, তা হলো এসব নির্বাপিত হওয়া সংস্কৃতি ভাষার মাধ্যমে রক্ষা করা।"
তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি সব সময় বিশেষ অগম্যকারীদের সঙ্গে তাদের জীবন রেকর্ড করেন। তিনি বলেছেন:
"তাদের আয়ত্ত দক্ষতা রিকর্ড করার জন্য আমি তাদের সঙ্গে অনেক সময় কেটেছি। তারা সাক্ষাত্কার দিতে চান না। আমি শুধু নিজের আন্তরিকতা নিয়ে তাদের দেখাই এমনভাবে তারা আমকে গ্রহণ করেছেন।"
২০০২ সালে চীন সরকার দেশব্যাপী "মানব জাতি'র মৌখিক ও অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার" সুরক্ষা ও উদ্ধারের প্রকল্প শুরু করেছে। এই খবর শুনে ছাও পাও মিং অনেক উত্সাহ পান। তিনি বলেছেন, তিনি যত দিন হাঁটতে পারেন তত দিন অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সুরক্ষার জন্য অবদান রাখবেন।
|