চীনের চেচিয়াং প্রদেশের নিংপো শহরের ছিছিচৌসিয়াং দক্ষিণ চীনের এক ছোটো ব্যবসা প্রধান জেলানগর । সিয়াও চুয়েন নামে এক সুন্দরী মেয়ে এখানকার এক ছোটো দোকানে কাজ করে । ২০০৬ সালের জুন মাসের এক দিন এক রহস্যময় লোক চুপে চুপে সিয়াও চুয়েনের কাছে এগিয়ে এসেছেন । কি হয়েছে ? লোকটা কে ? কেন তিনি সিয়াও চুয়েনের অজ্ঞাতেতার কাছে এগিয়ে এসেছে ?
প্রায় স্কুল টার্ম শেষ সময়ে আশেপাশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একের পর এক ছোটো দোকানে আসে । যাতে পরীক্ষার সময় তারা ভালভাবে সময় অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্যে অনেক ছাত্রছাত্রী দোকানে হাতঘড়ি কিনতে আসে । একটি সুন্দরী মেয়ে জিনিস কেনার পর টাকাপয়সা দিতে আসছিল দেখে দোকানদার মনে করেন, সিয়াও চুয়েনের হাতঘড়ি আছে, সে নতুন ঘড়ি কিনছে ? হঠাত তিনি দেখলেন , সিয়াও চুয়েন দোকানের ওপাশে কাজ করছে । ক্রেতারা জিনিস কিনছেন আর সিয়াও চুয়েন তাদের সাহায্য করছে ।
দেখতে এ মেয়ে সিয়াও চুয়েনের মতো সুন্দর । সে সিয়াও চুয়েনের মতো কথা বলে । তার ত্বকের রঙ সিয়াও চুয়েনের মতোইফর্সা । তার শরীরের গঠন, উচ্চতা এমন কি কন্ঠস্বরও সিয়াও চুয়েনের মতো । স্বচোখে না দেখলে কেউই বিশ্বাস করতে পারবে না যে , এরা দুজন আলাদা দুটি মেয়ে । দোকানদার খুব বিস্মিত হনঃ হে ! খোদা, পৃথিবীতে এমন দুজন মেয়ে থাকতে পারে দেখতে যারা একেবারেই একরকম । মেয়েটি দোকান থেকে বের হওয়ার পর দোকানদার তাড়াতাড়ি সিয়াও চুয়েনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন । সিয়াও চুয়েন দোকানদারের কথা শুনে বলল, তার কোনো বোন নেই , বাড়ীতে শুধু সে একমাত্র মেয়ে । সিয়াও চুয়েনের কথা শুনে দোকানদার তাকে মেয়ের সঙ্গে একবার দেখা করার জন্য তাগিদ দেন । কিন্তু যখন সিয়াও চুয়েন দোকান থেকে বের হয় তখন মেয়েটি অনেক দূরে চলে গেছে । এই রহস্যময় মেয়ে সম্পর্কে সিয়াও চুয়েন আর বেশি ভাবেনি । এটা তার সঙ্গে এক অপরিচিত লোকের সাক্ষাত মাত্র । কোনো আশ্চর্য ব্যাপার নয় ।
সিয়াও চুয়েন এক মাস আগে হোনান প্রদেশ থেকে চেচিয়াং প্রদেশের নিংপো শহরের ছিছিচৌসিয়াং জেলা নগরে মজুরী করতে এসেছে । সে বাবা মার একমাত্র আদুরে মেয়ে । তার উপরে তিনটি ভাই আছে বলে বাবা মা তাকে হাতের মুক্তা বলে আদর করেন । সিয়াও চুয়েন এক হাসিখুশি মেয়ে । সে ৬ মাস আগে ভাই ও ভাবিকে দেখতে হাংচৌ শহরে আসে । ৬ মাস পর সে ভাই ও ভাবির অজান্তেসহপাঠীর সঙ্গে নিংপো শহরে বেড়াতে যায় এবং নিকটবর্তী একটি জায়গায় কাজ পাওয়ার চেষ্টা করে । কাজ খোঁজার পথে সিয়াও চুয়েন একটি নতুন খোলা দোকানে লোক নেয়ার বিজ্ঞপ্তি দেখতে পায় । কাজটা সিয়াও চুয়েনের ভাল লেগেছে বলে সে দোকানের এক বিক্রেতা হয়েছে ।
ছিছি জায়গায় ওই রহস্যপূর্ণ মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়াকে সিয়াও চুয়েন তেমন গুরুত্ব দেয়নি । তার মনে হয়েছে , এ মেয়ে ও তার মধ্যে কিছু মিল থাকা ছাড়া আর কিছু নেই । কিন্তু দ্বিতীয় দিন সিয়াও চুয়েনের উপরে আবার অদ্ভূত কিছু ঘটে। জিনিস কিনতে আসা একটি মেয়ে অনেক ক্ষণ ধরে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সিয়াও চুয়েনের ওপর দৃষ্টিপাত করল এবং সিয়াও চুয়েনকে বলল, তার এক বান্ধবী ও সিয়াও চুয়েন দুজন যেন এক লোক । দুজনের যে মিল আছে তা পার্থক্য করা কঠিন । এ কথা শুনে সিয়াও চুয়েন মেয়েটির সঙ্গে কিছু কথাবার্তা বলল । কথাবার্তার মাধ্যমে সিয়াও চুয়েন আনন্দের সঙ্গে উপলব্ধি করল যে , সে ও মেয়ে দুজনই হোনান প্রদেশের সিনইয়াং জেলার লোক ।
জন্মস্থানের হাজার কিলোমিটার দূরের একটি জায়গায় নিজের জায়গার লোকের সঙ্গে দেখা করতে পেরে সিয়াও চুয়েন অত্যন্ত আনন্দিত হল । সে মেয়েটিকে তার সঙ্গে মিলপূর্ণ ওই মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করল । এই মেয়ে বলে , সে সিয়াও চুয়েনকে তার বন্ধুর সঙ্গে একবার দেখা করতে সাহায্য করতে ইচ্ছুক । এ দুদিনে যে আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে তাতে সিয়াও চুয়েন নিজের ১৮ বছর জীবনের সবকিছু স্মরণ না করে পারে না । সেই সব কিছু থেকে সে বিশ্বাসযোগ্য জবাব পাবার চেষ্টা করল । হঠাত সিয়াও চুয়েন স্মরণ করেছে যে , ছোটো বেলায় সে জ্ঞানে বা অজ্ঞানে ভাবির মুখে শুনেছিলো যে , সে না কি এক দত্তক মেয়ে ,তার এক জমজ ছোটো বোন আছে । তাহলে কি মেয়েটি আমার জমজ ছোটো বোন ? যে মেয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাত হবে সে মেয়ে খুব সম্ভবত তার ছোটো জমজ বোন কথাটা ভেবে সিয়াও চুয়েন আবেগপূর্ণ হয়ে উঠে। কিন্তু যে সময় দুজন পরিকল্পনা অনুযায়ী সাক্ষাত করবে সে সময় এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে । যে মেয়েকে নিজের ছোটো জমজ বোন বলে সিয়াও চুয়েন মনে করে সে মেয়ে লজ্জাবোধসিয়াও চুয়েনের দোকান থেকে কিছু দূরের গলিতে লুকিয়ে থাকে দোকানে আসতে চায় না । এ সময় সিয়াও চুয়েনও দ্বিধাগ্রস্ত হয় । দুজন অপরিচিত লোক পরস্পরের প্রতি যে পরিচয় করিয়ে দেবে তা কি লজ্জার ব্যাপার হয় ? অবশেষে দোকানের সহকর্মীদের উত্সাহে উত্সাহিত হয়ে সিয়াও চুয়েন প্রথমে নিজেই পদক্ষেপ নেয় । অবশেষে সামনাসামনি মিলিত দুজন মেয়ে চোখের সামনে "পরিচিত অথচ অজানা আরেক মেয়েকে" দেখে বিশ্মিত হল । কথাবার্তার পর জানল যে , একই সাল একই মাস আর একই তারিখে দুজনের জন্মগ্রহণ হয় । মেয়েটি নিজের ছোটো জমজ বোন বলে সিয়াও চুয়েনের দৃঢ়বিশ্বাস হল।
১৮ বছর পর সাক্ষাতের পর দুজন জমজ বোন পরস্পরকে জড়িয়ে অনেক ক্ষণ ধরে কাঁদল , তারা আর কোনো কথাবার্তা বলেনি । সেই রাতে সিয়াও চুয়েনের ঘুম হয়নি । এক দিকে ছোটো বোনের সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার জন্যে সে আনন্দিত ,অন্য দিকে ছোটো বোন তাকে গ্রহণ করবে কিনা তার জন্যে সে উদ্বিগ্ন ।
সিয়াও চুয়েন জানে, ছোটো বোন সিয়াও তানকে যে পরিবার গ্রহণ করেছে সেই পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয় । সেই পরিবারের বোড় মেয়ে হিসেবে সিয়াও তান পরিবারের অনেক বোঝা বহন করে । সিয়াও তান পালিত বাবা মার জন্যে বেশি চিন্তাভাবনা করে । তাই সিয়াও চুয়েনকে গ্রহণ করবে কি না সিয়াও তান অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত হয় । কিন্ত সে ও সিয়াও চুয়েন একই বাবা মার আপন বোন কথাটা ভেবে সিয়াও ছুয়েনের সঙ্গে আবার সাক্ষাত করতে সিয়াও তান রাজী হয়। এই দিন যখন সিয়াও চুয়েনকে নিজের দিকে দৌড়ে আসতে দেখে সিয়াও তান সিয়াও চুয়েনের দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দেয় । অবশেষে ১৮ বছর আগে বিচ্ছিন্নহওয়া দুই জমজ বোন এক সঙ্গে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে । দুই বোনের গল্প তাড়াতাড়ি চারি দিকে ছড়িয়ে পড়ে । ২০০৬ সালের ২৭ জুন দুই বোন প্রথমবার এক সঙ্গে নিজের জন্মদিন পালন করেছে । জানা ও অজানা লোকেরা এসে তাদের সুখ শান্তি কামনা করেন । এ দিন থেকে ১৮ বছর আগে চ্ছিন্ন হওয়া দুই জমজ বোন তাদের নতুন জীবন কাটাতে শুরু করে ।
|