গত শতাব্দীর ৭০ দশকের শেষ দিক থেকে চীন সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতি চালু করার পর অধিক থেকে অধিকতর বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে পুঁজি বিনিয়োগ করার ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়েছে। এ বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিব পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য স্থানীয় হওয়ার ওপর খুব গুরুত্ব দেয়। যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চীনের বাজারে একীভূত হওয়া যায়। বহু বছর প্রয়াসের মাধ্যমে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কৌশল প্রাথমিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। এখন তারা নিরন্তরভাবে এই কৌশল গভীরতর করছে।
কিছু দিন আগে চীনারা সবেমাত্র ঐতিহ্যিক উত্সব --- বসন্ত উত্সব পালন করেছেন। চীনের ঐতিহ্য অনুযায়ী, বসন্ত উত্সবকালে লোকজন পরস্পরের প্রতি সুভ-কামনা বিনিময় করেন। যাতে নতুন বছরে সুখ-শান্তিতে বসবাস করা যায়। এবার চীনে পুঁজি বিনিয়োজিত বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও নববর্ষের কামনায় অংশ নিয়েছে। তারা এর মাধ্যমে ১৩০ কোটি চীনা জনগণকে একবার "স্নেহশীল স্পর্শ" করেছে।
বসন্ত উত্সবের আগের সপ্তাহে সিমেন্স, এস.কে টেলিযোগাযোগসহ চীনে পুঁজি বিনিয়োজিত দশটিরও বেশী বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌথভাবে চীনা জনগণের প্রতি দলগত শুভ -কামনা করেছে। তারা বিজ্ঞাপন ও সংবাদের মাধ্যমে চীনা জনগণের কাছে বসন্ত উত্সবের শুভ-কামনা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার আসিয়ান বিমান কোম্পানির চীনা বাজার ব্যবসা বিভাগের ম্যানেজার মিস. ওয়াং সিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনে পুঁজি বিনিয়োজিত বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চীনা জনগণের কাছে বসন্ত উত্সবের শুভ-কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "বসন্ত উত্সবের সুযোগে আমি এবারের কর্মসূচীর মাধ্যমে সকল চীনা জনগণের কাছে শুভ-কামনা করি। আশা করি আরো বেশি লোক দক্ষিণ কোরিয়ার আসিয়ান বিমান কোম্পানির বিমান বাছাই করবেন এবং আমরা আপনাদের জন্য অত্যন্ত মনোরম এক যাত্রা দেবো।"
এটা নিঃসন্দেহে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চীনে স্থানীয় হওয়ার জন্য আরেকটি প্রচেষ্টা।
আসলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের "স্থানীয় হওয়া" এর অর্থ হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সমস্ত ব্যবসা কর্মসূচী ব্যবসায়ীর নিজের পছন্দ ও প্রথা অনুসরণ না করে কেবল পণ্যভোগীদের চাহিদা ও অভ্যাস অনুযায়ী কাজ করা।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক পর্যন্ত চীন মোট ৫০ লাখ ৮০ হাজার বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। তারা মোট ৬ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বের ৫০০টি সেরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৮০টি চীনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে।
অনেক বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান "স্থানীয় হওয়া" কৌশলের মাধ্যমে চীনে সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন , ম্যাকডোনাল্ড, নোকিয়া ও কোকাকোলাসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চীনা কর্মচারী নিযুক্ত করা, স্থানীয় কাঁচা মাল কেনা, চীনাদের প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের ওপর গবেষণা করাসহ নানা ব্যবস্থা চালানোর মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করেছে।
বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় হওয়ার পিছনে নানা কারণ রয়েছে। সবচেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে এভাবে বহুজাতিক ব্যবসার অতিরিক্ত ব্যয় হ্রাস করা যায় এবং নিজের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও চীনের সামাজিক সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানোর জন্য সহায়ক হয়। এটা চীনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হিতকর এবং চীনে আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার আসিয়ান বিমান কোম্পানির চীনা বাজার ব্যবসা বিভাগের ম্যানেজার মিস. ওয়াং সিন সংবাদদাতাদের বলেছেন, "আমাদের কোম্পানিতে অনেক চীনা কর্মী আছে। প্রশাসনিক পর্যায়ে চীনা কর্মীর সংখ্যাও নিরন্তরভাবে বাড়ছে। দীর্ঘকাল ধরে আমরা সর্বদাই চীনা জনগণের জন্য পরিসেবা করি, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ত্বরান্বিত করা নিজের দায়িত্ব হিসেবে মনে করে। গত বছর আমরা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কোরিয় ভাষার বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি।"
প্রথম দিকে, চীনে পুঁজি বিনিয়োজিত বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিল সবই বিদেশী। চীনা কর্মীরা কেবল নিম্ন স্তরে কাজ করতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার এশিয়ান বিমান কোম্পানির মতো অন্যান্য বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও অধিক থেকে অধিকতর চীনা কর্মী নিয়োগ করেছেন। এর পাশাপাশি আরো অনেক চীনা লোক বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ের পদে কাজ করছেন। চীনের শ্রেষ্ঠ কর্মী দল চীনা পণ্যভোগীদের চাহিদা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারেন। তাঁরা আরো ভালভাবে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা চীনে আনতে পারবে এবং চীনে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের জন্য মজবুত ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
সোং লিং
চীনের ইলেকট্রোনিক বাণিজ্য সমিতির পরিচালক ম্যাডাম সোং লিং এবারের বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দলগত শুভ-কামনার গভীর মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, "চীনে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বউদ্যোগে চীনা জনগণের কাছে বসন্ত উত্সবের শুভ-কামনা করা হচ্ছে তাদের চীনের অর্থনৈতিক সংস্কৃতিতে মিশে যাবার প্রয়াসের প্রতিফলন। এটা হচ্ছে তাদের চীনা জনগণের আস্থা অর্জনের কর্মসূচী।"
চীনের শিল্প পত্রিকা সমিতির চেয়ারম্যান ছাও হাং উ উল্লেখ করেছেন, বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় হওয়া হচ্ছে যুগের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম। তিনি বলেছেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে সাফল্য অর্জন করেছে। চীনা জনগণ তাদের স্বাগত জানিয়েছে। আমি মনে করি, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে তারা স্থানীয় হওয়ার কৌশল কার্যকর করেছে। ফলে আমি মনে করি, ভবিষ্যতে যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনে আসতে চাইবে , তাদেরও একই পথে চলা উচিত।"
|